আইএসএলের ছ’টি ডার্বিতেই হার ইস্টবেঙ্গলের, কী কারণে খারাপ সময় কাটাতে পারছে না ইস্টবেঙ্গল?

আইএসএলের ছ’টি ডার্বিতেই হার ইস্টবেঙ্গলের, কী কারণে খারাপ সময় কাটাতে পারছে না ইস্টবেঙ্গল?

নিজস্ব প্রতিনিধি: পরপর তিনবার আইএসএল টুর্নামেন্টের নকআউট পর্বে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে ইস্টবেঙ্গল। শুধু নকআউট রাউন্ডে উঠতে ব্যর্থ হওয়াই নয়, মর্যাদার লড়াই ডার্বি ম্যাচের ছটিতেই মোহনবাগানের কাছে হারতে হয়েছে তাদের। আর আইএসএল-এর বাইরের টুর্নামেন্ট ধরলে টানা ৮টি সাক্ষাতেই সবুজ মেরুনের কাছে পরাজয় হয়েছে মশাল ব্রিগেডের।   সেখানে মশাল নিভিয়ে মোহনবাগানের নৌকা নিজের গতিতে এগিয়ে গিয়েছে। তাই মোহনবাগান সমর্থকরা লাল-হলুদকে কটাক্ষ করে বলছেন ‘যতবার ডার্বি ততবার হারবি’। স্বাভাবিকভাবেই হতাশ ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। এখন প্রশ্ন ইস্টবেঙ্গলের এই অবস্থা হওয়ার কারণ কি? শুধুই কি ফুটবলারদের ব্যর্থতা? সেটা কিন্তু একেবারেই ঠিক কথা নয়। এই লাগাতার ব্যর্থতার দায় ক্লাবকর্তাদের অবশ্যই নিতে হবে। একই সঙ্গে দলের কোচও কিন্তু দায় এড়াতে পারেন না। 

যবে থেকে আইএসএল টুর্নামেন্টে ইস্টবেঙ্গলের খেলার সম্ভাবনা সামনে আসে তখনই দেখা যায় ইনভেস্টর ঠিক করতে নাকানি-চোবানি খাচ্ছেন ক্লাব কর্তারা। নিজেদের ইগো ধরে রাখতে চুক্তিপত্রে সই করতেই এতটা দেরি হয়ে যায় যে পরে দল গঠন করতে সমস্যায় পড়তে হয় ইস্টবেঙ্গলকে। এর জন্য ক্লাব কর্তারা সবচেয়ে বেশি দায়ী। তা না হলে পরপর তিনবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি কেন হবে? প্রথমবার কোয়েস, তারপর শ্রী সিমেন্ট এবং বর্তমানে ইমামি গ্রুপ ইস্টবেঙ্গলের ইনভেস্টর হিসেবে রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে ইস্টবেঙ্গল স্পনসরার পায় এবং আইএসএল খেলতে পারে। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের বারবার কেন প্রয়োজন হয়েছে লাল-হলুদের, সেই প্রশ্ন বহুবার উঠেছে। কার্যক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে ইনভেস্টরের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত করতে এতটাই দেরি করে ফেলেছেন ক্লাবকর্তারা, ততক্ষণে ভাল ভাল ফুটবলারদের অন্যান্য দলগুলি তুলে নিয়েছে। পরপর তিনবার একই ঘটনা ঘটেছে, যা একেবারেই কাম্য ছিল না। ইমামি গ্রুপের সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলের চূড়ান্ত চুক্তি হয়ে যাওয়ার পরেও দল গঠনে ঢিলেঢালা মনোভাব দেখিয়েছেন কর্তারা। একইভাবে ভারতীয় দলের প্রাক্তন কোচ স্টিভন কনস্ট্যান্টাইন ইস্টবেঙ্গলের কোচ হওয়ার পরেও এমন কিছু মুন্সিয়ানা দেখাতে পারেননি যাতে দল ঘুরে দাঁড়াতে পারে। এবারের আইএসএল টুর্নামেন্ট বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে একাধিক ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল পিছিয়ে থাকলেও কোচ ফরোয়ার্ডের খেলোয়াড় বসিয়ে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার নামিয়েছেন। তবে কি তখন গোল শোধ করার চেয়ে আরও গোল না খাওয়াটাই বেশি কাম্য ছিল কোচের কাছে? এই প্রশ্ন তুলেছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞরা। এর পাশাপাশি বলতে হবে দলের ফুটবলারদের মানসিকতা।

শতাব্দী প্রাচীন ক্লাবটিতে এমন কিছু অযোগ্য ফুটবলার এবার সই করে ইস্টবেঙ্গলের জার্সি পরেছেন যা ভাবা যায় না। কলকাতা ফুটবল লিগের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সারির দলেও তাঁরা সুযোগ পাবেন না, এ কথা বাজি  রেখে বলা যায়। তাই এটা স্পষ্ট ভারতীয় ফুটবলের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট আইএসএলে ইতিমধ্যেই প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। এই জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো অবশ্যই সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে ক্লাব কর্তাদের মনোভাব বদলাতে হবে। আরও পেশাদারিত্ব দেখাতে হবে তাঁদের। না হলে আইএসএল-সহ একাধিক টুর্নামেন্ট যাবে আসবে,  ইস্টবেঙ্গলের ভাগ্য পরিবর্তন হবে না। তাতে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকবেন দলের কোটি কোটি সমর্থক। তাই আইএসএল তথা ভারতীয় ফুটবলে নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে আগামী দিনে ইস্টবেঙ্গলে আমূল পরিবর্তন দেখা যায় কিনা এখন তারই অপেক্ষা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *