কিয়েভ: পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে সরাসরি মুখে গুলি করেছিল রুশ সেনা। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই কান ও গাল স্পর্শ করে ছুটে গিয়েছিল তাদের ছোঁড়া সেই উত্তপ্ত বুলেট। গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে পড়ে যখন গোঙাছিলেন, তখনই তার হাত-পা বেঁধে তাঁকে লাথি মেরে একটি গণকবরে ফেলে দেয় রাশিয়া সেনার আধিকারিকরা। কিন্তু কপাল জোরে সেই সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকেও প্রাণে বেঁচে ফিরে এসেছেন ইউক্রেনীয় এক যুবক মাইকোলা। সম্প্রতি, এটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে রুশ বাহিনীর হাতে গুরুতর আহত এই ইউক্রেনীয় যুবকের অবিশ্বাস্য জীবন যুদ্ধের কাহিনী। তিনি ওই সাক্ষাৎকারে আরও জানিয়েছেন যে, তাঁকে গুলি করার আগে চোখের সামনেই তার দুই ভাইকে গুলি করে হত্যা করে রুশ সেনা।
সম্প্রতি সিএনএন নামের একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এই ইউক্রেনীয় যুবকের সাক্ষাৎকার। সেখানেই তিনি জানিয়েছেন গত ১৮ মার্চ রুশ বাহিনী যখন উত্তর ইউক্রেনের চেরনিহিভ শহরে হামলা চালায় তখন এক মুহুর্তের মধ্যে পাল্টে যায় তার এবং তার গোটা পরিবারের জীবন। রাতারাতি গোটা এলাকা দখলের পর এলাকার বাসিন্দাদের বাড়িতে গিয়ে হাজির হন রুশ সেনা। একের পর এক বাড়ির ভিতরে ঢুকে নির্বিচারে চলে অত্যাচার। সেই সময়ে রুশ বাহিনীর গুলিতে নিহত হন মাইকোলার দুই ভাই ইয়েভেন এবং দিমিত্র। তিনি জানিয়েছেন রুশ আধিকারিকরা যখন তাদের বাড়ি খানাতল্লাশি চালাচ্ছিল তখনই বাড়ির ভেতর থেকে উদ্ধার হয় ইউক্রেনীয় সেনার একটি ব্যাগ এবং তাঁর ঠাকুরদা ইউক্রেনীয় সেনায় যুক্ত থাকায় যে সমস্ত পদক পেয়েছিলেন সেই সব জিনিসপত্র। এই সমস্ত কিছু দেখেই রুশ সেনাদের মনে হয়েছিল যে এই তিন ভাই কিছু লুকোতে চাইছেন। আর তারপরই শুরু হয় ভয়াবহ নির্যাতন।
মাইকোলা ওই সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যতক্ষণ না পর্যন্ত তাঁরা জ্ঞান হারিয়েছেন ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁদের মারধর করা হয়। পরে জ্ঞান ফিরলে তাঁরা নিজেদের একটি বেসমেন্টে আবিষ্কার করেন। সেখানে একটানা তিনদিন ধরে জেরা করেন রুশ বাহিনীর আধিকারিকরা। চতুর্থ দিন শেষে তাঁদের ফের মারধর করা হয় এবং হাত-পা বেঁধে তিনজনকে নিয়ে যাওয়া হয় একটি নির্জন প্রান্তরে। সেখানে মৃত্যুর কয়েক মুহূর্ত আগেই তাঁরা দেখতে পান যে তাঁদের জন্য খোঁড়া হয়েছে কবর। এরপর একে একে তিন ভাইকে লক্ষ্য করেই গুলি চালান রুশ সেনাবাহিনীর আধিকারিকরা। ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় মাইকোলার দুই ভাইয়ের। গুরুতর আহত হন তিনিও। এরপর তাদের সকলকে কবর দিয়ে সেখান থেকে চলে যায় রুশ সেনা। এইভাবে জীবিত কিন্তু গুরুতর আহত অবস্থাতেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা মৃত ভাইদের সঙ্গে কবরের মধ্যে পড়েছিলেন তিনি।কিন্তু পরে কবরের মাটি ভালোভাবে চাপা না দেওয়ার কারণে কোনওমতে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন মাইকোলা। এরপর নিজেকে টেনে হিঁচড়ে মাঠের ধারে একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে একটু একটু করে সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং তারপর ফিরে যান নিজের বাড়িতে। সম্প্রতি এই যুবকের অভিজ্ঞতার কথা লোকের মুখে মুখে ঘুরছে। কিভাবে পরিস্থিতির কাছে হার না-মেনে শুধুমাত্র মনের জোরে সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে আসা যায় সেটাই প্রমাণ করেছেন ইউক্রেনীয় এই যুবক। ঘটনা প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘এই গল্প সকলেরই শোনা উচিত। শুধু ইউক্রেনে নয় সারা পৃথিবীতে এমন অনেক ঘটনা ঘটে যা কার্যত অবিশ্বাস্য।’
অন্যদিকে, এই ঘটনা প্রসঙ্গে মাইকোলার বোন আইরিনা জানিয়েছেন, ‘রুশ আধিকারিকরা বাড়িতে ঢুকেই তিন ভাইকে তুলে নিয়ে চলে যায়। এরপর আমি এবং আমার বাবা বাড়িতে বসেই তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। দু তিন দিন বাদে কাজের সূত্রে বাড়ির বাইরে বেরিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখি মাইকোলা বাড়ি ফেরত এসেছেন। আমি যখন তাঁর কাছে বাকিদের খবর জানতে চাইছিলাম তিনি জানান যে আর কেউই বেঁচে নেই।’ পুরো ঘটনাটিকে একটা মিরাকেল বলে বর্ণনা করেছেন আইরিনা। একই মত মাইকোলারও। তাঁর কথায়, ‘আমি ভাগ্যবান। আর তাই আমি এখনও বেঁচে আছি।’