গোয়া: ‘সর্বহারার হারানোর কিছু নেই, জয় করার জন্য আছে সারা দুনিয়া৷’ সম্ভবত এই মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়েই কট্টর ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা আর কিছু ইস্টবেঙ্গল প্রেমী ফুটবল বিশারদ স্বপ্ন দেখেছিলেন, কিছুই যেখানে আর পাওয়ার নেই, সেখানে অন্তত মরিয়া লড়াই করে আইএসএলের ফিরতি ডার্বির মহাযুদ্ধে সম্মানের জয় ছিনিয়ে আনবেন রবি ফাওলারের ছেলেরা৷ কিন্তু আবেগের আতিশয্য আর বাস্তবের ময়দানে যে ফারাক অনেক! শতবর্ষ ছুঁয়ে ফেলা ঘটি-বাঙালের যুদ্ধ বহু উলটপুরাণ দেখেনি তা নয়, কিন্তু আজকের আদ্যন্ত অঙ্ক কষা পেশাদারি ফুটবলে শুধুই ভোকাল টনিকে কি মর্যাদার মহারণ জেতা যায়, বিশেষত যেখানে দক্ষতার বিচারে ওজনের তফাত যেমন চোখে পড়ার মতো, তেমনই চোখে পড়ে না লড়াই করার ইচ্ছাশক্তিও৷ তাই তো মাণ্ডবীর তীরে শুক্র-সন্ধ্যায় র্বিক্ষিপ্ত ‘ব্রাইট’ পারফরম্যান্সের দেখা মিললেও, ইস্ট-মোহনের দ্বন্দ্বযুদ্ধে মাঠ মাতাল সেই অপ্রতিরোধ্য কৃষ্ণ-লীলা৷
আইএসএলের প্রথম ডার্বিতে এসসি ইস্টবেঙ্গলকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল এটিকে মোহনবাগান৷ তবে সেটা যে একেবারেই অসম লড়াই ছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ একদিকে যখন সবুজ-মেরুনের তারকাখচিত সেট টিম, উলটো দিকে তখন প্রায় বিনা প্রস্তুতিতেই দেশের এক নম্বর লিগের মঞ্চে নেমে পড়া লাল-হলুদ৷ কিন্তু শুক্রবার যখন কলকাতার দুই প্রধান মুখোমুখি হল, তখন দুই দলই খেলে ফেলেছে ১৭টি করে ম্যাচ৷ এটিকে মোহনবাগান যখন লিগ টেবিলের মগডালে, তখন এসসি ইস্টবেঙ্গল নবম স্থানে থাকলেও, ব্রাইট এনবাখোরে-রাজু গায়কোয়াড়দের অন্তর্ভুক্তিতে দল আগের তুলনায় যেমন অনেকটাই গোছানো, তেমনই আগের কয়েকটি ম্যাচে খেলেওছে নজরকাড়া ফুটবল৷ কিন্তু বড় ম্যাচ যে অন্য ম্যাচ৷ তাই রয় কৃষ্ণা-ডেভিড উইলিয়ামস-জাভি হার্নান্ডেজদের ত্রিফলায় বিদ্ধ জঘন্য লাল-হলুদ ডিফেন্স৷
স্কোরবোর্ড বলছে, আইএসএলের দ্বিতীয় ডার্বির ফল ৩-১৷ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস বলছেন, ‘চার গোল তো আমরাই করলাম৷’ পরিহাসটা কিন্তু নির্মম৷ খেলার ১৫ মিনিটে কৃষ্ণার ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া দৌড়ে পিছিয়ে পড়ার পর প্রথমার্ধের শেষদিকে তিরির আত্মঘাতী গোলে সমতা ফেরায় ইস্টবেঙ্গল৷ মজার বিষয় হল, বিরতিতে যখন পরিসংখ্যান ভেসে উঠল টিভির পর্দায়, তখন দেখা গেল, মোহনবাগানের গোল লক্ষ্য করে একটাও শট নিতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল৷ ব্রাইটের গোটা কয়েক ঝলকানি বাদ দিলে কোথায় পিলকিংটন-মাঘোমা-স্টেনম্যানরা! আসলে ফারাকটা স্কিলের আর কৌশলের৷ মাস্টার স্ট্র্যাটেজিস্ট হাবাস যখন তিরি-সন্দেশ-প্রীতম-শুভাশিসদের দিয়ে নিশ্ছিদ্র রক্ষণ সাজিয়ে আর কৃষ্ণা-উইলিয়ামস-মার্সেলিনহো-মনবীরদের দিয়ে বিপক্ষের নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছেন, তখন পালটা কোনও অস্ত্র ছিল না ফাওলার-গ্রান্টদের হাতে৷ তাই প্রায় একতরফা ডার্বিতে ফলও প্রত্যাশিতই৷ এখন দেখার এটিকে মোহনবাগানের কপালে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিকে ছেঁড়ে কি না৷ সামনে প্রতিপক্ষ বলতে নিজামের শহর আর পাঁচ পয়েন্টের ব্যবধানে দ্বিতীয় স্থানে থাকা মুম্বই৷ কৃষ্ণ রাখলে, মারবে কে!