দু’হাত নেই, তবুও জোড়া সোনা জিতে দেশের গর্ব এই যুবক

শাম্মী হুদা: প্রিয়জনদের শুভেচ্ছা ও একাগ্রতা থাকলে থাকলে সব হারানো মানুষও একদিন সেরার শিরোপা জিতে বিশ্বকে চমকে দেয়। এই তালিকায় নয়া সংযোজন জম্মুর যুবক চনদীপ সিং সুদান। দু’হাত নেই তবুও অনায়াসে তাইকোন্ডোতে জোড়া সোনার মেডেল জিতে দেশকে গর্বিত করেছেন এই যুবক। গত বছরের শুরুতেই দক্ষিণ কোরিয়া থেকে চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে এসেছেন। তবে বিরাট প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তাঁর

দু’হাত নেই, তবুও জোড়া সোনা জিতে দেশের গর্ব এই যুবক

শাম্মী হুদা: প্রিয়জনদের শুভেচ্ছা ও একাগ্রতা থাকলে থাকলে সব হারানো মানুষও একদিন সেরার শিরোপা জিতে বিশ্বকে চমকে দেয়। এই তালিকায় নয়া সংযোজন জম্মুর যুবক চনদীপ সিং সুদান। দু’হাত নেই তবুও অনায়াসে তাইকোন্ডোতে জোড়া সোনার মেডেল জিতে দেশকে গর্বিত করেছেন এই যুবক। গত বছরের শুরুতেই দক্ষিণ কোরিয়া থেকে চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে এসেছেন। তবে বিরাট প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তাঁর এই জয় প্রথম নয়, এর আগে ভিয়েতনাম ও নেপাল থেকেও মার্শালআর্টে সোনার মেডেল জিতেছেন চনদীপ সিং।

বলা বাহুল্য, শুরুটা এত আনন্দের ছিল না। যখন চ্যাম্পিয়ন মানুষটিরই দুহাত নেই, ১২ বছর বয়স থেকেই প্রতিবন্ধী চনদীপ। ১২০০০ ভোল্টের বিদ্যুৎ তাঁর জীবনের ভূগোলকে বদলে দিয়েছিল। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় চার শতাংশ অগ্নিদগ্ধ হয়েছিলেন তিনি, শর্টসার্কিটে পুড়লে বেঁচে থাকাটা অভাবনীয়ই, তবুও তাই ঘটে। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে সেদিন বেঁচে ফিরেছিল ওই কিশোর,তাই আজ ভারতের গর্ব তিনি। প্রাণে বাঁচলেও ক্ষতিগ্রস্ত হাতদুটিকে বাদ দিতে হয়, হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন চনদীপ ডাক্তারবাবুদের বার বার একটা কথাই বলত ব্যান্ডেজ খুলে দাও আঙুল দেখব। ওই খুদের কাছে তখনও মর্মান্তিক খবর পৌঁছায়নি। বাড়ি ফিরে একটা সময় নিদারুণ কান্নাকাটি করেছে। তবে বাবা মায়ের সমর্থন লাগাতার উৎসাহ আর ভালবাসা চনদীপকে তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছাতে অনকেখানি সাহায্য করেছে। বন্ধুরাও জান লড়িয়ে দিয়েছিল। এখনও সমানভাবে পাশে আছে। একটাই কথা তাঁর কানে বারংবার ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে, কি ছিল তা নিয়ে না ভেবে এখন যা আছে তাই দিয়ে কী করা যায় সেটা ভাব। বাবা-মা তাঁকে কোনওদিনই একা হতে দেননি, উল্টে সমস্ত রকম সহযোগিতা করে গিয়েছেন। একটা সময় পর এই ভালবাসাই তাঁর শক্তি হয়ে ওঠে।তিনি ভাবতে থাকেন এঁদের জন্যই তাঁকে বাঁচতে হবে। এমন কিছু করতে হবে যা বাবা-মা ও বন্ধুদের কাছে গর্বের হয়। এরপরই স্কেটিং নিয়ে পড়াশোনা শুরু। বাবা-মা খুশি হলেও অনেকেই তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে,স্কেটিং করতে তিনি পারবেন না। ব্যালেন্সের খেলা, আর তাঁর তো হাতই নেই। সেই লোকগুলিকে ভুল প্রমাণ করতেই দাঁত কামড়ে অনুশীলন শুরু করেন চনদীপ,কতবার যে পড়ে গিয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু পড়লেও উঠে দাঁড়িয়ে ফের শুরু করেছেন। এই হার না মানা মনোভাব তাঁকে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার সুযোগ করে দিয়েছে। তিনি একজন জাতীয় স্কেটার,যিনি ১০০ মিটারের প্যারা স্কেটিং জিতেছেন। ২০১৮-র ছয় ভারতীয় হিরোর তালিকায় রয়েছে চনদীপের নাম। প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডঃ এপিজে আব্দুল কালামের জন্মদিনের দিন অন্যদের সঙ্গে ‘পেহাল ইউথ প্রাউড অ্যাওয়ার্ড’ জিতে নিয়েছেন তিনি।

তাঁর এই কৃতিত্বে মুগ্ধ কিংবদন্তী মিলখা সিং। তিনি বলেছেন, চনদীপের জন্য ভারত গর্বিত। তিনি একজন অনুপ্রেরণা। যখন চনদীপ প্রথম মিলখা সিংয়ের কাছে এসেছিলেন, তখনই তিনি চমকে যান। চনদীপ পায়ের আঙুলের সাহায্যে ল্যাপটপ ও মোবাইল অপারেট করছেন। সেদিনই বুঝেছিলেন এই ছেলে লম্বা রেসের ঘোড়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nine − 5 =