লিসবন: ফুটবল যেমন রূপকথার জন্ম দেয় তেমনই স্বপ্নভঙ্গ করতেও এই খেলার জুড়ি নেই। বছর পাঁচও হয়নি, অজ্ঞাতকুলশীল লেস্টার সিটি ফুটবল ক্লাবকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন হতে দেখেছি আমরা। এ বছর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ঠিক সেরকমই স্বপ্নের দৌড় দিচ্ছিল নাম না জানা ইটালিয়ান ক্লাব আটালান্টা। ভাল ভাল দলকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে হেভিওয়েট পিএসজির মুখোমুখি হয়েছিল তারা। নেইমার, এমবাপে সমৃদ্ধ ফরাসি দলটিকে হারিয়ে রূপকথার যাত্রা আরও দীর্ঘায়িত হয় কিনা সেটাই দেখার অপেক্ষায় ছিল ফুটবল বিশ্ব। কিন্তু দু' মিনিট, স্রেফ দু' মিনিট আটালান্টার সমস্ত স্বপ্ন কেড়ে নিল।
এ বছর অতিমারির জেরে এক পর্বে আয়োজিত হচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। কোনও দলের কাছেই দর্শক সমর্থন কাজে লাগানোর উপায় নেই। তাই অঘটনের স্বপ্ন দেখছিলেন অনেকেই। প্রথমার্ধের ২৫ মিনিটের মাথায় পাসালিচের গোলে এগিয়ে যায় আটালান্টা। ক্লাসিক ইটালিয়ান ঘরানার হাইপ্রেসিং ফুটবল খেলে পিএসজির খেলোয়াড়দের ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছিল তারা। ব্যতিক্রম নেইমার জুনিয়র। কেন এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফুটবলার, তা বারবার প্রমাণ করছিলেন তিনি। একজন, দু'জনকে অনায়াসে ড্রিবল করে গোলের মুখ খুলে ফেলছিলেন নেইমার। কিন্তু আসল কাজ, গোলটাই হয়ে উঠছিল না। উল্টে এক গোল খেয়ে যাওয়ায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয় পিএসজি বেঞ্চে। পিএসজির ম্যানেজার টমাস টুসেল বাঁ পায়ে প্লাস্টার এবং হাতে ক্রাচ নিয়ে বসেছিলেন। দেখে মনে হচ্ছিল ওই অবস্থাতেই না মাঠে নেমে পড়েন।
দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হওয়ার পরেও একই রকম খেলা চলতে থাকে। বাধ্য হয়ে চোটে থাকা কিলিয়ান এমবাপেকে নামানো হয়। আক্রমণ ভাগে যে সহায়তার অভাব বোধ করছিলেন নেইমার, সেটাই পুষিয়ে দিলেন 'ফরাসি হরিণ'। দু'জনের অবিশ্বাস্য গতির পাসিং এবং পোজিশনিংয়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেনি আটালান্টার ক্লান্ত রক্ষণভাগ। ঠিক ৯০ মিনিটের মাথায় নেইমার পা থেকে আসা বল গোলে ঢুকিয়ে দেন মার্কুইনহোস। খেলা আর অতিরিক্ত সময়েও যেতে দিলেন না নেইমাররা। দু' মিনিট পর এমবাপের থ্রু বল ধরে পাস বাড়ান ব্রাজিল তারকা। সেখান থেকে ফিনিশ করেন চুপো মোটিং। স্বপ্নভঙ্গের ষোলোকলা পূর্ণ হয়ে যায়। কিন্তু ফুটবল বোদ্ধারা অবশ্য আটালান্টার প্রচেষ্টাকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন।