গা ছমছম করবে এমন বহু জায়গা আছে দেশে! ভূত-চতুর্দশীতে রইল হদিশ

কলকাতা: কালীপুজোর আগের রাত, বাঙালির কাছে ভূত-চতুর্দশী। এইদিন চোদ্দো শাক খাওয়া থেকে বাড়িতে চোদ্দো বাতি বা প্রদীপ জ্বালানোর রেওয়াজ আছে। বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর... এই ভাবনা নিয়ে ভাবলে আজ ভূতেদের উৎপাত হয় বলে মনে করেন অনেকেই। অন্ধকার জায়গা পেলেই নাকি 'তেনারা' নেত্য করেন! ভুতের বিষয়টি কেউ মানুন বা না মানুন, একটা বিষয় মানতেই হবে যে, এদিনের রাতে জমিয়ে আড্ডা দেওয়ার সময়ে ভুতের গল্প শুনতে কিন্তু ভালোই লাগে। পারিবারিক জমাটি আলোচনা হোক কিংবা বন্ধুদের মজলিশ, ভুতেদের নিয়ে চর্চা হয়েই থাকে। কিন্তু ভূতেদের সঙ্গে যদি ভ্রমণকাহিনী এক হয়ে যায়, তাহলে?
বিভিন্ন জায়গার সঙ্গে অশরীরীর যোগ আছে বলে ধারণা করেন বহু মানুষ। এমনই 'হন্টেড' জায়গা দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ভুতের গল্পের সঙ্গে যদি বেড়ানোর আনন্দ মিলিয়ে দেওয়া যায় তাহলে তো কেয়া বাত! তবে এইসব জায়গায় আপনি ঘুরতে যান বা না যান, জায়গার গল্পগুলি কিন্তু আপনাকে রোমাঞ্চিত করবেই। আজ ভূত-চতুর্দশীর দিনে ভারতের এমন কিছু স্থানের সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক যাকে ভুতুড়ে বলা হয়। এইসব জায়গার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বহু পুরনো ইতিহাস এবং মানুষের একাংশের বিশ্বাস।
ডাউ হিল
পশ্চিমবঙ্গের কার্শিয়াংয়ের একটু অফবিট স্পট। এই জায়গায় অনেকেই ঘুরতে গিয়েছেন। অত্যন্ত মনোরম পরিবেশ এবং সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রয়েছে এই স্থানে। কিন্তু ডাউ হিল ঘিরে বহু কাহিনিও প্রচলিত আছে। এলাকার একটি রাস্তাকে ‘ভুতুড়ে রাস্তা’ বলা হয়। যারা যারা সেখানে ঘুরতে গিয়েছে তারাই একটু 'নেতিবাচক' কিছু অনুভব করেছেন বলে দাবি করেন। স্থানীয়দের মধ্যে কেউ কেউ তো আবার সেখানে বহু মুণ্ডহীন দেহ দেখেছেন বলেও দাবি করেছেন। এছাড়া এক মহিলার ছায়াশরীর দেখতে পাওয়ার পাশাপাশি ১০০ বছরের পুরনো স্থানীয় এক স্কুলে বিকট আওয়াজ শুনতে পান অনেকেই।
কুলধারা
রাজস্থানের এই গ্রাম অন্তত ৩০০ থেকে ৩৫০ বছর ধরে জনশূন্য। কুলধারা গ্রাম নিয়েও রয়েছে বহু কাহিনি। রাজ্যের বেশিরভাগ মানুষ দাবি করেন যে, বহু বছর আগে সেলিম সিং নামের এক রাজপরিবারের সদস্য ওই গ্রামের প্রধানের মেয়ের প্রতি কুনজর দিয়েছিলেন। তাঁকে জোর করে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন সেলিম। সেই জন্য গ্রামবাসীদের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। সেলিমের