বিশ্বের সবচেয়ে গরিব কোচ, তিনিই বিশ্বজয়ী, স্ক্যালোনি এক স্ফুলিঙ্গের নাম!

বিশ্বের সবচেয়ে গরিব কোচ, তিনিই বিশ্বজয়ী, স্ক্যালোনি এক স্ফুলিঙ্গের নাম!

110b1fed48e5badbe22a443dd2baf7fc

 কলকাতা: তিনি যেন ফুটবল মাঠের কবীর খান৷ পর্দার কবীর খান ছন্নছাড়া একটি দলকে এক সুতোয় বেঁধে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন৷ ঠিক তেমনই একটা ভাঙাচোরা দলকে সযত্নে নিজের হাতে সাজিয়ে বিশ্ব দরবারে সেরার সেরা করলেন লিয়োনেল স্ক্যালোনি৷ তিনি আর কেউ নন, বিশ্বকাপ জয়ী দেশ আর্জেন্টিনার কোচ৷ 

আরও পড়ুন-বিশ্বকাপ কি সত্যই সোনার তৈরি? এর মূল্য কত? আসল ট্রফি কি দেশে নিয়ে যেতে পারবেন লিয়োরা? 

গোটা বিশ্ব যখন মেসি ম্যাজিকে বুঁদ, তখন চাপা পড়ে গিয়েছে আরও এক লিয়োলেন৷ তিনি ছাপোষা লিয়োনেল, সাদামাটা লিওনেল, সাইডলাইনের ধারে শান্ত হয়ে বসে থাকা ছিপছিপে এক মানুষ৷ যিনি কিনা চাপা পড়ে গিয়েছেন তাঁর নেমসেকের হাজার হাজার ওয়াটের আলোয়৷  তিনি যখন অআর্জেন্টিনার দায়িত্ব নেন, তখন কেউ বুঝতেও পারেনি, তাঁর হাত ধরেই লেখা হবে এক স্বর্ণময় অধ্যায়৷ 

২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার পারফরম্যান্স ছিল অত্যন্ত দুর্বল৷ তা নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি৷ সমর্থকদের হতাশ করে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছিল লিয়োনেল মেসির দেশ৷ সেই সময় আবার আর্জেন্টিনা ফুটবল বোর্ডের ভাঁড়ে মা ভবানী অবস্থা৷ টাকার অভাবে দলকে যে বিদেশী কোচ দেবে, সেই সামর্থও ছিল না আর্জেন্টিনার৷ ঠিক তখন সামান্য বেতনে লিয়োনেল স্ক্যালোনিকে কোচ হিসাবে দায়িত্ব সঁপে বোর্ড৷ কোচ হিসাবে মারাদোনা যা পারেননি, সেরা খেলোয়াড় হয়ে গত পাঁচটি বিশ্বকাপে মেসি যা পারেননি, দায়িত্ব নেওয়ার চার বছরের মধ্যে তা করে দেখালেন কোচ স্ক্যালোনি৷ লিখলেন ইতিহাস৷

২০২১ সালে কোপা আমেরিকা ট্রফির পর ২০২২-এর কাতার বিশ্বকাপ৷ একজন গ্রেট কোচ হওয়ার জন্য আর কী চাই? আর্জেন্টিনা দলের মধ্যে বারুদের অভাব ছিল না৷ প্রয়োজন ছিল আগুনের৷ আর সেই আগুন হয়ে আসেন স্ক্যালোনি৷ তিনি কোচ হয়ে আসার পরই বদলে যায় গোটা দলের চেহারা৷ উদ্দীপনার স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়ে দেন তিনি৷ 

অনেকই হয়তো জানেন না আদ্যন্ত প্রচার বিমুখ এই মানুষটার সঙ্গেই জীবনের প্রথম ম্যাচ খেলেছিলেন লিয়োনেল মেসি৷ সালটা ২০০৫৷ ৬৪ মিনিটের মাথায় রিজার্ভ বেঞ্চে বসে থাকা ১৮ বছরের মেসিকে মাঠে নামন কোচ৷ কিন্তু ১ মিনিটের মধ্যে তাঁকে লাল কার্ড দেখায় রেফারি৷ প্রথম ম্যাচে লাল কার্ড দেখে ভেঙে পড়েছিলেন লিয়ো৷ সেই সময় তাঁকে সান্ততা দিয়েছিলেন এই স্ক্যলোনিই৷

২০১৮ সালে ফ্রান্সের কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় আর্জেন্টিনা৷ সেই সময় একেবারেই ভেঙে পড়েছিল খেলোয়ারদের মনোবল৷ একই সময় প্রচণ্ড আর্থিক সংকটে ভুগতে থাকে আর্জেন্টিনা ফুটবল বোর্ড৷ মোটা টাকার বিনিময়ে বিদেশি কোচ আনবে কী করে? সেই সময় ত্রাতা হয়ে আসেন লিয়োনেল স্ক্যালোনি৷ 

আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের দায়িত্ব পেয়েই স্ক্যালোনি মেসেজ করেন মেসিকে৷ তাঁকে একবার দেখা করার জন্য অনুরোধ জানান৷ এদিকে, দল তখন সদ্য বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছে৷ মন একেবারেই ভালো ছিল না লিয়োও৷ তবুও তিনি স্ক্যালেনির মেসেজের জবাব দেন এবং তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন৷ লিয়োলেন মেসি ও লিয়োনেল স্ক্যালোনির সেই সাক্ষাৎ থেকেই তৈরি হয়ে যায় একটা বন্ডিং৷ এর পর থেকে তাঁরা দু’জনে মিলে ঠিক করতেন টিম কী ভাবে খেলবে, দলে কে কে খেলবেন৷ কী ভাবে একটা টিম গড়ে তুলতে হবে, কী ভাবে গোটা টিমের শক্তিকে ব্যবহার করতে হয়, তা দেখিয়ে দিয়েছিলেন স্ক্যালোনি৷ তাঁর প্রতিটি রণনীতিই যে কাজ করেছিল, তার অন্যতম উদাহরণ ২০২১ সালের কোপা আমেরিকা ট্রফি জয়৷ আর তারপর ২০২২ সালের ফিফা বিশ্বকাপ৷ 

রবিবার যখন লুসাইল স্টেডিয়ামে ঘাম ঝরানো উত্তেজনা, তখন চোখ স্থির স্ক্যালোনির৷ খেলা গড়ায় পেনাল্টি শুটআউটে৷ ফ্রান্সকে যখন ৪-২ গোলে উড়িয়ে দিল আর্জেন্টিনা, তখন নিজেকে আর আটকে রাখতে পারেননি তিনি৷ দু’চোখ বেয়ে নেমে আসে অশ্রুধারা৷ শিশুর মতো কেঁদে ফেলন স্ক্যালোনি৷ ঠিক যেমন কেঁদে ফেলেছিলেন কবীর খান৷

আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের পর থেকেই চারিদিকে মেসি, ডি মারিয়া, এমি মার্টিনেজের জয়জয়কার৷ কিন্তু এই ভিড়ে সবচেয়ে কম যে নামটি শোনা গিয়েছে, তিনি আর্জেন্টিনার সাফল্যের নেপথ্যে অন্যতম কুশীলব লিয়োনেল স্ক্যালোনি৷ যিনি আজীবন চেয়েছেন প্রচারের আলো থেকে নিজের সরিয়ে রাখতে৷ তবে এই গ্রেট কোচকে স্যালুট জানিয়েছে আপামর ফুটবল দুনিয়া৷