কলকাতা: ‘রিমুভ এটিকে’৷ সাম্প্রতিক কালে সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যতম ট্রেন্ডিং বিষয়৷ অবশ্য কট্টর মোহনবাগান প্রেমীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ, প্রতিবাদ যে শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় আটকে রয়েছে তা নয়, ইতিমধ্যেই সংঘাত গড়িয়েছে রাজপথেও৷ কালো রঙের তৃতীয় সেট জার্সি পরে যেদিন মাঠে নেমেছিল এটিকে-মোহনবাগান, সেদিন থেকেই ধিকিধিকি জ্বলতে শুরু করেছিল অসন্তোষের আগুন৷ সময়ের সঙ্গে তার আঁচ বাড়তে শুরু করেছে এই যা৷ এখন তা ক্রমশ দাবানলের আকার নিয়ে এটিকে আর মোহনবাগানের চুক্তি ভেস্তে দেওয়ার মতো বিধ্বংসী হয়ে ওঠে কি না, সেটাই দেখার৷
গত বছর জানুয়ারিতে মোহনবাগান কর্তারা যখন আইএসএল খেলার জন্য ২০:৮০ শতাংশ শেয়ারের অনুপাতে সঞ্জীব গোয়েঙ্কার এটিকের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার ‘ঐতিহাসিক’ ঘোষণা করেন, তখন সব মোহন-সমর্থকই যে তা খোলা মনে মেনে নিয়েছিলেন, তা নয়৷ কিন্তু ক্রমশ দেশের এক নম্বর লিগ হয়ে ওঠা আইএসএলে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুখ-স্বপ্নে সেই বিরোধিতা বিশেষ জমি তৈরি করতে পারেনি৷ তার ওপর এটিকে-মোহনবাগান ক্লাবের জার্সির রং সবুজ-মেরুন থাকায় আর পালতোলা নৌকোই লোগো হিসেবে থাকায় সংখ্যাগুরুর স্লোগানের নীচে চাপা পড়ে গিয়েছিল তাঁদের স্বর, যাঁরা এই সংযুক্তিকরণের বিরোধী৷ আইএসএল প্রোমো আর তিন তারার সংঘাতও অচিরেই মিটেছে ‘চ্যাম্পিয়ন’ শব্দবন্ধে৷ তবে মধুচন্দ্রিমার পর্ব মিটতে বেশি সময় লাগেনি৷ সবুজ-মেরুনহীন কালো রঙের তৃতীয় সেট জার্সি দেখতেই আওয়াজ উঠেছে ‘রিমুভ এটিকে’৷
শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবের ইতিহাস-আভিজাত্য-ঐতিহ্য-সম্মান ক্ষুণ্ণ হওয়ার অভিযোগ তুলে ওঠা এই প্রতিবাদের ঢেউ অনেক দিনই সমাজমাধ্যমের গণ্ডি টপকে নেমে এসেছে রাস্তায়৷ মোহনবাগান ক্লাবের দরজায় যেমন বিক্ষোভ হয়েছে, তেমনই রাগ-বিদ্বেষ উগরে দেওয়ার লক্ষ্যে জমায়েত হয়েছে ধর্মতলায় সিইএসসির সদরদপ্তরেরর সামনেও৷ সর্বত্রই একই দাবি- ‘রিমুভ এটিকে’ আর বদল করা হোক তৃতীয় সেট জার্সি৷ ওই কালো জার্সির মধ্যে দিয়ে ব্র্যান্ড এটিকের প্রচার ঘটানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে মত অভিযোগকারীদের৷ তাঁদের বক্তব্য, গতবারের চ্যাম্পিয়ন এটিকের জার্সির ডিজাইন আর এই জার্সি একই৷ অংশীদারিত্ব নিয়ে অতটা সমস্যা এখনও মাথাচাড়া না দিলেও, কালো জার্সি আর ব্র্যান্ড এটিকের প্রচারের চেষ্টার জেরে সবুজ-মেরুন ঐতিহ্যে আঘাতই এখন তাঁদের মূল মাথাব্যথার বিষয়৷
একটা বড় অংশের সমর্থক এটিকের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিচ্ছেদের আওয়াজ তুলে নতুন স্পনসর দাবি করলেও, দু’পক্ষের কর্তাদের অবস্থান বলছে অবস্থা এখনও অতটা ঘোরালো হয়ে ওঠেনি৷ এটিকে কর্তারা যেমন এব্যাপারে মুখে কুলুপ আঁটাকেই শ্রেয় মনে করছেন, উলটো দিকে মোহন কর্তারা তেমন সমর্থকদের আবেগের ধুয়ো তুলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার দাবি করছেন৷ তার ওপর হাবাস-ব্রিগেডও চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়ে থাকায় লেলিহান হচ্ছে না আগুনের শিখা৷ কিন্তু ‘রিমুভ এটিকে’ স্লোগান যদি বাঁধ ভাঙে, তা হলে বাণিজ্যের লক্ষ্যে গাঁটছড়া বাঁধা সঞ্জীব গোয়েঙ্কা কি তখন আর মোহন-আবেগের কথা ভাববেন নাকি সমর্থকদের রোষানল সামলে বন্ধন টিকিয়ে রাখতে পারবেন সৃঞ্জয় বসু-দেবাশিস দত্তরা?