ব্রাজিলিয়া: ফুটবলের সঙ্গে তাদের নাড়ির টান৷ এখানে ছোট থেকেই ছেলেরা বেড়ে ওঠে পায়ে বল নিয়ে৷ ব্রাজিল বা আর্জেন্তিনার প্রতিভাবান খেলোয়াদের ভবিষ্যতের পেলে বা মারাদোনা বলেই অভিহিত করা হয়৷ এক সময় লিওনেল মেসি, নেইমাররাও এই ধরনের ট্যাগ গায়ে নিয়েই বিশ্বমঞ্চে উঠে এসেছেন৷ তবে এমন হাজার হাজার প্রতিভাবান পেলে কিংবা মারাদোনাও রয়েছে, যাঁরা হারিয়ে গিয়েছে কালের গর্ভে৷ তবে ব্রাজিলের যে ফুটবলারকে নেইমারের উত্তরসুরী হিসাবে ভাবা হচ্ছে, তিনি সত্যই এক জাদুকর৷ দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইউরোপিয়ান জায়েন্ট ক্লাব বার্সেলোনা এবং রিয়াল মাদ্রিত উভয়েই নজর রেখেছে তাঁর উপরে৷ তাঁকে দলে নিতে মরিয়া দুই ক্লাবই৷ সম্প্রতি ব্রাজিলের পেশাদার ফুটবল লিগে নিজের প্রথম গোলটি করেন ১৬ বছরের বালক জুয়েল এনড্রিক৷ সেই গোলে কী চমক খুঁজে পেলেন ফুটবল বোদ্ধারা?
আরও পড়ুন- ঠিক কী ঘটেছিল? ২২ ঘণ্টার মধ্যেই কমেন্ট্রি বক্সে ফিরে জানালেন পন্টিং
সাম্বার দেশ ব্রাজিলের আরও একটি প্রতীক হল ফুটবল৷ দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেও এদেশের ছেলেরা বড় হয়ে ওঠে ফুটবল খেলে৷ ব্রাজিলের অন্দরে হাজারো সমস্যা রয়েছে৷ রয়েছে রাজনৈতিক উত্তেজনা, আর্থিক টানাপোড়েন, অপরাধের ছড়াছড়ি। এর পরেও গোটা দেশকে এক সুতোয় গেঁথে রেখেছে ফুটবল। কারণ এখানে ফুটবল শুধু খেলা নয়৷ একটা ধর্ম৷ আর তারকা ফুটবলাররা এখানে দেবতা৷
সর্বকালের সেরা ফুটবলারের তালিকায় সবার আগে হয়তো উঠে আসবে পেলের নাম৷ এছাড়াও রয়েছেন, জিকো, সক্রেটিস, রোনালদো, রোনালডিনহো, কাকা কিংবা হালআমলের নেইমার৷ ব্রাজিল ফুটবলে তারকার মেলা৷ সেই ভিড়ে সম্ভবত সামিল হতে চলেছে আরও একটা নাম, জুয়েল এনড্রিক৷
আজ থেকে কয়েক বছর পর মেসি, রোনান্ডো, নেইমাররা যখন অতীত হয়ে যাবে, তখন গোটা বিশ্ব হয়তো কুর্নিশ জানাবে আজকের এই কিশোরকে৷
ব্রাজিলের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম এনড্রিকের৷ যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়৷ ব্রাজিলের আর পাঁচটা ফুটবলারের মতোই কঠিন পথের সংগ্রাম তাঁর৷ কিন্তু এনড্রিতের বাবা ডগলাস সুসা যে স্বপ্নবিলাসী৷ ছেলেকে বড় ফুটবলার হিসাবে দেখাটাই তাঁর একমাত্র স্বপ্ন৷ যেখানে ফুটবল খেলাকে অনেকে বিলাসিতা বলে ভাবেন, সেখানে সুসা ফুটবল খেলার জন্য ছেলেকে উৎসাহ জুগিয়ে গিয়েছেন৷ ছেলের ফুটবলের কারিকুরি মোবাইলে রেকর্ড করে আপলোড করতেন সোশ্যাল সাইটে৷ পাঠাতেন ক্লাবগুলের স্কাউটদের কাছে৷ কখনও আধ পেটা খেয়ে, কখনও আবার খালি পেটে বল নিয়ে মাঠে দাপিয়ে বেরাত এনড্রিক৷
২০১৬ সালে জুনিয়র ফুটবলার হিসাবে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব পালমিরাসে যোগ দেন দুরন্ত গতির এই বালক৷ তখন তাঁর বয়স মাত্র ১০৷ পেশাদার ফুটবলে তাঁর অভিষেক হয়েছে সম্প্রতি৷ তবে যুব স্তরেই তিনি পায়ের যে জাদু দেখিয়েছেন, তাতে তাঁকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে ফুটবল বিশ্ব৷ ১৭২ ম্যাচে করেছেন ১৭০ গোল৷ যা অনেককেই অবাক করেছে৷ ব্রাজিলে যুবাদের বিখ্যাত টুর্নামেন্ট কোপিনিয়ার সেরা খেলোয়ার হয়েছেন৷ স্পেনিশ সংবাদমাধ্যম মার্কা ইতিমধ্যেই তিনবার তাঁর ছবি ফ্রন্ট পেজে ছেপেছেন৷ যা অনেক ফুটবলারের কাছেই স্বপ্ন৷ ১৬তম জন্মদিনে তিনি চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন পালমিরাসের সঙ্গে৷
তবে এখনই ইউরোপিয়াবন ফুটবলে খেলার সুযোগ পাচ্ছেন না ব্রাজিলের এই বিস্ময়বালক৷ তাঁকে নিয়ে বিস্তর মতামাতি হলেও, ব্রাজিলের নিয়ম অনুযায়ী কোনেও ফুটবলারই ১৮ বছর বয়সের আগে ইউরোপিয়ান ফুটবলে নাম লেখানোর সুযোগ পান না৷ তবে বিস্কর মিডিয়া হাইপের পরেও মাটিতেই পা এনড্রিকের৷ ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলো নজর রেখেছে তাঁর দিকে৷ এর অন্যতম কারণ হল এনড্রিকের গতি৷ বল দখলের লড়াইয়ে খুব সহজেই ডিফেন্ডারদের কুপোকাত করতে পারেন তিনি৷ তাঁর ফিনিসিংও দুর্দান্ত৷
ক্রিশ্চিয়ানো রোনান্ডোকে নিজের আদর্শ মানা এনড্রিক বলেন, ‘আমি এখনো ওই পর্যায়ে পৌঁছকতে পারিনি৷ আমাক প্রচুর কাজ করতে হবে। আমাকে নম্র থাকতে হবে৷ যে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছি তা মনে রাখতে হবে। এটাই আমাকে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি দেবে।’
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>