কলকাতা: পঞ্জাবের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে এসেছিলেন তিনি। দেশভাগের ব্যথা নিয়ে দৌড় শুরু করেছিলেন এবং সেই দৌড়ের জন্যেই আজ তিনি দেশের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র। মিলখা সিং। যার অন্য নাম, ‘The Flying Sikh’। করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার পর দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। গতকাল মধ্যরাতে প্রয়াত হন ভারতের এই কিংবদন্তি দৌড়বিদ। জীবনের শেষ দৌড় আচমকাই শেষ করে দিলেন তিনি। ৯১ বছর বয়সে থামলেন ‘উড়ন্ত শিখ’।
১৯২৯ সালে অবিভক্ত ভারতের পঞ্জাব প্রদেশের গোবিন্দপুর গ্রামে একটি শিখ রাজপুত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মিলখা সিং। ১৫ জন ভাই-বোনের মধ্যে ৮ জন দেশভাগের আগেই মারা যান দাঙ্গায়। এমনকি নিজের বাবা-মাকে খুন হতে দেখেন তিনি। পরে এদেশে চলে আসেন মিলখা। শুরু হয় জীবন যুদ্ধের লড়াই। ১৯৫২ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন মিলখা সিং। শ্রীনগরে তাঁর চাকরি হয়। তখন থেকেই অ্যাথলেটিক্সের সঙ্গে পরিচয় ঘটে তাঁর। মিলখার দৌড় মুগ্ধ করেছিল সেনার আধিকারিকদের।
পরবর্তী কালে, ১৯৫৬ সালে মেলবোর্ন অলিম্পিকের ২০০ মিটার ও ৪০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। দু’বছর পর কার্ডিফে কমনওয়েলথ গেমসে প্রথম ভারতীয় হিসেবে সোনা জেতেন এই দৌড়বিদ। ৪৬.৬ সেকেন্ডে দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যালকম স্পেন্সকে হারান মিলখা। ৫২ বছর পর্যন্ত এই নজির মিলখার একারই ছিল। ১৯৫৯ সালে পদ্মশ্রী পান।
১৯৬০ সালে রোম অলিম্পিক্সে ৪০০ মিটারের চতুর্থ হন। এরপর সেই সালেই আরও এক খ্যাতনামা দৌড়বিদ পাকিস্তানের আব্দুল খালিকের বিরুদ্ধে অনবদ্য পারফরম্যান্সের জন্য পাক জেনারেল আয়ুব খান তাঁকে ‘ফ্লাইং শিখ’ তকমা দেন। ১৯৬২ সালের এশিয়ান গেমসে ৪০০ মিটারে আবার সোনা জেতেন। তবে ২০০১ সালে অর্জুন পুরস্কার প্রত্যাখান করেন। বক্তব্য ছিল, এই পুরষ্কার তরুণদের জন্য।
২০১৩ সালে এই কিংবদন্তির জীবন নিয়ে তৈরি হয় হিন্দি ছবি ‘ভাগ মিলখা ভাগ’। সেই ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন অভিনেতা ফারহান আখতার। মিলখা সিংয়ের ভূমিকায় অভিনয় করে একাধিক পুরস্কার জেতেন তিনি এবং দেশের মানুষের সামনে মিলখা সিংয়ের গোটা জীবনকে আরো একবার সাজিয়ে তোলেন। কিংবদন্তি এই দৌড়বিদের সঙ্গে তাঁর সাদৃশ্য মুগ্ধ করেছিল দর্শকদের।