ঢাকা: সোশ্যাল মিডিয়া ছিল তাঁর কাছে এক নেশা। বিভিন্ন সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ চলে আসত অলিউর রহমান। সেই ফেসবুক লাইভ কাল হয়ে উঠল তার জীবনে। ফেসবুকে লাইভ আপডেট দিতে গিয়েই শেষ হয়ে গেল প্রাণবন্ত এই তরুণ। চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে বিএম কন্টেনার গোডাউনে তিনিও কাজ করতেন। সেই আগুন লাগার ঘটনা ফেসবুক লাইভ দেখানোর সময় বিস্ফোরণে তার মৃত্যু হল।
অলিউর রহমানের ডাক নাম নয়ন। কর্মস্থলে সে যথেষ্ট প্রাণচঞ্চল বলেই পরিচিত ছিল। বিভিন্ন সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় তার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যেত। ফেসবুক লাইভ থেকে পোস্ট শেয়ার করা৷ কমেন্ট সব কিছুতেই সে ছিল সিদ্ধহস্ত। প্রাণবন্ত এই তরুণের ফলোয়ার সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছিল। শনিবার রাতে আগুন লেগেছে তাদের কর্মস্থলে। সেই কথা জানতে পেরেই নয়ন ছুটে যায় সেখানে। দমকলকর্মীরা আগুন নেভাতে ব্যস্ত। চারিদিকে ভয়াবহ অবস্থা। সাধারণ মানুষরা নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়িয়ে রয়েছেন আতঙ্কে। নয়ন তখন ছুটে গিয়েছে অকুস্থলে। আগুনের ভয়াবহতা দেখানোর জন্য নয়ন একটি কন্টেনারের সামনে চলে যায়। সেখান থেকেই ফেসবুক লাইভ শুরু করে সে। আগুনের ভয়াবহতা দেখার জন্য বহু মানুষ ভিড় করেছিল তার ফেসবুক লাইভে। দমকলকর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টায় জল দিচ্ছেন। সেনাবাহিনীর কর্মীরাও চলে এসেছেন। এর মধ্যেই এক ভয়াবহ ঘটনা দেখতে পাওয়া যায়। কেউ জানতে পারেনি কন্টেনারের মধ্যেই সাক্ষাৎ যম অপেক্ষা করছে। প্রবল বিস্ফোরণ ঘটে কন্টেনারে।
চারিদিক কালো অন্ধকারে ঢাকা পড়ে যায়। ৪০ মিনিট লাইভ হয়েছিল নয়নের ফেসবুক থেকে। ফেসবুকে তখন দেখা যাচ্ছে গাঢ় কালো ধোঁয়া। আতঙ্ক চিৎকার শোনা যাচ্ছে সেই লাইফ থেকে। কিন্তু নয়নের কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। রাত প্রায় ১১ টা নাগাদ ওই বিস্ফোরণ হয়েছিল। পরে জানা যায় কন্টেনারে বিপুল পরিমাণ হাইড্রোজেন পার অক্সাইড মজুদ ছিল। সেজন্যই এই ভয়ানক বিস্ফোরণ। বিস্ফোরণের পরে মিনিট চারেক নয়নের ফেসবুক লাইভ চলেছিল। তারপর লাইভটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে জানা যায়, নয়ন ওই বিস্ফোরণে মারা গিয়েছে।
শুধু নয়ন একাই নয়। আরও ১০ জন দমকলকর্মী প্রাথমিকভাবে ওই বিস্ফোরণে মারা গিয়েছিলেন। পরে বেড়েছে মৃতের সংখ্যা। নয়নের পরিচিতরা জানাচ্ছেন, আগুনের ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় দর্শকদের সামনে দেখানোর জন্য তার খুব জেদ চেপেছিল। তাকে চেষ্টা করেও সরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। মৃত্যু হল তার। রবিবার চট্টগ্রামের হাসপাতালে তার দেহ শনাক্ত করেছে পরিবার। শরীরের অনেকটা অংশ ঝলসে গিয়েছে আগুনে। সোমবারও অকুস্থলের আগুন নেভেনি। সেনাবাহিনী, দমকল, পুলিশ সমানতালে কাজ করছে। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯। তিনশোর উপর মানুষ জখম হয়েছেন এই বিধ্বংসী আগুনে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।