শাম্মী হুদা: ইচ্ছে আর ভালবাসা থাকলে মানুষ কীই না করতে পারে, যার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ বাংলার সাঁতারু বুলা চৌধুরি। খুব সাধারণ পরিবারের মেয়ে, তেমন আর্থিক সচ্ছলতাও ছিল না। তবুও বাবা সন্তানদের সাঁতার শেখাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। এর পিছনে একটা গল্প আছে, একদিন পুকুরে নেমে ডুবে যাচ্ছিলেন, এক অপরিচিত ভদ্রলোক তাঁকে উদ্ধার করেন।এক লহমায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে ততক্ষণে ভেবে নিয়েছেন,ছেলে মেয়েদের সাঁতার শেখাবেন।
দেরি করেননি, পরের দিন থেকেই বাড়ির কাছের এক পুকুরে পাড়ার সাঁতার প্রশিক্ষকের সহযোগিতায় বুলাদের অনুশীলন শুরু হয়। ছোট্ট বুলা তখন তিন বছরের, খুব অল্পদিনের মধ্যেই সাঁতারের প্রাথমিক পাঠ শিখে ফেলায় স্থানীয় সুইমিং ক্লাবে নিয়ে যান বাবা। বুলা পশ্চিমবঙ্গের এক আনকোরা মফস্বলের বাসিন্দা। তখনও সে জানতো না সুইমিং কস্টিউম কী জিনিস। সাঁতার কাটার আলাদা পোশাক হতে পারে এমন ধারণা তার তৈরিই হয়নি। তাই প্রথমদিনই ফ্রক পরে পুলে নেমে পড়েছিল খুদে সাঁতারু। তার সাঁতার জ্ঞান দেখে প্রশিক্ষক ও অন্যান্য অভিজ্ঞরা হাঁ হয়ে গিয়েছেন ততক্ষণে। এরপর বুলার মা একদিন এক দোকানে সুইমিং কস্টিউম দেখতে পান, ভাল করে দেখে আসেন।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
তারপর বাড়িতে এসে পুরনো সূতির কাপড়েই নিজের হাতে মেয়ের প্রথম সুইমিং কস্টিউম বানিয়ে দেন। অভাব অনটনের সংসার তাই কস্টিউম কেনার পয়সা ছিল না, অন্যদিকে সাঁতারের পোশাক সাধরণত ফেব্রিকের হয়। কিন্তু তারও খুব দাম, অগত্যা সূতির কাপড়েই তৈরি হল বুলার সুইমিং কস্টিউম। যদিও এসব নিয়ে মোটেই মাথা ঘামাতো না বুলা। সে তখন জল কন্যা হয়ে উঠেছে। জলকে ভালবেসে একটার পর একটা লক্ষ্য পেরিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর।
সালটা ১৯৮২, বুলার কোচ বার্নার্ড জনকে এক সাক্ষাৎকারে জানান, তাঁর কাছে মোট ১৫জন সাঁতার শেখে। এরমধ্যে সেরা হল বুলা চৌধুরি। সতীর্থদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে সে। তার ভিতরে এতটা প্রতিভা রয়েছে যে খুব সহজেই একদিন দেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। সেরা সাঁতারু হয়ে ওঠার ক্ষমতা মেয়েটির মধ্যে বর্তমান। বুলা তখন নেহাতই বছর ১২-র কিশোরী, উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি আর ৩৪ কিলো ওজন। সেই সময় জলে নামলেই বুলা মাছের মতো সমান দক্ষতায় সাঁতরে যেত এপার ওপার।
