কলম্বো: আর এক ফোঁটা জ্বালানিও মজুদ নেই ভাঁড়ারে। এদিকে দুধ, পাউরুটির মতো সাধারণ খাদ্যদ্রব্যেরও আকাশ ছোঁয়া দাম। সোনার দেশ শ্রীলঙ্কায় এখন শুধুই বুভুক্ষুদের হাহাকার। মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এক পাউন্ড পাউরুটি বিকোচ্ছে প্রায় দেড় হাজার টাকায়। এমতাবস্থায় শুক্রবার রাত থেকেই ফের দেশ জুড়ে জ্বলে উঠেছে বিদ্রোহ, অশান্তির লেলিহান শিখা। পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়েছে যখন সনৎ জয়সুরিয়ার মত জগৎবিখ্যাত ক্রিকেট তারকাও পথে নেমে এসে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট এবং সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে ইতিমধ্যেই শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে পলাতক। অন্যদিকে শনিবার রাতেই রাজাপক্ষদের গোটা রাজপ্রাসাদ দখল করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রীর রনিল বিক্রমসিংহের বাড়িও। এমতাবস্থায় পরিস্থিতির চাপে পড়ে ইস্তফা দিতে পারেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট, ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর এমনটাই। এদিকে নিঃস্ব দেশের পরিস্থিতির কাছে হার স্বীকার করে শ্রীলঙ্কার নবঘোষিত প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহেও শেষমেষ শনিবার নিজের ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছেন বলে খবর। এমতাবস্থায় গোটা দেশের কি হাল হবে, এখন এই একটা প্রশ্নই ঘুরছে বিশ্ববাসীর মনে।
উল্লেখ্য সমুদ্রের ধারে গোতাবাদা রাজাপক্ষের বিশাল অট্টালিকা। সেই অট্টালিকাতেই একার বিলাসবহুল জীবন তাঁর। গোটা দেশে খাদ্য, অন্ন, বস্ত্রের জন্য যখন হাহাকার পড়েছে, তখনো এই অট্টালিকাতে বসেই গত দুমাস ধরে মজা দেখছিলেন রাজাপক্ষে। কিন্তু শুক্রবার রাতেই পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে যায়। দেশের বিক্ষুব্ধ জনতা সেনাবাহিনীর লাঠি, কাঁদানে গ্যাস, গুলি আর কোন কিছুকেই পরোয়া না করে সোজা ঢুকে পড়ে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে। অল্পের জন্য রক্ষা পান রাজাপক্ষে এবং সেনাবাহিনীর সাহায্য নিয়ে পালাতে সক্ষম হন। এরপরেই প্রেসিডেন্টের গোটা রাজপ্রাসাদের দখল নেন সাধারণ মানুষ। ইতিমধ্যেই ওই অট্টালিকায় মজুদ থাকার সমস্ত জিনিসেই তারা দখল নিয়েছে বলে শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী সূত্রে খবর। এর পাশাপাশি জানা যাচ্ছে, সেনাবাহিনীর সাহায্যেই এই মুহূর্তে গোপন একটি নৌসেনার ঘাঁটিতে গা ঢাকা দিয়েছেন রাজাপক্ষে এবং তাঁর গোটা পরিবার।
তবে পালাতে সমর্থ হলেও দেশের এই পরিস্থিতিতে আর শক্ত হয়ে টিকে থাকতে পারেননি শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট। আর তাই ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, জনতার দাবি মেনে নিয়েই শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট পদ ইস্তফা দিতে চলেছেন তিনি। এই মুহূর্তে গোটা দেশে যখন বিক্ষোভের আগুন জ্বলছে তখন দেশের অন্যতম দুই শাসক প্রধান তথা প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী নিজের নিজের ইস্তফা পত্র জমা করছেন, এমতাবস্থায় সোনার লঙ্কার জন্য আর কতটা ভয়ংকর অন্ধকার ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে এই মুহূর্তে দানা বাজছে সেই প্রশ্নই।