নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট এবং চরম অব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কা। বিগত কয়েক মাস ধরেই শ্রীলঙ্কা এখনো পর্যন্ত হওয়া সবথেকে বড় অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি হয়েছে। তার জেরে নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার থেকে ওষুধ, জ্বালানির মতো সামান্য কিন্তু প্রয়োজনীয় জিনিসও রাতারাতি দুষ্প্রাপ্য বস্তুতে পরিণত হয়েছে। এমতাবস্থায় চরম রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে দেশজুড়ে। বিক্ষোভে উত্তাল গোটা দেশ। এর মধ্যেই শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে দেশ পালিয়েছেন বুধবার ভোরে। কিন্তু সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার এই ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য সরাসরি রাশিয়াকে দায়ী করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভালোদামির জেলেন্সকি। তাঁর দাবি, মস্কোর জন্যই বিশ্বজুড়ে খাদ্যশস্য এবং জ্বালানির যোগান ধাক্কা খাচ্ছে। এর ফল ভুগতে হচ্ছে শ্রীলঙ্কার মতো ছোট দেশ গুলিকে।
বুধবার সিওলে অনুষ্ঠিত এশিয়ান লিডারশিপ কনফারেন্সে রুশ সরকারের বিরুদ্ধে ফের সরব হয়েছিলেন ইউক্রেন প্রধান। তখনই তাকে শ্রীলঙ্কার বর্তমান অচলাবস্থা নিয়ে মুখ খুলতে দেখা যায়। দ্বীপরাষ্ট্রটির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘জোগান ধাক্কা খাওয়ায় খাদ্য ও জ্বালানির দাম আকাশ ছুঁয়েছে। এর ফলে সমাজে কার্যত বিস্ফোরণ ঘটেছে। কেউ জানে না এই পরিস্থিতি কতদিন চলবে।’ এর সঙ্গেই তিনি জানান, যুদ্ধে ইউক্রেনকে ঘিরে ‘অর্থনৈতিক অবরোধ’ জারি করেছে রাশিয়া। অর্থাৎ, কৃষ্ণসাগরে ইউক্রেনের বন্দরগুলি থেকে খাদ্য বা জ্বালানির রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে রুশ ফৌজ। বলে রাখা ভাল, প্রায় মাস তিনেক ধরে অবরোধ চলার পর সম্প্রতি ইউক্রেনের বন্দর থেকে শস্য রপ্তানিতে সবুজ সংকেত দিয়েছে মস্কো।
এদিন জেলেনস্কি আরও বলেন, ইউক্রেনে আক্রমণে রাশিয়া যে প্রধান কৌশলগুলো ব্যবহার করেছে তার মধ্যে একটি হল দেশটিতে ‘অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা’ সৃষ্টি করা। তাঁর অভিযোগ, ইউক্রেন থেকে সরবরাহে যে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে সেই কারণেই বেশ কয়েকটি দেশ খাদ্য ও জ্বালানির ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছে এবং এতে করে রাশিয়ার এজেন্ডাই উপকৃত হয়েছে।
উল্লেখ্য, গতকাল অর্থাৎ বুধবার সকাল থেকেই শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়েছে যখন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে পদত্যাগপত্র জমা না দিয়েই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। বর্তমানে শ্রীলঙ্কার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্টের পদ সামলাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহে। আর তাতেই নতুন করে দেশ জুড়ে বিক্ষোভ মাথাচাড়া দিয়েছে। বিক্ষুব্ধ জনতার দাবি, শ্রীলঙ্কার বর্তমান প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে এবং প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহে অবিলম্বে পদত্যাগ করুক। ইতিমধ্যেই গোটা দেশে জারি হয়েছে জরুরি অবস্থা। রাস্তায় নেমেছে সেনা। কিন্তু তার মধ্যেই বুধবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন দখল করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা।