বোলাররা আর দুয়োরানি নন! তেইশের বিশ্বকাপের এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি

নিজস্ব প্রতিনিধি: যত উন্মাদনা শুধুই যেন ব্যাটসম্যান, বা আধুনিককালে নতুন ভাবে বলা ব্যাটারদের নিয়ে। তাঁরা কীভাবে মাঠে নামছেন, কীভাবে ব্যাট ঘুরিয়ে চার ছয় মারছেন, সেঞ্চুরি করে ব্যাট শূন্যে তুলে ধরছেন, দেশের প্রত্যেকটি সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় বড় বড় করে সেই ছবি ছাপা হচ্ছে। এটাই বছরের পর বছর ধরে অত্যন্ত পরিচিত দৃশ্য হয়ে উঠেছে। বহু ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে ম্যাচের কঠিন সময়ে বোলাররা গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়ে জুটি ভেঙে ম্যাচ দেশের অনুকূলে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু তাঁদের নিয়ে ততটা মাতামাতি করা হয় না। তবে চলতি ২০২৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট এই প্রথম বোধ হয় বোলারদেরও নায়ক করে দিল। সৌজন্যে ভারতের পেশ বোলার মহম্মদ সামি। যিনি প্রথম চারটি ম্যাচে দলের বাইরে থেকেও পরের ছ'টি ম্যাচ খেলে ২৩টি উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন। আর বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাদের সঙ্গে সমান ভাবে উচ্চারিত হচ্ছে তাঁর নাম।
শুধু শামি নন, দলের অন্য দুই ফাস্ট বোলার যশপ্রীত বুমরাহ ও মহম্মদ সিরাজও সমানভাবে প্রশংসিত হচ্ছেন। যতটা গুরুত্ব পাচ্ছেন বোলাররা, যেভাবে তাঁরা প্রশংসায় ভাসছেন, সংবাদপত্রের শিরোনামে জায়গা করে নিচ্ছেন তা অতীতে দেখা যায়নি। এতদিন বোলাররা যেন দুয়োরানির মতো থাকতেন। কিন্তু চলতি বিশ্বকাপ সমস্ত হিসেব অজানা জাদুদণ্ডের ছোঁয়ায় যেন উল্টে দিয়েছে। এখনও পর্যন্ত শামি যেভাবে বল করেছেন তাতে গোটা বিশ্বকাপে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার তাঁকে দেওয়া হতেই পারে। এই পরিস্থিতিতে রবিবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ফাইনাল খেলতে নামছে রোহিত শর্মার ভারত।
বিশ্বকাপের ইতিহাস বলছে, এর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারত ১৩ বার মুখোমুখি হয়েছে। সেখানে আটবার জয় পেয়েছে অজিরা। কিন্তু সাম্প্রতিককালে ভারতের সঙ্গে পেরে উঠছে না অস্ট্রেলিয়া। তবু বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া যে ভারতকে যথেষ্ট কঠিন লড়াই দেবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে যেভাবে ভারত পুরো বিশ্বকাপ খেলেছে তাতে তাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়া সময়ের অপেক্ষা বলেই ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। আর সেখানে ভারতের অন্যতম বাজি হতে চলেছেন তিন ফাস্ট বোলার। টেস্ট ক্রিকেটে কোনও দেশ যত রানই করুন না কেন বিপক্ষের কুড়িটি উইকেট তুলতে না পারলে ম্যাচ জেতা যায় না। সেক্ষেত্রে ম্যাচ ড্র হয়ে যায়। তাই টেস্ট ক্রিকেটের ক্ষেত্রে বলা হয় বোলাররা ম্যাচ জেতান, আর ব্যাটসম্যান বা ব্যাটাররা ম্যাচ বাঁচান। তবে ওয়ান-ডে বা টি-২০ ক্রিকেট ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য নয়। তাই সেখানে বরাবরই ব্যাটসম্যানদের রমরমা দেখা যায়। কিন্তু চলতি বিশ্বকাপ সেই মিথ ভেঙে দিয়েছে। সেখানে সমান গুরুত্ব পাচ্ছেন বোলাররা। এই আবহের মধ্যে বিশ্বকাপ ফাইনালে দু'দেশের বোলার ও ব্যাটারদের লড়াই কোন পর্যায়ে যায় সেটাই দেখার।