ব্রিসবেন: ঐতিহাসিক ব্রিসবেন টেস্ট এবং সিরিজ জয়ের কৃতিত্বের কথা বলতে গেলে প্রথমেই ভারতের তরুণ প্রজন্মের কথা উঠছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ও ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে কার্যত ‘হিরো’ বনে গিয়েছেন ঋষভ পন্থ ও শুভমান গিলরা। তবে গোটা সিরিজেই নিঃশব্দে নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করে গিয়েছেন একটা মানুষ। চেতেশ্বর পূজারা, সাদা জার্সিতে ভারতের তিন নম্বরি।
বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির শেষ টেস্টের পঞ্চম দিনে গাব্বার পিচে প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, জশ হ্যাজেলউডরা যখন আগুন ঝরাচ্ছেন তখনই মাঠে নামেন পূজারা। ২১১ বল খেলে ৫৬ রান করেন তিনি। কিন্তু তার এই ইনিংস কোনও শতরানের চেয়ে কম নয়। নন-স্ট্রাইকিং এন্ডে দাঁড়িয়ে তরুণ শুভমানকে একাই চালনা করেন চেতেশ্বর। আবার স্ট্রাইকে এলেই কামিন্স-স্টার্কদের বল আগুনের গোলা হয়ে আছড়ে পড়ে তার বুকে, মাথায়, হাতে। খুলে যায় হেলমেটের পিছনের কবচ। বিষাক্ত বাউন্সার লেগে বুড়ো আঙ্গুলের ব্যথায় কাতরাতে থাকেন তিনি। কিন্তু নিজের দায়িত্ব ভোলেন না। আবার বুক চিতিয়ে পরের বলটা পাঠিয়ে দেন বাউন্ডারির বাইরে।
আজি বোলার এবং সংবাদমাধ্যমের কাছে চেতেশ্বর পূজারা যেন এক ভয়ঙ্কর স্বপ্নের মত। বহুদিন পর ভারতের তিন নম্বরে এমন এক শক্ত খুঁটি ব্যাট হাতে নামেন যাকে টলানো মুশকিল। অস্ট্রেলিয়দের কাছে দুর্গ বলে পরিচিত গাব্বার ভয়ঙ্কর আগুনে পিচে স্টার্ক-কামিন্সদের একের পর এক আক্রমণ প্রতিহত করে ঠাঁয় মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকে সে খুঁটি। সেই ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারতের সাত দশক পর টেস্ট জেতা থেকেই এই ভয়ঙ্কর স্বপ্নের শুরু।
পরিসংখ্যান বলছে, গাব্বা টেস্টের শেষ দিনে প্রায় ১৪টিরও বেশি বল পূজারার শরীর লক্ষ্য করে ছুটে এসেছিল। মাথায়, বুকে, হাতে সেই বল খেয়েও নত হননি পূজারা। তিনি জানতেন চোট-আঘাতে জর্জরিত ভারতীয় দলের তাকে প্রয়োজন। ব্রিসবেনে ইতিহাস সৃষ্টি করতে তাকে প্রয়োজন। অধিনায়ক রাহানের অগাধ বিশ্বাস তার উপর ছিল। তাই বারবার পড়ে গিয়েও আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন তিনি। গোটা সিরিজেই ধীরগতির ব্যাটিংয়ের জন্য সমালোচিত হয়েছেন চেতেশ্বর। সিরিজে মাত্র দুটি অর্ধশত রান। তা সত্ত্বেও তিনি যে কাজটি করেছেন সেটি অন্য কেউ আদৌও পারত কিনা সন্দেহ। সিরিজ জুড়ে ২২ ঘণ্টা ক্রিজে কাটিয়ে কপালে ভাঁজ ফেলেছেন অজি বোলারদের।