রোনাল্ডোকে প্রথম একাদশে রাখেননি পর্তুগাল কোচ, এমন সাহস দেখাতে পারবেন ভারতীয় কোচেরা?

রোনাল্ডোকে প্রথম একাদশে রাখেননি পর্তুগাল কোচ, এমন সাহস দেখাতে পারবেন ভারতীয় কোচেরা?

নিজস্ব প্রতিনিধি: ব্যক্তি নয়, দলগত খেলাই আসল। এই মন্ত্রেই বিশ্বাস করেন পর্তুগালের কোচ ফার্নান্দো স্যান্টোস। এর পাশাপাশি তিনি সবচেয়ে বেশি জোর দেন ফুটবলারদের শৃঙ্খলার উপর। সেখানে অন্যায় আচরণকে তিনি কিছুতেই বরদাস্ত করবেন না।কাতারে চলতি বিশ্বকাপের আসরে সেটা প্রমাণ করে দিলেন তিনি। যে ঘটনায় হতবাক ফুটবল বিশ্ব। কোচের নির্দেশ পছন্দ না হওয়ায় অন্যায় আচরণের শাস্তি হিসেবে সুইৎজারল্যান্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে রোনাল্ডোকে প্রথম একাদশের বাইরেই রেখেছিলেন পর্তুগালের কোচ। তবে তাতে কোনও ক্ষতি হয়নি। রোনাল্ডোর জায়গায় যাকে খেলিয়েছেন তিনি হ্যাটট্রিক করে গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছেন। আর রিজার্ভ বেঞ্চে বসে সেই দৃশ্য দেখতে হল সি আর সেভেনকে। যদিও রোনাল্ডোকে সত্তর মিনিটের পর নামিয়েছিলেন কোচ। কিন্তু ততক্ষণে পর্তুগাল জয় নিশ্চিত করে ফেলেছিল। তাই পর্তুগালের বিরাট জয়ে  সামান্যতম ভূমিকা ছিল না রোনাল্ডোর।

কাতারের লুসেল স্টেডিয়ামে তখন সুইৎজারল্যান্ডকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করছে পর্তুগাল। চলতি বিশ্বকাপে প্রথম হ্যাটট্রিক করেছেন গনসালো র‍্যামোস। কিন্তু পর্তুগালের এই বিপুল জয়ে কোনও ভূমিকাই থাকল না দলের সুপারস্টার তথা বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর। কারণ সেই ম্যাচে প্রথম একাদশে তাঁকে রাখেননি কোচ ফার্নান্দো স্যান্টোস। কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচের ৬৫ মিনিটের মাথায় তাঁকে তুলে নিয়েছিলেন কোচ স্যান্টোস। যা মেনে নিতে না পেরে প্রকাশ্যেই অসন্তোষ জানিয়েছিলেন রোনাল্ডো। সেই ঘটনা নিয়ে পর্তুগালের কোচ স্পষ্ট বলেন, ওঁর এই আচরণ একেবারেই কাম্য নয়। রোনাল্ডোর আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। তখনই জানা যায় সুইৎজারল্যান্ড ম্যাচে সম্ভবত প্রথম একাদশে রোনাল্ডোকে রাখবেন না তিনি। আর বাস্তবে সেটাই কিন্তু দেখা গিয়েছে। আর বিষয়টি নিয়ে রোনাল্ডোর বান্ধবী জর্জিনা কটাক্ষ করেছেন পর্তুগালের কোচকে। এমনকী বুধবার অনুশীলনও করেননি রোনাল্ডো। সব মিলিয়ে রোনাল্ডো বনাম কোচের কাজিয়া চূড়ান্ত আকার নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু পর্তুগালের কোচ স্যান্টোস নিজের অবস্থানে অনড় রয়েছে।

শুধু পর্তুগালের কোচ নন, আর্জেন্টিনার প্রধান স্ট্রাইকার লাউতারো মার্টিনেজের ফর্ম খারাপ থাকায় তাঁকে প্রথম একাদশে রাখছেন না কোচ স্কালোনি। অথচ মার্টিনেজ বিশ্বকাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডের পাশাপাশি কোপা আমেরিকা কাপেও অসাধারণ ফুটবল খেলে আর্জেন্টিনাকে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য এনে দিতে পেরেছিলেন। গোটা আর্জেন্টিনা দলটাকে খেলান মেসি। সেখানে গোলের দিকে মার্টিনেজের দিকেই তাকিয়ে থাকে দেশ। কিন্তু ফর্ম খারাপ থাকায় তাঁকে প্রথম একাদশে না রেখে শেষ দিকে খেলাতে দ্বিধা করছেন না আর্জেন্টিনার কোচ। একই কথা প্রযোজ্য ফ্রান্সের কোচের ক্ষেত্রেও। বিশ্বকাপ শুরুর আগেই দলের অন্যতম দুই সেরা ফুটবলার বেঞ্জেমা এবং পোগবা চোটের কারণে সরে গেলেও তিনি নতুন করে কাউকে স্কোয়াডে নেননি। স্পষ্ট বলেছেন যাঁরা রয়েছেন তাঁরাই ফ্রান্সকে সাফল্য এনে দেবেন। তাই নতুন করে দেশ থেকে কাউকে উড়িয়ে আনেননি। আর ফ্রান্স কেমন ফুটবল খেলছে সেটা নতুন করে বলার কিছু নেই।

এখানেই প্রশ্ন, ক্রিকেট, ফুটবল বা অন্য কোনও খেলায় ভারতীয় কোচেরা কি এমন বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত কখনও নিতে পেরেছেন? ফর্ম খারাপ থাকলে কখনও ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট এই সাহস দেখাতে পেরেছেন কি? তাঁরা বিরাট কোহলি, শচীন তেন্ডুলকর, রোহিত শর্মা বা মহেন্দ্র সিং ধোনিদের মতো ক্রিকেটারদের দলের বাইরে রাখার সাহস কোনও দিন পেয়েছেন? ভারতীয় ক্লাব ফুটবলে এমন বহু উদাহরণ আছে যেখানে ফুটবলাররা অন্যায় আচরণ করেও শুধুমাত্র নামের জোরে, ব্যক্তিগত ক্যারিশ্মার জোরে দলে থেকে গিয়েছেন কোচ বা টিম ম্যানেজমেন্টকে রীতিমতো বুড়ো আঙুল দেখিয়ে। তাই এটা স্পষ্ট ওরা পারে, আর আমরা পারি না। ব্যক্তি নয়, টিম গেমই যে যে কোনও দেশের সম্পদ হতে পারে সেটা প্রমাণ করে দিয়েছেন পর্তুগালের কোচ স্যান্টোস। তবে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসরে যে সাহস দেখিয়েছেন তিনি, তা নিঃসন্দেহে নতুন নজির সৃষ্টি করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 − two =