কলকাতা: তিনি রূপকথার রাজপুত্র৷ তাঁর পায়ের শৈল্পিক ছোঁয়ায় আঁকা হয় সাফল্যের ক্যানভাস৷ তিনি ফুটবলের জাদুকর লিওনেল মেসি। ফুটবল মাঠে তিনি চিরকাল নির্বিবাদী, সুশৃঙ্খল এবং মুখচোরা৷ তবে নিজের প্রেম নিয়ে কখনই লুকোছাপা করেননি লিয়ো। বরং তিনি যে পত্নীনিষ্ঠ ভদ্রলোক, সে ইঙ্গিত বারবারই দিয়েছেন৷
আরও পড়ুন- বিশ্বের সবচেয়ে গরিব কোচ, তিনিই বিশ্বজয়ী, স্ক্যালোনি এক স্ফুলিঙ্গের নাম!
বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তাঁর মুখে উঠে এসেছে স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোর কথা৷ জীবনের ওঠাপড়ায় সবসময় পাশে পেয়েছেন তাঁর স্ত্রীকে৷ মেসি স্বীকার করে নিয়েছেন, আন্তোনেল্লার নিরন্তর উৎসাহ ও প্রেরণাই তাঁকে এত দূর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে৷
টানটান উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে বহুকাঙ্ক্ষিত বিশ্বকাপ জয়ের পর গোটা আর্জেন্টিনা টিম যখন আনন্দের জোয়ারে ভাসছে, তখন দেখা গেল কাউকে হাতের ইশারায় ডাকছেন রবীবাসরীয় রজনীয় নায়ক লিয়োনেল মেসি। পরে বোঝা গেল তিনি লুসাইল স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে থাকা তাঁর স্ত্রী, দুই সন্তান এবং মাকে ডাকছিলেন। পরে স্ত্রী আন্তোনেল্লাকে জড়িয়ে বিশ্বকাপ হাতে ছবি তুলতেও দেখা যায় রাজপুত্রকে৷ স্বামীর সাফল্যে গর্বিনী আন্তোনেল্লা টুইট করে লেখেন, ‘‘বহু যন্ত্রণা শেষে, সব পাওয়ার দেশে।”
আন্তোনেল্লার সঙ্গে মেসির আলাপ সেই বাল্যবয়সে৷ তাঁদের সুখী দাম্পত্যের বীজ বপন হয়েছিল আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরে। ওই শহরেই জন্ম মেসি ও আন্তোনেল্লার। ৫ বছর বয়স থেকেই তাঁরা একে অপরের পরিচিত। মেসিরই বাল্যবন্ধু তথা ফুটবলার লুকাস স্কাগিলার আত্মীয় আন্তোনেল্লা ছিলেন শৈশবে মেসির খেলার সঙ্গী৷ স্কুল, কলেজে পড়ার সময়েও তাঁরা ছিলেন ‘ভাল বন্ধু’৷ তবে মেসি ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকে শোনা যায়, শুধুমাত্র আন্তোনেল্লাকে দেখার জন্য নানা অজুহাতে বন্ধুর বাড়ি চলে যেতেন মেসি।
কিন্তু হঠাৎই তাঁদের মাঝে চলে আসে দূরত্ব৷ আর্জেন্টিনা থেকে অনেক দূরে স্পেনের একটি ফুটবল ক্লাবের যুব অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিতে চলে যান মেসি। সালটা ২০০০৷ সেমির বয়স তখন মাত্র ১৩৷ ওই বছর মেসির পরিবারও পাকাপাকি ভাবে স্পেনের শহর বার্সেলোনায় চলে যায়। এর পর পাঁচ বছর আন্তোনেল্লার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না ফুটবল তারকার৷
২০০৫ সালে মেসি খবর পান আন্তোনেল্লার প্রিয় বন্ধু একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। সমবেদনা জানাতেই ফেন করেন শৈবের বন্ধুকে৷ সেই সময় কিছু দিনের জন্য রোজারিও শহরেও ফিরেছিলেন মেসি। রোজারিও শহরই মেসির জীবনে ফিরিয়ে দেয় তাঁর শৈশবের বন্ধুত্বকেও।
তবে এ বার শুধু নতুন করে বন্ধুত্বই নয়, তাঁদের সম্পর্কে লাগে অনুরাগের ছোঁয়া। মেসি নিজেই জানিয়েছেন তাঁর ভালোবাসর কথা৷ ২০০৮ সাল থেকেই বিভিন্ন জায়গায় একসঙ্গে বেড়াতে যেতে শুরু করেন দু’জনে। দু’বছর পর, ২০১০ সালে প্রথম আন্তোনেল্লাকে প্রেমের প্রস্তাব দেন৷ ওই বছরই প্রকাশ্যে আসে যুগলের প্রেমকাহিনি।
২০১৭ সালে আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরেই এক জমকালো অনুষ্ঠানে একে অপরকে আই ডু বলেন আন্তোনেলা ও মেসি। তাঁদের প্রথম সন্তান থিয়েগোর জন্ম হয় ২০১২ সালে। ২০১৫ সালে আসে মধ্যম পুত্র মাতেও। বিয়ের পর ২০১৮ সালে কনিষ্ঠ সন্তান সিরোর জন্ম দেন আন্তোনেল্লা।
আন্তোনেল্লা নিজে এক জন সফল মডেল। বিভিন্ন নামীদামী পণ্যের বিজ্ঞাপনে তিনি অতিপরিচিত মুখ৷ এ ছাড়াও আর্জেন্টিনায় একটি জনপ্রিয় বুটিক রয়েছে তাঁরা৷ সেই বুটিকের ব্যবসায় তাঁর অংশীদার হলেন সোফিয়া বালবি৷ যিনি কিনা উরুগুয়ের প্রখ্যাত ফুটবলার লুইস সুয়ারেজের স্ত্রী। সুয়ারেজ এক কথায় বিতর্কিত তারকা৷
ছোটবেলায় দন্ত চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন আন্তোনেল্লা। সেই স্বপ্ন অবশ্য পূরণ হয়নি তাঁর৷ তবে তিনি খুঁজে পেয়েছেন তাঁর মনের মানুষকে। আন্তোনেল্লার প্রশংসায় সদাই পঞ্চমুখ থাকেন মেসি৷ ২০১৯ সালে এক সাক্ষাৎকারে লিয়ো বলেছিলেন, “ও ভীষণ ঠান্ডা মাথার মানুষ। কী ভাবে ও সব সমস্যার সমাধান করে ফেলে, তা ও ছাড়া কেউই বুঝতে পারবে না।”
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>