প্যারিস: জনপ্রিয়তা যে আগের থেকে বেশ কিছুটা কমেছে তা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে বেশ ভালোভাবেই বোঝা যাচ্ছিল। প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী লি পেন যে এবার কাঁটায় কাঁটায় টক্কর দিতে চলেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোকে সেটা আগেভাগেই আন্দাজ করেছিলেন বিশেষজ্ঞ মহল। কিন্তু জনপ্রিয়তা আগের থেকে কমলেও কার্যত ইতিহাস সৃষ্টি করে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট পদ নিজের দখলেই রাখলেন ইমানুয়েল ম্যাক্রো।
রবিবারে ছিল ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট পদের এই নির্বাচন, যেখানে ইমানুয়েলের কার্যত ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলেছেন কট্টর ডানপন্থী তথা ইমানুয়েলের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী মেরিন লি পেন। গণনা শেষে জানা যায় ম্যাক্রো পেয়েছেন ৫৮.৮ শতাংশ ভোট। অন্যদিকে লি পেনের প্রাপ্ত ভোটের পরিসংখ্যান হল ৪১.২ শতাংশ। দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে যে কার্যত কাটায় কাটায় লড়াই হয়েছে ভোট গণনার ফলাফল সামনে আসার পরেই সেটা আরও কিছুটা স্পষ্ট হয়। অন্যদিকে দ্বিতীয়বারের জন্য ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের গদি দখলের পরই ম্যাক্রো জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে বলেন, ‘আমি জানি আমার দেশের অনেক নাগরিকই আমাকে ভোট দিয়েছেন শুধুমাত্র ডানপন্থাকে প্রতিহত করার জন্য, তাঁদের মধ্যে অনেকেই আমার ধারণাকে সমর্থন করেন না। কিন্তু তাঁদের দেওয়া এই ভোট ভোট আমার ওপর বাড়তি এক দায়িত্ব প্রদান করেছে।’
তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই ফ্রান্সের বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয়েছে অশান্তি, বিক্ষোভ। জানা যাচ্ছে, ম্যাক্রো পুনরায় প্রেসিডেন্টের গদি দখল করেছেন এই খব্র প্রকাশ্যে আসতেই শয়ে শয়ে মানুষ বিক্ষোভ দেখাতে নেমে এসেছেন প্যারিসের রাস্তায়। রবিবার রাতে পরিস্থিতি এতটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় যে পুলিশকে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস পর্যন্ত ছুঁড়তে হয়েছে বলে খবর। অন্যদিকে স্থানীয় সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছে, পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে আহত হয়ে ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে দুজন বিক্ষোভকারীর। যদিও সরকারি সূত্রে এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, রবিবার রাতে ভোট গণনা শেষে যখন ম্যাক্রো জয় একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে যায় ঠিক তখনই হঠাৎই ফ্রান্সের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, তাঁরা ম্যাক্রো কিংবা লি পেন কাউকেই খুব একটা পছন্দ করছেন না। তাই তাদের কাউকেই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁরা দেখতে নারাজ। মূলত সেই কারণেই রবিবার মধ্যরাত থেকে শুরু হয় বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং সোমবার সকালে তা কার্যত ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের অধিকাংশই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া। তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে প্রথমে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। কিন্তু তারপরেও তাঁদের বাগে না আনা যাওয়ায় কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হয়। তবে পুলিশের তরফ থেকে গুলি ছোড়ার বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি বলে খবর।