নতুন ইতিহাস সৃষ্টি থেকে এক কদম দূরে মেসি, বিশ্বকাপ জিতলেও মারাদোনাকে ছাপিয়ে যাবেন মেসি?

নতুন ইতিহাস সৃষ্টি থেকে এক কদম দূরে মেসি, বিশ্বকাপ জিতলেও মারাদোনাকে ছাপিয়ে যাবেন মেসি?

25a2c79f5c4169cee5632e2079d77994

নিজস্ব প্রতিনিধি: আর্জেন্টিনার সর্বকালের সেরা তো বটেই, বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার যে দিয়েগো মারাদোনাই, তা নিয়ে কারও সন্দেহ নেই। যেভাবে সম্পূর্ণ একার দক্ষতায় মারাদোনা ১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনাকে মেক্সিকো বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন, তার জন্য যেন কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মাঝমাঠ থেকে একের পর এক বিপক্ষের ফুটবলারদের কাটিয়ে যে গোল মারাদোনা করেছিলেন, সেটিকে ফিফা সর্বকালের সেরা বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। মারাদোনার জন্যেই বিশ্বের কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমী আজ আর্জেন্টিনাকে সমর্থন  করেন। আর মারাদোনা পরবর্তী যুগে গোটা ফুটবল বিশ্বকে নিজের স্কিলের জাদুতে সম্মোহিত করেছেন লিওনেল মেসি। এক বছর হয়ে গিয়েছে মারাদোনা নেই। এই পরিস্থিতিতে কাতার বিশ্বকাপের মঞ্চে মারাদোনার স্মৃতিকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে ফুল ফোটাচ্ছেন মেসি। যে ফুটবল তিনি খেলছেন সেটা যেন তাঁর পক্ষেই শুধু সম্ভব। এই অবস্থায় ইতিহাস সৃষ্টি থেকে আর মাত্র একটি ম্যাচ দুরে রয়েছেন মেসি। বিশ্বকাপ ফাইনালে জিতলে আর্জেন্টিনার হয়ে যে রেকর্ড তিনি করবেন, তা কিন্তু মারাদোনারও নেই। এমনকী সেই রেকর্ড নেই ফুটবল সম্রাট পেলেরও।

পেলে এবং মারাদোনা বিশ্বকাপ জিতলেও তাঁরা কিন্তু কখনও লাতিন আমেরিকার শ্রেষ্ঠ ফুটবল টুর্নামেন্ট কোপা আমেরিকা কাপে জয় পাননি। সেখানে মেসির অধিনায়কত্বে ও নেতৃত্বে গত বছর ব্রাজিলে আয়োজিত কোপা কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আর্জেন্টিনা। ফাইনালে তারা পরাজিত করেছিল ব্রাজিলকেই। এখানেই শেষ নয়। দেশের হয়ে মেসির আরেকটি অনন্য রেকর্ড রয়েছে। সেটি হল ওলিম্পিক গেমসে ফুটবলে দেশকে সোনা এনে দেওয়া। ২০০৮ সালে বেজিং ওলিম্পিক ফুটবল ফাইনালে আর্জেন্টিনা পরাজিত করে নাইজেরিয়াকে। সেই ফাইনাল ম্যাচের পাশাপাশি গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে মেসির ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। এছাড়া মারাদোনার মতো মেসিও অনূর্ধ্ব কুড়ি বিভাগের বিশ্ব ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। এর পাশাপাশি মারাদোনা এবং মেসির ক্লাব ফুটবলে রেকর্ড রীতিমতো চোখধাঁধানো। ইতালির সেরি লিগের নীচের দিকের ক্লাব নাপোলিকে মারাদোনা গোটা বিশ্বের বুকে মর্যাদা এনে দিয়েছেন। দু’বার তিনি নাপোলিকে ইতালি লিগে চ্যাম্পিয়ন করেছেন। ইতালি লিগের পাশাপাশি ‘উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ’ অর্থাৎ ইউরোপের সেরা টুর্নামেন্টেও নাপোলিকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন মারাদোনা। একই ভাবে ক্লাব ফুটবলে মেসির রেকর্ড আগামী দিনে কোনও ফুটবলারের স্পর্শ করা অসাধ্য না হলেও দুঃসাধ্য বলাই যায়। এমন কোনও টুর্নামেন্ট নেই যেটা কিনা মেসি জেতেননি। ব্যালন ডি’অর পর পর জেতা তিনি যেন অভ্যাসে পরিণত করেছেন।

কিন্তু সমস্ত জায়গায় সাফল্য পেলেও বিশ্বকাপ হাতে তুলতে পারেননি মেসি। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে মেসির অসাধারণ পাশ থেকে জার্মানির গোলকিপারকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি স্ট্রাইকার হিগুয়েন। তার মাসুল দিতে হয়েছিল আর্জেন্টিনাকে। জার্মানি পরে একটি সুযোগ পেয়েই সেটিকে কাজে লাগিয়ে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতে নেয়। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপেও অসাধারণ ফর্মে ছিলেন মেসি। কিন্তু হাতে বিশ্বকাপ নিয়ে চুমু খাওয়ার স্বপ্ন তাঁর অধরাই থেকে যায়।

কিন্তু এবার মেসি অনেক বেশি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হেরে যাওয়ার পরেও তিনি ভেঙে পড়েননি। দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, নিজে গোল করেছেন এবং অন্যান্যদের দিয়ে গোল করিয়েছেন। সেমি ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনা যে তৃতীয় গোল করেছে, তার পুরো কৃতিত্বই মেসির। যেভাবে বিপক্ষ ডিফেন্ডারদের ড্রিবল করে স্বপ্নের পাস বাড়িয়েছেন স্ট্রাইকার আলভারেজের দিকে, তাতে তাঁর গোল না করাই কঠিন ছিল। যথারীতি আলভারেজ গোল করতে ভুল করেননি। আর মেসির এই পাস ফের তাঁর ক্লাস বুঝিয়ে দিয়েছে। সব মিলিয়ে ফাইনাল ম্যাচ জেতার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মেসি তথা আর্জেন্টিনা শিবির। সেক্ষেত্রে আর্জেন্টিনার হয়ে মেসি যে নতুন রেকর্ড করবেন, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই কাতারের বুকে বেশি নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারেন কিনা এখন সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *