বুদ্ধির জোরে স্প্যানিশ আর্মাডাকে রুখে দিয়ে ইউরোর ফাইনালে ইতালি

বুদ্ধির জোরে স্প্যানিশ আর্মাডাকে রুখে দিয়ে ইউরোর ফাইনালে ইতালি

লন্ডন: একটা ছোট্ট ভুল, আর তাতেই খুব তাড়াতাড়ি নায়ক থেকে খলনায়ক বনে যাওয়া যায়। মঙ্গলের মায়াবী রাতে ওয়েম্বলির মঞ্চে সেটাই হল স্পেনের প্রধান তারকা ফরোয়ার্ড আলভারো মোরাতার সঙ্গে। তার জন্যই ইতালির সঙ্গে ইউরো কাপের সেমিফাইনালের ম্যাচে টাইব্রেকারে পৌঁছল স্পেন। কিন্তু কার্যত তার ভুলের জন্যই ইতালির কাছে টাইব্রেকারে হেরে ইউরো থেকে বিদায় নিল স্প্যানিশ আর্মাডা। ফুটবল কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে সেটা ইউরো কাপের প্রথম সেমিফাইনালে ইতালি আর স্পেনের লড়াই চাক্ষুষ না করলে বোঝা মুশকিল। ওয়েম্বলিতে এদিনের ম্যাচে ইতালি যেন ছিল শুধুই নিজেদের রক্ষা করার জন্য। গোটা ম্যাচে একচেটিয়া আধিপত্য দেখাল স্প্যানিশরা। কিন্তু সঠিক সময়ে সুযোগের সঠিক ব্যবহার করায় শিকে ছিঁড়ল ইতালিয়ানদের ভাগ্যে। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে লা রোখাদের হারিয়ে ইউরোর শেষ সিঁড়িতে পা রাখল আজুরিরা।

স্প্যানিশরা বল ধরে খেলে, নিজেদের মধ্যে প্রচুর পাস খেলে। এসব জানতেন ইতালির প্রশিক্ষক রবার্তো মানচিনি। কিন্তু স্পেনের সেই খেলা যে ইতালিকে এইভাবে ব্যাকফুটে পাঠিয়ে দেবে ভাবতে পারেননি অতি বড় আজুরি সমর্থকও। প্রথমার্ধেই গোটা ইতালিয়ান দলকে তাদের অর্ধে পাঠিয়ে দিয়েছিল সের্জিও বুস্কেতসদের খেলা। বলের দখল পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে ছোট ছোট পাস খেলে বিপক্ষের খেলার ছন্দটাই ভেঙে দিয়েছিল তারা। ইতালিয়ানরা পায়ে বল পেয়ে দু-তিনটি পাস খেলে আক্রমণে ওঠার আগেই বল ছিনিয়ে নিজেদের দখলে নিয়ে আজুরিদের সাধারণ খেলা নষ্ট করে দেওয়ার মতলব নিয়েই পরিকল্পনা করেছিলেন স্প্যানিশ প্রশিক্ষক লুইস এনরিকে। গোটা ম্যাচেই কাজে লেগেছে এই পরিকল্পনা। ৭১ শতাংশ বল নিজের দখলে রেখে নিজেদের মধ্যে ৯০০-এরও বেশি পাস খেলেছে লা রোখারা। কিন্তু এত আক্রমণের পরেও প্রথমার্ধে গোলের দেখা পায়নি তারা।

দ্বিতীয়ার্ধের ৬০ মিনিটের মাথায় স্পেনের একটা আক্রমণ ইতালির গোলরক্ষক ডোন্নারুম্মার দস্তানা আটকে যাওয়ার পর তৎক্ষণাৎ প্রতি-আক্রমণে ওঠে ইতালি। স্প্যানিশ ডি-বক্সের ঠিক ভিতরে বল পেয়ে ডান পায়ের কেরামতি দেখিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন ফেডেরিকো কিয়েসা। সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক গোলে এগিয়ে যায় ইতালি। তারপর শুরু হয় গোলের জন্য স্পেনের ছটফটানি। ঠিক ২০ মিনিট পর ডানি ওলমোর বাড়ানো ডিফেন্স চেরা পাস তিনকাঠিতে রেখে ডোন্নারুম্মাকে পরাস্ত করে ম্যাচে সমতা ফেরান আলভারো মোরাতা। এরপর ৯০ মিনিটের খেলা হয়ে অতিরিক্ত সময়ে যায়। সেখানেও দুই দলের মধ্যে গোলের মীমাংসা না হওয়ায় খেলা সরাসরি চলে যায় টাইব্রেকারে। প্রথমেই স্পেনের হয়ে পেনাল্টি ফস্কান ডানি ওলমো। তারপর সেই ক্ষমার অযোগ্য ‘ছোট্ট’ ভুলটি করেন স্পেনের একমাত্র গোলদাতা আলভারো মোরাতা। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তার গুরুত্বপূর্ণ পেনাল্টি খুব সহজেই আটকে দেন ডোন্নারুম্মা।

আজুরিরা কিন্তু পেনাল্টিতে কোনো ভুল করেননি। ২০১২ সালের ইউরো কাপের ফাইনালে স্পেনের কাছে ৪-০ গোলে হারতে হয়েছিল ইতালিকে। সেদিন পেনাল্টি ফস্কেছিলেন ইতালির রক্ষণের অন্যতম স্তম্ম লিওনার্দো বোনুচ্চি। কিন্তু সেই ভুল আর আজ তিনি করলেন না। মাথা ঠান্ডা রেখে ৯ বছর আগের প্রতিশোধ তুলে নিলেন। টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে জিতল বটে আজুরিরা, কিন্তু ইউরো ২০২০-তে এই প্রথম স্পেনের সামনে তাদের সত্যিই অসহায় লেগেছে। শুরু থেকে বুস্কেতসদের খেলা দেখে অতি বড় স্পেন ভক্তও বলতে পারবেন না যে তিনি ভেবেছিলেন স্পেন এতদূর আসবে। সেখানে দাঁড়িয়ে সেমিফাইনালের মঞ্চে অপ্রতিরোধ্য ইতালির বিরুদ্ধে যে অপ্রত্যাশিত লড়াইটা দিল লা রোখারা তা প্রশংসনীয়। সঠিক সময়ে সুযোগগুলিকে ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে হয়তো বড় অঘটনও ঘটাতে পারত লুইস এনরিকের ছেলেরা। কিন্তু হিমশীতল রবার্তো মানচিনি জানতেন কীভাবে স্পেনকে জবাব দেওয়া যায়। নিজের ছেলেদের দিয়ে সেটাই করে দেখিয়েছেন ইতালির প্রশিক্ষক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *