পেলে, মারাদোনার সিংহাসনে বসলেন মেসি! ফুটবল সম্রাজ্যে অবশেষে অমরত্ব পেলেন ঈশ্বরের আরেক বরপুত্র!

পেলে, মারাদোনার সিংহাসনে বসলেন মেসি! ফুটবল সম্রাজ্যে অবশেষে অমরত্ব পেলেন ঈশ্বরের আরেক বরপুত্র!

দোহা: কী ছিল না লিওনেল মেসির ট্রফি রাখার ক্যাবিনেটে? সাতবার ইউরোপের বর্ষসেরা খেলোয়াড় হিসেবে পাওয়া ব্যালন ডি’অর, ওলিম্পিক ফুটবলের স্বর্ণপদক, যুব বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে পাওয়া ট্রফি, কোপা আমেরিকা কাপ চ্যাম্পিয়ন ট্রফি, বার্সেলোনার হয়ে অসংখ্য লিগ জয়ের ট্রফি, পুরস্কারের তালিকা শেষ হওয়ার নয়। কিন্তু ছিল না বিশ্বকাপ। কাতার বিশ্বকাপের  আসর সেই অভাব মিটিয়ে দিল। কাতার মেসির সাফল্যের বৃত্ত সম্পূর্ণ করল। আর ঠিক তখন থেকেই পেলে-মারাদোনার সঙ্গে একই আসনে বসার দুর্লভ কৃতিত্ব অর্জন করলেন লিওনেল মেসি। কার্যত একার দক্ষতায় আর্জেন্টিনাকে ৩৬ বছর বাদে এনে দিলেন বিশ্বকাপ। পেলেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গোল্ডেন বল পুরস্কার। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোলদাতা এমবাপের থেকে একটি গোল কম মেসির। করেছেন সাতটি গোল। তার মধ্যে ফাইনালে দুটি। সেটাই বা কম কি? সবমিলিয়ে কাতারে নতুন রূপকথার জন্ম দিলেন তিনি।

মেসি ক্লাবের হয়ে যতটা সফল, দেশের হয়ে ততটা সফল নন। এই অভিযোগ এত বছর ধরে কুরে কুরে খাচ্ছিল মেসিকে। ২০১৪ সালেও মেসি একার দক্ষতায় দলকে ফাইনালে তুলেছিলেন। কিন্তু ফাইনালে জার্মানির বিরুদ্ধে কার্যত একতরফা খেলেও আর্জেন্টিনা জিততে পারেনি। মেসির সাজিয়ে দেওয়া বল থেকে সামনে একা গোলকিপারকে পেয়েও লক্ষ্যভেদ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন স্ট্রাইকার হিগুয়েন। কিন্তু সেই ব্যর্থতার তকমা সেঁটে যায় মেসির গায়ে। প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাঁকে। রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে, অভিমানে তখন অবসর নিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তখন মেসিকে যারা সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বলেছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন আর্জেন্টিনার বর্তমান কোচ লিওনেল স্ক্যালোনি। একটা সময় তিনি মেসির সঙ্গে আর্জেন্টিনার হয়ে খেলেছেন। এরপর সিদ্ধান্ত বদলান তিনি। আর মেসির একসময়ের সতীর্থ স্ক্যালোনি পরবর্তীকালে আর্জেন্টিনার কোচ হন। আর তখনই বোধহয় কাতার বিশ্বকাপে রূপকথা লেখার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়ে যায় সবার অজান্তে। গত বছর আর্জেন্টিনাকে কোপা আমেরিকা কাপ এনে দিয়েছেন মেসি। কোচ ছিলেন স্ক্যালোনি।

এরপর বিশ্বকাপে কোয়ালিফাইং রাউন্ডে অপ্রতিরোধ্য থাকে আর্জেন্টিনা। তখন থেকেই টিমটাকে সেট করে ফেলেন কোচ। কিন্তু কাতার বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হেরে যখন সবাই মনমরা, তখন মেসিকে কিন্তু একবারের জন্যও বিচলিত লাগেনি। দলকে বলে দেন পোলান্ড এবং মেক্সিকোকে হারাতেই হবে। আর দুটি ম্যাচেই গোল করে, দলকে নেতৃত্ব দিয়ে নকআউট রাউন্ডে তোলেন মেসি। এরপর বাকিটা ইতিহাস।

যতদিন বিশ্বে ফুটবল থাকবে পেলে-মারাদোনার সঙ্গে মেসির নামও উচ্চারিত হবে। শুধু আর্জেন্টিনা বলে নয়, বিশ্বের কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমীর হৃদয় সারা জীবনের মতো স্থান করে নিয়েছেন তিনি। আর বিশ্বকাপ জেতার আবেগঘন মুহূর্তে মেসি জানিয়ে দিলেন তিনি এখনই দেশের জার্সি খুলছেন না। যা শুনে উচ্ছ্বসিত মারাদোনার দেশ।‌ ফুটবল থেকে মেসির আর কিছু পাওয়ার নেই। এখন যে কটা দিন তিনি খেলবেন শুধুমাত্র উপভোগ করবেন ফুটবলটাকে। আর সবুজ গালিচায় অনবদ্য ড্রিবলিংয়ের সঙ্গে তুলির টানে এঁকে যাবেন নিত্য নতুন ছবি। ২০২২ সালের শেষটা বিশ্ব ফুটবলের আরেক বরপুত্র মেসিকে সবদিক দিয়েই ভরিয়ে দিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 4 =