ঢাকা: চট্টগ্রামে পোশাকের গোডাউনে আগুন সোমবার দুপুরেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এই খবর লেখা পর্যন্ত আগুন জ্বলছে গুদামের বিভিন্ন অংশে। সেনাবাহিনী ও দমকল কর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য। আশেপাশের এলাকা ফাঁকা হতে শুরু করেছে। কেশবপুর, মোল্লাপাড়া প্রভৃতি এলাকার বাসিন্দারা প্রাণভয়ে নিজেদের বাড়ি ছাড়তে শুরু করেছেন। রবিবার দুপুর থেকেই এলাকার বাচ্চাদের অন্যত্র আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। এবার পরিবারের সদস্যরাও আতঙ্ক নিয়ে এলাকা ছাড়ছেন। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় প্রবল বিস্ফোরণ হয়েছিল ওই গুদামে। আবারও কি তেমন কোনও বিস্ফোরণের আশঙ্কা থাকছে? এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে স্থানীয়দের মনে।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেনার গোডাউনে আগুন লাগে। শনিবার রাত ন’টা নাগাদ এই আগুন দেখতে পাওয়া যায়। পোশাকের কন্টেনারগুলিতে আগুন লেগেছিল। সেই আগুন ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ে। দমকলের ২৫ টি টিম কাজ করছিল। আগুন নেভানোর জন্য সেনাবাহিনীর জওয়ানরাও উপস্থিত হন। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়। আগুন নেভানোর জন্য জল ব্যবহার করা হচ্ছিল। সেখানে ঘটে বিপত্তি। অনেক কন্টেনারের মধ্যে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মজুত রাখা ছিল প্রচুর পরিমাণে। সে কথা জানা ছিল না দমকল কর্মীদের। প্রবল উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কন্টেনারগুলি। একসময় ভয়ানক বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের ফলে চার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে কম্পন অনুভূত হয়েছে। উপগ্রহ চিত্রে দেখা গিয়েছে, আড়াই কিলোমিটারের বেশি এলাকাজুড়ে কালো ধোঁয়ার আস্তরণ ছড়িয়ে রয়েছে। ঝাঁঝালো গ্যাস এলাকায় দমবন্ধ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এ ঘটনায় আহত ও জখমের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। আগুনে প্রচুর মানুষের শরীর ঝলসে গিয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন অনেকেই। মৃত্যুর সংখ্যা আরও অনেকটাই বাড়তে পারে। এই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রবিবার গোটা দিন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হয়েছিল। সেই ভয়াবহ আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু পুরোপুরি সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি।সোমবারও ওই গুদাম এলাকায় আগুন দেখতে পাওয়া গিয়েছে। সেনাবাহিনীর ২৫০ জনের দল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। দমকল কর্মী, পুলিশ কর্মীরা রয়েছেন। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন ঘটনাস্থলে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ৫০০ মিটারের টিনশেডের মধ্যে মজুত করা ছিল। সেখানেই এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। আরও কোনও কন্টেনারে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড কি রাখা রয়েছে? সেই দিকে তথ্য পাওয়ার জন্য খোঁজখবর চলছে। ফের কোনও বিস্ফোরণের সম্ভাবনা যাতে না থাকে সে জন্য সব দিক খতিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এলাকার বাসিন্দারা অন্যত্র সরে যাওয়ার কাজ শুরু করেছেন। মূলত ওই এলাকায় গুদামে কাজ করা কর্মীরা ও তাদের পরিবার, পরিজন থাকতেন।
বিধ্বংসী আগুনে প্রত্যেক পরিবারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বহু পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অনেকেই আর ফিরবেন না নিজেদের বাড়িতে। প্রবল আতঙ্ক কাজ করছে বাকিদের মধ্যে। কেশবপুর, মোল্লাপাড়া অঞ্চলের বাসিন্দা প্রায় সকলেই এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। রাসায়নিক ছড়িয়ে পড়ার ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে এলাকায়। তাই আতঙ্ক থেকে প্রাণে বাঁচার জন্য অন্যত্র চলে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বাসিন্দারা। গোটা জনপথ এলাকা এখন বিষাক্ত ভূমিতে আকার নিয়েছে। কি করে এই আগুন লাগল? সেটি জানার জন্য বিশেষ তদন্ত কমিটি তৈরি হয়েছে। পোশাকের গোডাউনের পাশেই রয়েছে সমুদ্র। রাসায়নিক যাতে সমুদ্রের জলে মিশতে না পারে সেদিকেও নজর রাখা হচ্ছে।