কাঠমাণ্ডু: বয়স ৫২ বছর। ছোটবেলা থেকেই একমাত্র পর্বতারোহণই ছিল তাঁর নেশা। পরবর্তীতে সেই নেশাকেই পেশাতে রূপান্তরিত করে হয়েছিলেন শেরপা। এরপর পেরিয়ে গিয়েছে বহু যুগ। ধীরে ধীরে পর্বতারোহণ যে কিভাবে ধ্যান-জ্ঞান, নিজের জীবনের সমস্ত কিছু হয়ে উঠেছে তা বুঝতেই পারেননি। এদিকে বোঝা না বোঝার দ্বন্দ্বের মধ্যেই একাধিকবার ছুঁয়ে ফেলেছেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট। কথা হচ্ছে নেপালের বাসিন্দা কামি রিতার। ৫২ বছর বয়সী এই নেপালি শেরপাই সম্প্রতি নিজের রেকর্ডকে ভেঙে নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন। জানা যাচ্ছে নেপালের বাসিন্দা ৫২ বছর বয়সী এই শেরপা এক জীবনেই ২৬ বার ছুঁয়েছেন মাউন্ট এভারেস্ট। এখনও পর্যন্ত বিশ্বের কোনও পর্বতারোহীই এতবার পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ছোঁয়া তো দূর অস্ত, এভারেস্ট বেস ক্যাম্প পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে কাঠমান্ডুর পর্যটন দপ্তরের ডিরেক্টার জেনারেল তারানাথ অধিকারী জানিয়েছেন, শনিবার ৫২ বছরের কামি ১১ জন পর্বতারোহীকে নিয়ে মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছান। উল্লেখ্য, ভূপৃষ্ঠ থেকে মাউন্ট এভারেস্টের শৃঙ্গের উচ্চতা হল ৮৪৮৮.৬৮ মিটার। শনিবার ২৬তম বারের জন্য কামি স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ মাউন্ট এভারেস্ট শৃঙ্গে পৌঁছান এবং বিশ্বরেকর্ড গড়েন। অবশ্য এর আগের বিশ্ব রেকর্ডটিও কামির দখলেই ছিল। কিন্তু শনিবার নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙে কামি নতুন রেকর্ড গড়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
নেপাল পর্যটন দফতর সূত্রে খবর, শনিবার কামি মাউন্ট এভারেস্টে পৌঁছানোর সবথেকে প্রাচীন যাত্রাপথটি অনুসরণ করেই শৃঙ্গে পৌঁছেছেন। ওই যাত্রা পথ অনুসরণ করেই ১৯৫৩ সালে স্যার এডমন্ড হিলারি এবং নেপালি শেরপা তেনজিং নোরগে প্রথম মাউন্ট এভারেস্টের শৃঙ্গে পৌঁছান। উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালের ১৩ মে প্রথম মাউন্ট এভারেস্টের শৃঙ্গে পৌঁছান কামি রিতা। মাউন্ট এভারেস্ট ছাড়াও কামি মাউন্ট গডউইন অস্টিন (K2), মাউন্ট লোহাৎসে, মাউন্ট মানসলু এবং মাউন্ট ছো অয়ো জয় করেছেন। সবথেকে বেশি বার মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় পৌছানোর বিশ্বরেকর্ড ছাড়াও কামির কাছে সবথেকে বেশি বার ৮ হাজার মিটার উচ্চতায় পৌঁছানোর বিশ্ব রেকর্ডও রয়েছে।
এর সঙ্গেই জানা যাচ্ছে চলতি বছরে এভারেস্ট অভিযানের জন্য ৩১৬ টি পারমিট ইস্যু হয়েছে। গত বছর এই সংখ্যাটা হয়েছিল ৪০৮। অন্যদিকে জানা যাচ্ছে ১৯৫৩ সালে থেকে এখনও পর্যন্ত ১০ হাজার ৬৫৭ জন এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছেছেন। অন্যদিকে এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণ করতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে ৩১১ জন পর্বতারোহীর। এদের মধ্যে অধিকাংশেরই মৃত্যু হয়েছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। বাকি কয়েকজন তীব্র ঠান্ডা এবং চরম প্রতিকূল পরিস্থিতির সহ্য করতে না পেরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন।