নিজস্ব প্রতিনিধি: এই নিয়ে ৯ বার সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হল ভারত। ফাইনাল ম্যাচের আগেই ভারতীয় ফুটবলের জন্য ভাল খবর এসেছিল ফিফার কাছ থেকে। ফিফা যে নতুন বিশ্ব ক্রম তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে ভারত একশোর মধ্যে এসে গিয়েছে। বেশ কয়েক বছর পর ভারত আবার একশোর মধ্যে এল। এরপরই ফাইনালে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে কুয়েতকে সাডেন ডেথে হারিয়ে কাপ জিতে নিল সুনীল ছেত্রীর দেশ। কিন্তু এই জয়ের পরেও ভারতীয় ফুটবলের অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। গোটা দেশ জানে এ দেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে সবচাইতে বেশি প্রচার পেয়ে থাকে ক্রিকেট। সবচাইতে বেশি টাকা বিনিয়োগ হয় সেখানে। স্পনসরাররা টেস্ট, ওয়ান-ডে, টি-২০ বা আইপিএল নিয়েই সবচেয়ে বেশি আগ্রহী থাকেন। সেখানে ভারতীয় ফুটবলের জন্য বাজেট অত্যন্ত কম। তার সঙ্গে লড়াই চালিয়েই ভারতীয় ফুটবল বেঁচে রয়েছে। আইএসএল টুর্নামেন্টে অপেক্ষাকৃত বেশি টাকা বিনিয়োগ হলেও তা ক্রিকেটের ধারে কাছে আসে না।
সঠিক পরিকল্পনা মতো চললে ফুটবলেও যে সাফল্য আসতে পারে সেটা কি জানেন না আমাদের দেশের ক্রীড়াকর্তা বা নেতা-মন্ত্রীরা? সাফ ফুটবল ফাইনালে জিতে ভারত পেয়েছে পঞ্চাশ হাজার ডলারের পুরস্কার। যা ভারতীয় মুদ্রায় চল্লিশ লক্ষ টাকা। অথচ একটি সাধারণ ক্রিকেট টুর্নামেন্টেও জয়ের পর ভারতীয় ক্রিকেট দল এর থেকে কত গুণ বেশি টাকা যে পায় সেটা সকলেরই জানা। ‘ইট ক্রিকেট, স্লিপ ক্রিকেট, ড্রিম ক্রিকেট’, এটাই এখন ভারতের চেনা ছবি। সেই জায়গা থেকে ভারতের ফুটবলপ্রেমীরা যেভাবে বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন দেখেন সেটা কি কখনও সম্ভব হবে? এই চর্চা বহুদিন ধরেই চলছে। উল্লেখ্য গত বছরের ডিসেম্বরে বিশ্বকাপ ফাইনালের দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মেঘালয় সফরে গিয়ে একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে দেশবাসীকে বিশ্বকাপ খেলা নিয়ে স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তাঁর কথায় একদিন ভারতও বিশ্বকাপে খেলবে, আর এদেশেই আয়োজিত হবে বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা।
সেদিন মোদি বলেছিলেন, “আমি আপনাদের আশ্বস্ত করে বলছি একটা দিন ফিফা বিশ্বকাপের মতো প্রতিযোগিতার আয়োজন করবে ভারত। তখন সবাই তিরঙ্গার জন্য উল্লাস করব।” আসলে আয়োজক দেশ সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পায়। সেই সূত্রেই প্রধানমন্ত্রী এমনটা বলেছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে।প্রধানমন্ত্রী যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন তা আগামী দিনে বাস্তবায়িত হোক, এটাই সবাই চান। কিন্তু তার জন্য দেশের ফুটবল পরিকাঠামোকেও তো গড়ে তুলতে হবে। এই প্রসঙ্গে ভারতের পুরুষ ও মহিলা হকি দলের প্রতি ওড়িশা সরকারের দায়বদ্ধতার কথা বিশেষভাবে তুলে ধরা প্রয়োজন।
২০১৮ সালে ভারতীয় হকি দলের উপর থেকে স্পনসরশিপ তুলে নেয় সাহারা। সেই সময় ওড়িশা সরকার হকি দলকে স্পনসর করার কথা ঘোষণা করে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫০ কোটি টাকার বিনিময়ে তারা হকি দলকে স্পনসর করার চুক্তি করে। সেই প্রথম কোনও রাজ্য সরকার সরাসরি খেলাকে স্পনসর করে। এর ফলও হাতেনাতে পায় ভারত। গত অলিম্পিকে ভারতের পুরুষ হকি দল ব্রোঞ্জ পদক জেতে। আর মহিলা দল তুল্যমূল্য লড়াই করে চতুর্থ স্থান পায়। আর সেই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে আরও দশ বছর স্পনসরশিপের মেয়াদ বাড়িয়েছে ওড়িশা সরকার। তাই ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক হকিকে এতটা গুরুত্ব দিয়ে যেভাবে এগিয়ে এসেছেন, সেটা কি ভারতীয় ফুটবল দলকে নিয়ে কেউ ভাবতে পারেন না? উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি করে, গোটা দেশ ঘুরে প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলার তুলে এনে, সর্বক্ষেত্রে পেশাদারিত্বের ছোঁয়া রেখে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে সকলকে প্রশিক্ষণ দিয়ে একটা চেষ্টা করা কি যায় না? এই প্রশ্ন আজ স্বাভাবিকভাবেই উঠছে।
মরক্কো, তিউনিশিয়া, সেনেগালের মতো ছোট দেশগুলি যেভাবে ফুটবল খেলেছে কাতার বিশ্বকাপে, তার জন্য কোনও প্রশংসাই যেন যথেষ্ট নয়। তাই এসব দেখে আমাদের কি সারা জীবন এটাই বলে যেতে হবে, ওরা পারে আর আমরা পারি না? ভারতে ক্রিকেট নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভাবা হলেও অন্য খেলাগুলি কার্যত উপেক্ষিত থাকে। তাই প্রশ্ন এই ব্যবস্থার কি বদল হবে না? একটা সাফ গেমসে চ্যাম্পিয়ন হওয়া শুধু নয়, আগামী দিনে দেশকে আরও বড় জায়গায় নিয়ে যেতে গেলে পুরো সিস্টেমটাকেই বদলে ফেলতে হবে। সেই সুদিন ভারতীয় ফুটবলে আসে কিনা এখন সেটাই দেখার।