যমজ সন্তান যদি দেখতে একই রকম হতে পারে তাহলে তাদের হাতের আঙুলের ছাপ কি এক হতে পারে না? এর উত্তর হলো, না। কেন জানেন? বিষয়টা শুনলে চমকে যাবেন৷ আপনি নিশ্চয় জানেন ক্রাইম জগতে ফিঙ্গার প্রিন্টের ভ্যালু ঠিক কতটা৷ এই ফিঙ্গার প্রিন্টের ওপর ভর করেই তাবড় তাবড় অপরাধীরা ধরা পড়ে৷ এবার জানুন কেন আলাদা আলাদা হয় প্রত্যেকের ফিঙ্গার প্রিন্ট৷
মায়ের গর্ভে যে পরিবেশে ভ্রূণের বিকাশ হয়, তা আঙুলের ছাপ নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। আর যেহেতু প্রত্যেকের ক্ষেত্রে এই পরিবেশ ভিন্ন, তাই তাদের আঙুলের ছাপও ভিন্ন। কোনো ব্যক্তিকে তার জেনোটাইপ ও ফেনোটাইপ বৈশিষ্ট্য দিয়ে বিচার করা যায়। প্রথমটি হলো তার ডিএনএ, অর্থাৎ মা-বাবার কাছ থেকে পাওয়া জিনসমষ্টি। আর ডিএনএ পরিবেশের সান্নিধ্যে আসার পর ব্যক্তি যেসব বৈশিষ্ট্য অর্জন করে, তা হলো ফেনোটাইপ। মায়ের পুষ্টি, রক্তচাপ প্রভৃতিও আঙুলের ছাপের পার্থক্য সৃষ্টি করে। এ জন্যই কোনো দুই ব্যক্তির আঙুলের ছাপ হুবহু এক হয় না। উনবিংশ শতকে হুগলি জেলায় কর্মরত পুলিশ অফিসার স্যর উইলিয়ম জেমস হার্সেল ‘নেচার’ পত্রিকায় ব্যক্তিগত এক অভিজ্ঞতা লেখেন। সেই লেখা প্রকাশের পর তোলপাড় পড়ে যায় অপরাধবিজ্ঞানের জগতে। হার্সেল জানান, তাঁর অধীনে বন্দি সব কয়েদির হাতের ছাপ নিয়ে পরীক্ষা করে তিনি দেখেছেন, প্রত্যেকের হাতের ছাপ আলাদা ও এটি দিয়েই অপরাধীদের শনাক্ত করা সম্ভব! সেই থেকে হুগলি জেলার এই অফিসারকে ‘ফিঙ্গারপ্রিন্টের জনক’ বলা হয়৷
আঙুলের ছাপের নকশা প্রাথমিকভাবে চার রকমের। ১) লুপ, ২) হোল, ৩) আর্চ ৪) কম্পোজিট। লুপের উপস্থিতি দেখা যায় ৬৫ শতাংশ আঙুলে। ২৫ শতাংশে দেখা যায় হোল। ৭ শতাংশ আঙুলে মেলে আর্চ নকশা ও ৩ শতাংশরে আঙুলে থাকে কম্পোজিট নকশা। এই নকশাগুলি আবার অনেকগুলি উপবিভাগ বা সাব সেকশনে বিভক্ত। এই নকশার কোণ, কেন্দ্রীয় অংশ ও ডেলটার অবস্থান অনুসারে এই নকশা পাল্টে পাল্টে যায়।
অপরাধবিজ্ঞানে আঙুলের ছাপকে খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়। কারণ, এই নকশা সকল মানুষের ক্ষেত্রেই ভিন্ন। মাতৃজঠরে তৈরি হওয়া আঙুলের ছাপ আজীবন একইরকম থাকে। এমনকী, যমজ শিশুর ক্ষেত্রেও আঙুলের ছাপ ভিন্ন হয়। এই নকশা জোগাড় করা সহজ ও কম প্রযুক্তি ও ন্যূনতম ব্যয় করেই অপরাধী শনাক্ত করা যায়। এমনকী, পচে যাওয়া মরদেহ বা মমি ও শুকিয়ে যাওয়া দেহ থেকেও এই ছাপ সংগ্রহ করা সম্ভব।