মস্কো: আশঙ্কা সত্যি করে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সেনা অভিযানে নেমেছে রাশিয়া৷ মাটি কামড়ে লড়াই চালাচ্ছে ইউক্রেন৷ সাধ্যমত জবাব দিচ্ছে রুশ আক্রমণের৷ দুই দেশের নেতৃত্বে রয়েছে দুই রাষ্ট্রপ্রধান৷ সম্পূর্ণ ভিন্ন মেরু থেকে উঠে আসা দুই রাষ্ট্রপ্রধান এখন যুদ্ধক্ষেত্রে সম্মুখ সমরে৷
আরও পড়ুন- সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকছে রুশ ট্যাঙ্কবাহিনী! রাশিয়ার কাছে ইউক্রেন সেনার আত্মসমর্পন?
একজন ছিলেন দুঁদে গোয়েন্দা৷ এখন দেশে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন৷ বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রনায়কদের একজন৷ অপরজন ছিলেন টিলিভিশন সিরিজের জনপ্রিয় মুখ৷ কমেডিয়ান অভিনেতা৷ এখন দেশের সর্বোচ্চ আসনে৷ তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি৷ এই সঙ্কটের মুহূর্তে দেশের রাশ তাঁর হাতেই৷ তাঁরা শুধু ভিন্ন মেরু থেকে উঠে আসা ব্যক্তিত্বই নয়৷ তাঁদের মধ্যে রয়েছে বয়সেরও বিস্তর ব্যবধান৷ দেখে ঠাওর না হলেও, পুতিনের বয়স এখন ৭০৷ আর জেলেনস্কির বয়স মাত্র ৪৪৷
রিশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্ম ১৯৫২ সালের ৭ অক্টোবর৷ সোভিয়েত রাশিয়ার লেলিনগ্রাদে৷ বর্তমানে যে শহরের নাম সেন্ট পিটার্সবার্গ৷ চরম দারিদ্রের মধ্যে বেড়ে ওঠেন পুতিন৷ সেই লড়াই থেকেই সম্ভবত গড়ে ওঠে তাঁর ইষ্পাতকঠিন মানসিকতা৷ ২০১৫ সালে একবার পুতিন বলেছিলেন, ৫০ বছর আগে লেলিনগ্রাদের রাস্তা আমাকে একটা নিয়ম শিখিয়েছিল৷ বুঝিয়েছিল, লড়াই যদি অনিবার্য হয় তাহলে প্রথম ঘুষিটি আপনাকেই ছুড়তে হবে৷
নিজের কঠিন মানসিকতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই পেশা বেছে নিয়েছিলেন পুতিন৷ লেলিনগ্রাদ থেকে স্কুলের পাঠ শেষ করার পর ১৯৭৫ সালে লেনিনগ্রাদ স্টেট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগে ডিগ্রি লাভ করেন৷ ওই বছরই রুশ গুপ্তচর সংস্থা কেজিবি’তে এজেন্ট হিসাবে যোগ দেন তিনি৷ ১৯৯০ সাল পর্যন্ত শত্রু দেশগুলির কাছে কুখ্যাত গুপ্তচর সংস্থা হিসাবে পরিচিত এই কেজিবি’তেই অফিসার হিসাবে কর্মরত ছিলেন৷ ১৯৯৯ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হন বরিস ইয়েলৎসিন৷ সেই কিছুদিনের জন্য রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন পুতিন৷
কিন্তু হঠাৎ করেই পদত্যাগ করেন ইসেৎসিন৷ এর পর ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত কার্যনির্বাহী প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব সামলান পুতিন৷ ২০০০ সালে প্রথমবার প্রেসিডেন্ট হন৷ ২০০০ থেকে ২০০৪ এবং ২০০৪ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হন তিনি৷ তবে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় তৃতীয়বার প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নির্বাচনে দাঁড়াতে পারেননি তিনি৷ কিন্তু কৌশলে দেশের ক্ষমতা নিজের হাতেই রাখেন পুতিন৷ নিজের অনুগামী দিমিত্রি মেদভেদভকে প্রেসিডেন্ট করে তিনি বসেন প্রধানমন্ত্রীর পদে৷ ২০০৮ থেকে ২০১২ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার পর ওই বছর ফের প্রেসিডেন্ট পদে বসেন ভ্লাদিমির পুতিন৷ সেই থেকে প্রেসিডেন্ট পদেই আছেন তিনি৷
অন্যদিকে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পুতিনের বিপক্ষে রয়েছেন ইউক্রেনের ৪৪ বছর বসয়ী প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি৷ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন অভিনেতা হিসাবে৷ লোকে তাঁকে চিনত একটি ব্যাঙ্গাত্মক টিভি সিরিজ ‘সার্ভেন্টস অফ দা পিপলে’র সৌজন্য৷ ওই টিভি সিরিজে একজন শিক্ষকের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন জেলেনস্কি৷ পরবর্তী সময় তিনিই ইউক্রেনের মসনদে বসেন৷ রাজনৈতিক ব্যকগ্রাউন্ড না থাকা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়িয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হন তিনি৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>