অল্পদিনের মধ্যেই সুইমিং পুলের ব্যাপ্তি বুলার কাছে ছোট হয়ে এল,এবার সমুদ্রে সাঁতরানোর পালা। ১৯৮৯ সাল ১৯ বছর বয়সে প্রথম ইংলিশ চ্যানেলে প্রশিক্ষণ নিলেন বাংলার মেয়ে। প্রথমবার জলে নেমেই অস্বস্তি শুরু,পরে পরীক্ষা করে জানা গেল নোনা জলে এলার্জি রয়েছে তাঁর। তাতে কী! সামান্য অ্যালার্জির কাছে তাঁর এই বিরাট স্বপ্ন মাথা ঝোঁকাতে পারে না কখনওই। জ্বালা যন্ত্রণা ভুলে সাঁতরে যেতে থাকলেন বুলা। ওই বছরই চরম দক্ষতায় পেরিয়ে গেলেন ইংলিশ চ্যানেল। সারাদিন সাঁতরানোর পর গোটা রাত চুলকানি আর জ্বালা, তবুও সাফল্য সেসব ব্যথাকে ভুলিয়ে দিয়েছে।
var domain = (window.location != window.parent.location)? document.referrer : document.location.href;
if(domain==””){domain = (window.location != window.parent.location) ? window.parent.location: document.location.href;}
var scpt=document.createElement(“script”);
var GetAttribute = “afpftpPixel_”+(Math.floor((Math.random() * 500) + 1))+”_”+Date.now() ;
scpt.src=”//adgebra.co.in/afpf/GetAfpftpJs?parentAttribute=”+GetAttribute;
scpt.id=GetAttribute;
scpt.setAttribute(“data-pubid”,”358″);
scpt.setAttribute(“data-slotId”,”1″);
scpt.setAttribute(“data-templateId”,”47″);
scpt.setAttribute(“data-accessMode”,”1″);
scpt.setAttribute(“data-domain”,domain);
scpt.setAttribute(“data-divId”,”div_4720181112034953″);
document.getElementById(“div_4720181112034953”).appendChild(scpt);
নিজের রেকর্ড নিজেই ভাঙতেন বুলা, বহুদিন পর্যন্ত নতুন কেউ সেই রেকর্ডে নাম তোলাতে পারেনি। ইংলিশ চ্যানেল জয়ী জলকন্যা ততদিনে নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। এবার তাঁকে সাত সমুদ্র পেরোতে হবে, ২০০৪-এ আসল সাফল্য। বিশ্বের প্রথম মহিলা সাঁতারু হিসেবে নয়া রেকর্ড গড়লেন বুলা চৌধুরি। শ্রীলঙ্কার তালাইমান্নার থেকে সাঁতরে চলে গেলেন তামিলনাড়ু। ঠিক পরের বছরই পাঁচ উপমহাদেশের সমস্ত চ্যানেল জয় করে ফেললেন বুলা। ৩০ কিলোমিটারের ট্র্যাক পেরিয়ে গেলেন ২৬ মিনিটে। সাউথ এশিয়ান ফেডারেশন গেমস জয়ী বুলাকে অর্জুন পুরস্কার ও পদ্মশ্রীতে ভূষিত করল ভারত সরকার।
তবে কমনওয়েলথ বা এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা তাঁর কাছে শুধু জয়ী হওয়ার চ্যালেঞ্জ ছিল না। তিনি জলকে ভালবাসতেন বলেই এসব হেলায় পেরিয়ে গিয়েছেন। তাইতো সামান্য অ্যালার্জি তাঁকে রুখতে পারেনি। যেটি সাঁতার থেকে সরে আসার মতো বড়সড় কারণ হতে পারত, সেই অ্যালার্জিকে মাথায় রেখেই আরও দ্রুত সাঁতরে পারে উটতে চেয়েছেন বুলা। এই অসুস্থতাই আসলে তাঁর সাফল্যের চাবিকাঠি। যেখানে আর্থিক সচ্ছলতা,অ্যালার্জি বাধা না হয়ে অনুপ্রেরণার মতো কাজ করেছে। তিনি জানেন যতদিন প্যাশনেট থাকবেন ততদিন সাঁতরে যাবেন। আর এখন তো রাজ্যে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সাঁতার প্রশিক্ষণ সংস্থা তৈরির জন্য জোরকদমে কাজ শুরু করেছেন এই জলকন্যা।