করোনা আক্রান্তদের ওপর পাশবিক নির্যাতন, ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি চিনের

করোনা আক্রান্তদের ওপর পাশবিক নির্যাতন, ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি চিনের

বেজিং: চলতি বছরের শুরু থেকেই ফের করোনা গ্রাস করেছে বিশ্বের বৃহত্তম জনবহুল দেশ চিনকে। যদিও এই চিনই করোনার আঁতুড়ঘর এবং এক সময় চিনের উহান প্রদেশ থেকেই করোনার ভাইরাস ছড়িয়ে বিশ্বব্যাপী মহামারী পরিস্থিতি তৈরি করেছে, তবে করোনার দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ঢেউয়ের সময় চিনকে সেইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখা যায়নি। তবে ছবিটা পাল্টেছে ২০২২ সাল পড়তেই। করোনার রাজধানী বেজিং, হংকংসহ  বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর এবং প্রদেশ এই মুহূর্তে পুনরায় করোনার গ্রাসে। এর মধ্যে সবথেকে খারাপ পরিস্থিতি সাংহাইয়ের। জানা যাচ্ছে, সাংহাইতে প্রত্যেক দুজন মানুষের মধ্যে একজন করে করোনা আক্রান্ত। আর তাই এই প্রদেশের সঙ্গে বাইরের সমস্ত এলাকার যাতায়াত এবং যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে চিন সরকার। এখানেই শেষ নয় জানা যাচ্ছে সাংহাইয়ের যে সমস্ত মানুষ করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হয়েছেন কিংবা এখনও পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হননি তাঁদের ঘরবাড়ি ছাড়তে পর্যন্ত বাধ্য করা হয়েছে। তাদের নিজস্ব বাসভবন থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অস্থায়ী সরকারি ক্যাম্পে যাতে তারা আক্রান্তদের কাছাকাছি এসে পুনরায় সংক্রামিত না হতে পারে। এমতাবস্তায় সোশ্যাল মিডিয়ার হাত ধরে প্রকাশ্যে এলে চিনের বেশ কয়েকটি ভয়ঙ্কর ভিডিও যেখানে দেখা যাচ্ছে করোনা আক্রান্তদের উপর চিকিৎসার নামে কি ভয়াবহ অত্যাচার চালাচ্ছে সেই দেশের সরকার।

ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওর একটিতে দেখা যাচ্ছে, একজন করোনা আক্রান্ত মহিলাকে মাটিতে ফেলে রীতিমতো তাঁর বুকের উপর চেপে বসে করোনা পরীক্ষা করছেন চিকিৎসকরা। স্থানীয় সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে যারা চিনে করণায় আক্রান্ত হচ্ছেন তাঁদের সঙ্গে রীতিমতো এমনই পাশবিক আচরণ করছে সরকারি আধিকারিকরা। সেই ভয়ে অনেকেই করোনা পরীক্ষা করতে রাজি হচ্ছে না। তাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আরও বেড়ে যাচ্ছে। মূলত সেই কারণেই যে সমস্ত জায়গায় করোনার সংক্রমণ বেশি সেই সমস্ত এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের রীতিমতো জোর করে করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। যারা কোনভাবেই রাজি হচ্ছেন না তাদের এই ভাবেই মাটিতে ফেলে রীতিমতো চেপে ধরে রেখে পরীক্ষা করছেন চিকিৎসকরা।

 এই ভিডিও সোশ্যাল-মিডিয়ায়-ভাইরাল হতেই রীতিমতো শিউরে উঠেছে বিশ্ব। এমন মারন রোগে আক্রান্ত কোনও রোগীর সঙ্গে কিভাবে এমন পাশবিক আচরণ করা যায় সেই নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। ভিডিওটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ওই মহিলাকে প্রাণভয়ে রীতিমত চিৎকার করতে দেখা গিয়েছে।  কিন্তু তাঁর কোনও ওজর-আপত্তি শুনতে রাজি নন সরকারি আধিকারিকরা। আর তাই রীতিমতো তাঁকে মাটিতে ফেলে তার বুকের উপর চেপে বসে করোনা পরীক্ষার করছেন চিকিৎসকরা।

 অপর একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, প্রায় বছর আশির একটি বৃদ্ধাকে রীতিমতো চেপে ধরে আছেন বেশ কয়েকজন। বৃদ্ধার হাত-পা সবকিছুই ধরে রাখা হয়েছে এবং ওই অবস্থাতেই তাঁর নাক এবং মুখ থেকে নমুনা সংগ্রহ করার চেষ্টা করছেন সরকারি আধিকারিকরা। ওই বৃদ্ধা প্রবল আপত্তি জানালেও শোনা হচ্ছে না তাঁর কথা। ওই ভাবেই চেপে ধরে রেখে শেষ পর্যন্ত তাঁর নমুনা সংগ্রহ করতে সক্ষম হন আধিকারিকরা।

 স্থানীয় সূত্রে খবর, চিনের অধিকাংশ প্রদেশেই এই মুহূর্তে করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। এলাকার প্রত্যেক নাগরিককেই এই পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে যদি তাদের রিপোর্ট পজিটিভ আসে তাহলে হয় তাদেরকে হোম আইসোলেশনে পাঠানো হচ্ছে। পরিস্থিতি খুব খারাপ হলে তবেই হাসপাতালে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে এই মুহূর্তে আক্রান্তের সংখ্যা এতটাই বেশি যে যারা আক্রান্ত নন তাদেরকে আলাদা করার কাজ শুরু করেছে চিন সরকার। তাঁদের জন্য অস্থায়ী বেশ কয়েকটি ক্যাম্পও বানানো হয়েছে শহরের বাইরে। সেখানে করোনা নেগেটিভ লোকজনদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করা হয়েছে।

 তবে এর মধ্যেই চিনের সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তারা করোনা পরীক্ষার নাম করে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িতে ঢুকে সেখানে ভাঙচুর চালাচ্ছেন। এই অভিযোগের প্রমাণস্বরূপ বেশকিছু ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় যেখানে দেখা গেছে সত্যি সত্যি ঘরবাড়ি রীতিমতো ওলট-পালট করে দিয়ে যাচ্ছেন আধিকারিকরা। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে ভয়াবহ পরিস্থিতি চিনের। সরকারি কড়াকড়িতে রীতিমতো নাজেহাল সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু এতকিছুর পরেও কোনওরকম ভাবেই আটকানো যাচ্ছে না সংক্রমণ। ফলে প্রায় প্রত্যেক দিনই রেকর্ড হারে কার্যত লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × one =