রোষ থেকে বাঁচতে রাতারাতি গ্রাম খালি হয়ে যায়। তবে গ্রাম খালি করার আগে সেখানে সেলিম এসে বহু ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেন। এতেই গ্রামবাসীরা অভিশাপ দিয়েছিলেন যে এই গ্রাম কেউ কোনও দিন থাকতে পারবে না। এমনটাও জানা যায়, গ্রামের প্রধানের ওই মেয়ে পরে কূলধারায় এসেই আত্মহত্যা করেছিলেন। এখনও সেই গ্রামে গেলে নাকি নানা আওয়াজ পাওয়া যায়। কেউ কেউ ছায়ামূর্তিও দেখেছেন।
অগ্রসেন কি বাউলি
দেশের রাজধানী দিল্লির প্রায় মাঝে অবস্থিত এই স্থান তুঘলঘ শাসনকালের নিদর্শন। বাউলি শব্দের অর্থ হল কুয়ো। প্রজাদের জলকষ্ট থেকে রক্ষা করতে এখানে কুয়ো বানিয়েছিলেন মহারাজা অগ্র সেন। কিন্তু জানা যায়, পরে কোনও এক সময়ে এখানেই এক মহিলা আত্মহত্যা করেন। তারপর থেকেই নাকি এই বাউলি ঘিরে ভৌতিক ঘটনা বাড়তে শুরু করেছিল। কিছু বছর আগে পর্যন্ত এই বাউলিতে সারাদিনই প্রবেশ করা যেত। কিন্তু এখন বিকেল ৫ টার পর এখানে ঢোকা নিষিদ্ধ। বলা হয়, এই জলাশয়ে কালো জলের দিকে যেতে যেতেই অনেকে আত্মঘাতী হতে তৎপর হন। তবে বর্তমানে সেখানে জল নেই।
ভানগড়
ভারতের সবথেকে ভৌতিক স্থান বলতেই যে জায়গার কথা সবথেকে আগে মনে পড়ে তা হল ভানগড়। রাজস্থানের ভানগড় কেল্লায় সূর্যাস্তের পর কারোরই প্রবেশ নিষিদ্ধ। এই জায়গা নিয়ে নানা কথাই প্রচলিত আছে। কেউ বলেন, যে এলাকায় এই দুর্গ রয়েছে সেখানে এক সময়ে গুরু বালুনাথ নামে একজন বাস করতেন। তিনি বলেছিলেন, ভানগড় দুর্গ যেন তাঁর বাড়ির ওপর ছায়া না ফেলে। তাহলে শহর ধ্বংস হবে। রাজা সাধুকে কথা দিয়েও তা রাখেননি। এরপরই শুরু হয় অলৌকিক কিছু ঘটনা। আবার এও শোনা যায়, রাজ পরিবারের কন্যা রত্নাবতীকে পছন্দ করতেন এক তান্ত্রিক। কিন্তু তাঁর প্রেমের প্রস্তাব খারিজ করেন রত্নাবতী। পরে ওই তান্ত্রিককে পিষে মারা হয় ভানগড়েই। কালো জাদু জানা ওই তান্ত্রিক তখন ভানগড় নিয়ে অভিশাপ দিয়েছিলেন। আজ ভানগড়ে কোনও জনমানব বাস করে না। অনেকেই মানেন, সূর্যাস্তের পর কেউ ভানগড়ে গেলে আর ফিরে আসে না। সে নাকি পাথর হয়ে যায়।
জায়গাগুলিতে আদতে কী আছে বা নেই তার কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। যারা বিশ্বাস করেন তাদের কাছে ভৌতিক, যারা করেন না তাদের কাছে সাধারণ। তাই জায়গাগুলি সম্পর্কে তর্ক আজও চলে এবং তা চলতে থাকবে। ভূত আছে কী নেই, সেই ইস্যুতে আজ বিকেল ডট কম কোনও বক্তব্য রাখছে না। যা বহু মানুষের মধ্যে প্রচলিত, সেই তথ্য এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে মাত্র।