বিদায় ‘টেনিস সুন্দরী’, সাফল্য, ব্যর্থতা, বিতর্ক ঘিরেই সানিয়ার টেনিস জীবন

বিদায় ‘টেনিস সুন্দরী’, সাফল্য, ব্যর্থতা, বিতর্ক ঘিরেই সানিয়ার টেনিস জীবন

কলকাতা: দীর্ঘ টেনিস জীবনের ইতিটা রূপকথার ইতিহাস হল না। জীবনের শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যামটা জয় দিয়ে শেষ করতে পারলেন না ভারতীয় টেনিস জগতের কিংবদন্তী সানিয়া মির্জা। তবে শুরু থেকে দেখলে বোঝা যাবে ভারতীয় টেনিসের নিরিখে সানিয়ার যাত্রা ছিল নিঃসন্দেহে বর্ণময়। ভারতীয় মেয়েরাও যে এভাবে বিশ্বমানের টেনিস খেলতে পারেন, সর্বোচ্চ পর্যায় পৌঁছে সমানে সমানে টক্কর দিতে পারেন, তা প্রথম বুঝিয়েছিলেন সানিয়াই৷ কোর্টে প্রতিপক্ষকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে না চাওয়া সানিয়া টেনিস জীবনের বিদায়বেলায় শুধু কাঁদলেনই না, তাঁর অসংখ্য অনুরাগীদেরও কাঁদালেন। কথা বলতে বলতে বার বার চোখের জল মুছেছেন। গলায় দলা পাকিয়ে উঠল টেনিস কোর্টকে বিদায় জানানোর যন্ত্রণা। চেষ্টা করেছিলেন স্বাভাবিক থাকার৷ কিন্তু পারলেন না৷ 

আরও পড়ুন- ‘আরও কয়েকটা টুর্নামেন্টে খেলতে চেয়েছিলাম..’, বিদায়বেলায় চোখে জল, আবেগঘন সানিয়া

পেশাদারি কেরিয়ারে মোট ৪৪ টি খেতাব জিতেছেন ভারতের ‘টেনিস কুইন’৷ ছ’টি গ্র্যান্ডস্ল্যামের মধ্যে রয়েছে তিনটি ডাবলস এবং তিনটি মিক্সড ডাবলস। ২০০৯ সালে  অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে মহেশ ভূপতির সঙ্গে জুটি বেঁধে মিক্সড ডাবলস জিতেছিলেন হায়দরাবাদী তারকা৷ ২০১২ সালে ফের মহেশ ভূপতির সঙ্গে জোট বেঁধে ফরাসি ওপেনের মিক্সড ডাবলস খেতাব জয়৷ ২০১৪ সালে ব্রুনো সর্সের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের মিক্সড ডাবলস জেতেন সানিয়া৷ এছাড়াও তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ২০১৫ সালের উইলম্বডন ডাবলস খেতাব, ২০১৫ সালের ইউএস ওপেন ডাবলস খেতাব এবং ২০১৬ সালে মার্টিনা হিঙ্গিসের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ডাবলস পুরস্কার৷ 

সানিয়াই ভারতের একমাত্র মহিলা সিঙ্গলস খেলোয়াড়, যিনি ক্রমতালিকায় ৩০ নম্বরে ছিলেন। ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এক দশক সময় ধরে ভারতীয় টেনিস অঙ্গনে এক নম্বর স্থানে ছিলেন সর্বোচ্চ রেকর্ডধারী এই ভারতীয় খেলোয়াড়। তিনি একক প্রতিযোগিতা থেকে অবসর নেওয়ার পর থেকে অঙ্কিতা রায়না শীর্ষ স্থান দখল করেন।

১৯৮৬ সালের ১৫ই ডিসেম্বর মহারাষ্ট্রের মুম্বই শহরে জন্ম সানিয়ার৷ তাঁর বাবা ইমরান মির্জা ক্রিড়া সাংবাদিক৷ মুম্বইয়ে জন্ম হলেও সানিয়া এবং তাঁর ছোট বোন আনাম বেড়ে ওঠে হায়দরাবাদ শহরে৷ ছোট থেকেই টেনিসে হাতেখড়ি৷ ছ’বার গ্র‍্যান্ড স্লামের মত কঠিন মঞ্চ জিতেছেন, ৪২ বার ট্যুর উইনার হয়েছেন। ভারতে তিনিই প্রথম মহিলা টেনিস তারকা যাঁর এই রেকর্ড রয়েছে। দু’বার এশিয়ান গেমেসেও স্বর্ণপদক জিতেছেন ভারতের এই ‘সোনার মেয়ে’৷ কিন্তু খেলোয়াড়দের জীবনে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াল চোট৷ কবজিতে চোটের পরই সিঙ্গেলস থেকে অবসর নেন টেনিস সুন্দরী৷ এবার টেনিস কোর্টকেই আলবিদা জানালেন। 

সানিয়াকে নিয়ে যেমন ভক্তদের মধ্যে উন্মাদনা রয়েছে, তেমনই তাঁর নামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বিস্কর বিতর্কও৷ কেরিয়ারের শুরুতে সানিয়ার পোশাক নিয়ে বেশ বিতর্ক হয়েছিল। টেনিসের পোশাক ধর্মের সঙ্গে মানানসই নয় বলে সরব হয়েছিলেন এক মুসলিম ধর্মগুরু। যদিও পরবর্তীতে নিজের বক্তব্য প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন তিনি। এখানেই শেষ নয়, সানিয়ার বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগও উঠেছিল৷ ২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসে জাতীয় পতাকার দিকে পা দিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় এই টেনিস তারকাকে৷ এর পরই তেরঙ্গাকে অপমান করেছেন বলে সানিয়ার বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয় একদল মানুষ। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আদালত পর্যন্ত গড়ায়।

২০০৯ সালে ছোটবেলার বন্ধু সোহরাব মির্জার সঙ্গে বাগদান হয়ে গিয়েছিল সানিয়ার৷ কিন্তু, শেষ পর্যন্ত তা বাতিল হয়ে যায়। কেন সোহরাবের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে দিলেন, তার কোনও ব্যাখ্যা ওই সময় দেননি টেনিস কিংবদন্তী৷