চণ্ডীগড়: মেয়ের প্রশিক্ষণে যাতে কোনও খামতি না থাকে, সে জন্য তিন বছর অবেতন ছুটি নিয়েছিলেন তিনি৷ প্রতিটা মুহূর্তে মেয়ের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন তিনিও৷ নিরাশ করেনি মেয়েও৷ কমনওয়েলথ গেমসে বক্সিংয়ে সোনা জিতেছেন নীতু ঘাঙ্ঘাস। ৪৮ কেজি বিভাগে ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ ডেমিস-জেড রেজস্তানকে ৫-০ পয়েন্টে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। আর সোনা জয়ের পরেই নীতুর মুখে সবার আগে শোনা গেল বাবার কথা।
আরও পড়ুন- CWG 2022: লক্ষ্যপূরণ লক্ষ্যের, ব্যাডমিন্টন সিঙ্গলসে সোনা জয়
নীতুর বাবা জয় ভগবান হরিয়ানার সচিবালয়ে কর্মরত৷ তাঁর স্বপ্ন ছিল মেয়ে বড় বক্সার হবে৷ এর আগে নীতু যুব বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে দু’বারের সোনা জয়ী৷ এ বারই প্রথম কমনওয়েলথ গেমসে নেমেছিলেন তিনি৷ আর প্রথম বারেই সোনা জিতেছেন৷ তবে বাবাকে এভাবে পাশে না পেলে হয়তো বক্সিংয়ে এই বিপুল সাফল্য কোনও দিনই পাওয়া হত না তাঁর। তিন বছর কাজ থেকে অবেতন ছুটি নিয়ে মেয়েকে বক্সার বানানোর জন্য পরিশ্রম করে গিয়েছে জয় ভগবান। সেই পরিশ্রমের ফসল তিনি পেয়েছেন৷ কমনওয়েলথে সোনা জিতে ঘরে ফিরেছেন নীতু৷
সোনা জেতার পর নীতু বলেন, ‘‘আজ আমার স্বপ্নপূরণ হয়েছে। কিন্তু এই স্বপ্নপূরণের পিছনে সব চেয়ে বেশি অবদান আমার বাবার। উনি কোনও কিছুর ত্রুটি রাখেননি। মুখ বুজে অনেক কষ্ট সহ্য করে গিয়েছেন। আমি যাতে সেরা প্রশিক্ষণ পাই শুধু সে দিকে লক্ষ্য রেখে গিয়েছেন। বাবা না থাকলে এই জায়গায় পৌঁছতেই পারতাম না।’’
হরিয়ানার ভিওয়ানি জেলার ধনানা গ্রামে জন্ম নীতু ঘাঙ্ঘাসের। ছোটবেলায় বক্সিং নিয়ে তেমন কোনও উৎসাহই ছিল না তাঁর। বলতে গেলে, বাবার ইচ্ছেতেই পা রেখেছিলেন বক্সিং রিংয়ে৷ প্রতিদিন বাবার সঙ্গে স্কুটারে চেপে ৭০ কিমি পথ পাড়ি দিতেন ভিওয়ানি বক্সিং ক্লাবে প্রশিক্ষণ নিতে৷ বাবাই ছিলেন তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী৷ এদিকে বাবার চিন্তা ছিল, শুধু প্রশিক্ষণ নিলেই হবে না, এক জন ভালো বক্সারের ভালোমত দেখভাল করাটাও জরুরি৷ তাই ভগবান ঠিক করেন, কাজ থেকে অবেতন ছুটি নেবেন। তবে এই সিদ্ধান্ত ছিল অত্যন্ত কঠিন৷ সংসার চালানোর পাশাপাশি নীতুকে পুষ্টিকর খাবার দিতে হত তাঁকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আত্মীয়দের কাছ থেকে বেশ কিছু টাকা ধারও নেন ভগবান। নিজের একটি ছোট চাষের জমি ছিল তাঁর। সেখানে চাষ করে সংসার চালাতে থাকেন। মেয়েকে বক্সার বানিয়ে তবেই ক্ষান্ত হন তিনি৷
বক্সিং রিংয়ে প্রতিপক্ষের সামনে সিংহীর মতো ঝাঁপিয়ে পড়লেও রিংয়ের বাইরে কিন্তু বেশ লাজুক নীতু। কোচ ভাস্কর চন্দ্র ভট্ট তাঁর নাম দিয়েছেন ‘গব্বর শেরনি’৷ ছাত্রী সোনা জেতার পরেই ভাস্কর বলেন, ‘‘নীতু তো এমনই৷ রিংয়ের বাইরে ওঁর গলাটাও শোনা যায় না। কিন্তু রিংয়ের ভিতরে ও সিংহীর মতো খেলে।’’
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>