দাম চোকাবে ভারত? (Iran Israel War Impact on India)
দিল্লি: ইরান ইসরাইল যুদ্ধ, আর দাম চোকাবে ভারত? খাবারের অভাব, তেলের আগুন দাম, অর্থনীতির মেরুদন্ড ভাঙলে! মধ্যপ্রাচ্যের জন্য কত বড় বিপদে আমাদের দেশ? এই যুদ্ধে দু ভাগে ভাগ হয়ে গেল গোটা বিশ্ব!
ইরান ইসরাইল যুদ্ধ পুরোদমে শুরু হলে কার্যত টলে যাবে গোটা বিশ্ব। মনে রাখতে হবে, যুদ্ধ লাগলেই সবার আগে বন্ধ হয়ে যাবে লোহিত সাগরের শিপিং রুট। মালবাহী জাহাজকে যেতে হবে ঘুর পথে। ফলে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। অপরিশোধিত তেলের দাম আকাশছোঁয়া হতে পারে। আর,এটা সকলেরই জানা যে তেল এবং গ্যাসের অধিকাংশটাই আমদানি করে ভারত। ফলে জিনিসপত্রের দাম আগুন এবং মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব পড়বে ভারতের অর্থনীতি আর বাণিজ্যে। সেক্ষেত্রে সমস্যায় পড়বে সব থেকে বেশি আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ।
কিন্তু এই যে বলা হচ্ছে তেলের দাম আগুন হতে পারে তার কারণটা কি? আসলে, বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম তেল ব্যবসায়ী দেশ হল ইরান। তাই যুদ্ধের আবহে যদি ইরানের তেল উত্তোলন প্রভাবিত হয়, তবে যেমন বিশ্বজুড়ে তেলের দাম বাড়বে, তেমনই আবার যুদ্ধ পরিস্থিতিতে তেল আমদানি করতেও খরচ বাড়বে অনেকটাই। বিশেষ করে যে দেশগুলো ভারতের মতো তেল আমদানি করে, সেই দেশগুলোতে চড়চড়িয়ে বাড়বে তেলের দাম।
এবার অনেকেই বলতে পারেন, যে ভারত তো রাশিয়া থেকেও তেল আমদানি করে। হ্যাঁ ঠিক। সেই আমদানির পরিমাণ বাড়লেও, ভারত এখনও গ্যাস এবং জ্বালানির জন্য মধ্যপ্রাচ্যের উপর কিন্তু অনেকাংশেই ডিপেন্ড করে। পরিসংখ্যান বলছে, জুলাই মাসে ভারত মোট তেলের ৪৪ শতাংশ রাশিয়া থেকে আমদানি করেছিল। সেখানে, ৪৪.৬ শতাংশ তেল আমদানি করা হয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে। ডিফারেন্সটা বুঝুন। মূলত ইরাক, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং কুয়েত থেকেই তেল আমদানি করে ভারত। এলএনজি আসে কাতার থেকে।
সবদিক দিয়ে ক্ষতি! (Economic Consequences for India)
তাছাড়া এটাও মাথায় রাখতে হবে, রাশিয়ার তেল লোহিত সাগরের উপর দিয়ে ভারতে ঢোকে। যুদ্ধ লাগলে এই পথে জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। তখন কেপ অফ গুড হোপ দিয়ে আমদানি করতে হবে। তাছাড়া হরমুজ প্রণালীও বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই পথেই কাতারের থেকে এলএনজি এবং ইরাক ও সৌদি আরবের তেল আসে ভারতে। ওমান এবং ইরানের মাঝে অবস্থিত হরমুজ প্রণালী বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অয়েল চেকপয়েন্ট। এই পথেই চিন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া সহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ তেল আমদানি করে। সে ক্ষেত্রে শুধু ভারত না গোটা বিশ্বকেই কিন্তু ভুগতে হবে ইরান ইসরাইল যুদ্ধের ফল। তাই, যুদ্ধের ময়দানে না থেকেও ক্ষতির আশঙ্কায় ঘুম উড়েছে অনেকের।
এদিকে মনে করিয়ে দিই, পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ বাধার আগেই রসদ ব্যয় কিন্তু অনেক বেড়েছিল। বর্তমানে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন কাঁচামালের দাম আরও বাড়লে অপরিশোধিত তেল, ইলেকট্রনিক্স এবং কৃষি খাতের ব্যবসায় ক্ষতি হতে পারে। রফতানিকারকদের মতে, যুদ্ধের সঙ্গে সরাসরি জড়িত দেশগুলোতে এবার পণ্য রফতানির জন্য বিমা ব্যয়ও বাড়তে পারে। এর প্রভাব অবশ্যই ভারতীয় বাণিজ্যে পড়বে। সবদিক দিয়ে ক্ষতি। কী করবে এবার ভারত?
এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ অবশ্য বলছেন, স্বস্তির কথা হল, ইজরায়েল ও ইরান- দুই দেশের সঙ্গেই ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে। একদিকে যেখানে তেলের জন্য ইরানের মুখাপেক্ষী ভারত, সেখানেই আবার প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে অন্যতম ভরসা ইজরায়েল। দীর্ঘদিন ধরেই ইজরায়েলের কাছ থেকে অস্ত্র সামগ্রী থেকে প্রতিরক্ষা বিষয়ক নানা জিনিস কিনছে ভারত। বিশ্বের সেরা প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত অস্ত্র-শস্ত্র ইজরায়েলের হাতেই রয়েছে। অন্যদিকে, সম্প্রতি চাবাহারের বন্দরের কাজ এগোনোর পর ইরানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও সহজ হয়েছে। এই বন্দর তৈরি হয়ে গেলে, পাকিস্তানকে এড়িয়েই আফগানিস্তান ও পশ্চিম এশিয়ায় পৌঁছনো যাবে। এতে জলপথে বাণিজ্যে আরও সুবিধা হবে।
পজিটিভ পয়েন্ট (Impact on India’s Relations with Iran and Israel)
আরও একটা পজিটিভ পয়েন্ট আছে ভারতের জন্য। মধ্যপ্রআচ্যের সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, কাতার এবং কুয়েতের মতো দেশগুলো নিরপেক্ষ। ইরান-ইজরায়েল দ্বন্দ্ব বা প্রক্সি ওয়ারে তারা যোগ দেয়নি। আর, এই জিসিসি দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য গত বছরের তুলনায় ১৭.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। রফতানিও বৃদ্ধি পেয়েছে। সেটাও ভারতের জন্য স্বস্তির। কিন্তু কতদিন এই স্বস্তি টিকবে সেটা একটা ফ্যাক্টর কারণ অলরেডি, ইসরাইল ইরান যুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন শক্তিধর দেশ পক্ষে-বিপক্ষে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ ইসরাইলকে সমর্থন জানিয়েছে। রাশিয়া, লেবাননসহ বেশ কয়েকটি দেশ ইরানের পক্ষ নিয়েছে। এছাড়া ইসরাইলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সমালোচনা করেছে যুক্তরাজ্য, স্পেন, ইউরোপীয় কমিশনও। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াও ইসরাইলকে সমর্থন জানিয়ে ইরানের হামলার সমালোচনা করেছে। অন্যদিকে, লেবানন, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস সহ বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী ও গাজার মানুষ তেহরানকে সমর্থন জানিয়েছে। তবে, বরাবরের মতোই চুপ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত সহ বাকি মুসলিম দেশগুলো। এখন দেখার আগামী দিনগুলোতে ইরান ইসরাইল যুদ্ধ কোন দিকে মোড় নেয় এবং আদৌ পুরোদমে যুদ্ধ শুরু হয় কিনা।
আরও পড়ুন..
পরবর্তী টার্গেটে কে? স্পষ্ট জানাল ইজরায়েল! শোরগোল আন্তর্জাতিক মহলে
World – Iran Israel War Impact on India : Explore the potential impact of an Iran-Israel war on India’s economy, security, and diplomatic relations. Understand the geopolitical implications and India’s strategic concerns.