মেসি না এমবাপে, কার হাতে উঠবে বিশ্বকাপ? দেশের হয়ে শেষ ম্যাচে নিজেকে উজাড় করে দিতে তৈরি মেসি!

মেসি না এমবাপে, কার হাতে উঠবে বিশ্বকাপ? দেশের হয়ে শেষ ম্যাচে নিজেকে উজাড় করে দিতে তৈরি মেসি!

নিজস্ব প্রতিনিধি: মহারণ ১৮ ডিসেম্বর। কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবল ফাইনালে নামছে বিশ্বের অন্যতম দুই সেরা ফুটবল শক্তিধর দেশ আর্জেন্টিনা এবং ফ্রান্স। ঘটনাচক্রে তার দু’দিন পরেই অর্থাৎ ২০ ডিসেম্বর ফ্রান্সের প্রধান তারকা কিলিয়ান এমবাপের জন্মদিন। বিশ্বকাপ জিততে পারলে জন্মদিনের প্রাক্কালে এমবাপের সেটাই যে সবচেয়ে বড় উপহার হবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। গতবার প্রথম বিশ্বকাপের আসরে নেমেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন এমবাপে। তাঁর খেলা মুগ্ধ করেছিল গোটা বিশ্বকে। তখন তাঁর কুড়ি বছরও পূর্ণ হয়নি। তাতেই তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন সবাইকে। এখন তিনি আরও বেশি পরিণত। বিশ্বকাপে পাঁচটি গোল করে মেসির সঙ্গে যুগ্মভাবে সোনার বুটের লড়াইয়ে রয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা এবারও যদি এমবাপে বিশ্বকাপ জিততে পারেন তাহলে পেলে পরবর্তী প্রজন্মের তিনিই হবেন প্রথম ফুটবলার যিনি এই বিরল কৃতিত্বের অধিকারী হবেন। ১৯৫৮ এবং ১৯৬২ সালে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ী দলে ছিলেন পেলে। মাঝে ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ড জিতলেও ১৯৭০ সালে ফের ব্রাজিল বিশ্বকাপ জেতে। সেই দলেও ছিলেন পেলে। এরপর কোনও দেশ পর পর দু’বার বিশ্বকাপ জেতেনি। তাই বিরল কৃতিত্বের সামনে দাঁড়িয়ে এমবাপে-সহ ফ্রান্সের জিহু, গ্রিজম্যানরা। কাতার বিশ্বকাপে প্রথম থেকেই যে গতিতে, যে তালে, যে ছন্দে ফ্রান্স খেলছে তাতে তারা ফাইনালে যাবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। তাই টুর্নামেন্টে হঠাৎই ‘ডার্ক-হর্স’ হয়ে ওঠা মরক্কো কিন্তু ফ্রান্সকে বিপদে ফেলতে পারেনি। এই অবস্থায় এমবাপেদের ইতিহাস তৈরির সামনে রয়েছে মাত্র একটি ম্যাচ। কিন্তু সকলেই জানেন কাপ আর ঠোঁটের মধ্যে সামান্য দূরত্ব থাকলেও সেটা অনেক সময় এতটাই বড় হয়ে যায় তার যেন নাগাল পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে  ফাইনাল ম্যাচে এমবাপেদের বিশ্বকাপ জয়ের সামনে একজনই কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন, তিনি আর্জেন্টিনার অধিনায়ক তথা বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি। ফরাসি লিগে এমবাপে যে দলে খেলেন সেই প্যারিস সা জাঁ-তেই খেলেন মেসি। সেই মেসির নেতৃত্বে আর্জেন্টিনার দুরন্ত ফুটবলাররা রীতিমতো ফ্রান্সের সামনে যে পাহাড় হয়ে দাঁড়াবেন, সেটা সকলেই জানেন। 

ক্রোয়েশিয়া ম্যাচ জেতার পরই মেসি ঘোষণা করে দিয়েছেন বিশ্বকাপ ফাইনালের পর দেশের জার্সিতে তিনি আর খেলবেন না। যা শুনে কাঁদছেন আর্জেন্টিনার লক্ষ লক্ষ ফুটবলপ্রেমী। মারাদোনার পরেই  আর্জেন্টিনাবাসীর হৃদয়ে রয়েছেন মেসি। প্রয়াত মারাদোনার মতোই মেসিও ঈশ্বরের আরেক বরপুত্র, এটাই তাঁদের বিশ্বাস। যেভাবে সৌদি আরবের কাছে প্রথম ম্যাচ হেরে যাওয়ার পর গোটা দলকে কার্যত একার কাঁধে টেনে নিয়ে ফাইনালে তুলেছেন মেসি, তার জন্য যেন কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। পরপর ম্যাচে গোল করেছেন, সেই সঙ্গে সতীর্থদের ঠিকানা লেখা পাস দিয়ে গোল করিয়েছেন। সেমিফাইনাল ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে সতীর্থ আলভারেজকে তৃতীয় গোলের যে পাসটি মেসি বাড়িয়েছিলেন, তা বিশ্বকাপের ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে। বর্তমানে তিনি একমাত্র শিল্পী ফুটবলার যার শিল্পের ছন্দে ধ্বংস হয়ে যায় বিপক্ষের মাঝমাঠ ও ডিফেন্স। এমবাপে যদি বুলডোজারের গতিতে বাঁ প্রান্ত দিয়ে ছুটে গিয়ে পাস বাড়ান বা গোলে দুরন্ত শট করেন, সেখানে মেসি তাঁর বাঁ পায়ের ছন্দে সবুজ গালিচায় নিখুঁত তুলির টানে ছবি আঁকেন। সেই সঙ্গে তাঁর বাঁ পা থেকে ছুটে আসে বিষ মাখানো সব ফ্রি কিক। সবমিলিয়ে মেসিকে রুখতে না  পারলে ফ্রান্সের ‘ব্যাক টু ব্যাক’ বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে।

মেসি যখন ২০০৫ সালে আর্জেন্টিনার হয়ে যুব বিশ্বকাপ ফুটবল জিতেছিলেন, তখন এমবাপে সাড়ে ছয় বছরের শিশু। সেদিনের শিশু এমবাপেই এখন ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় ভরসা। রবিবারের ফাইনালে মেসির দলের সঙ্গে টক্কর দিতে হবে তাঁকে। একদিকে এমবাপের বল নিয়ে বুলডোজিং দৌড়, অন্যদিকে মেসির মাখনে ছুরি চালানোর  মতো বল নিয়ে বিপক্ষের ডিফেন্ডারদের ডজ করে এগিয়ে যাওয়া, কোনটা সফল হবে ১৮ নভেম্বর ফাইনালে? তাই টানটান উত্তেজনার মধ্যে মেসি-এমবাপেরা নামছেন কাপ জয়ের লক্ষ্যে। শেষপর্যন্ত ফুটবল দেবতা কাকে আশীর্বাদ করেন এখন সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen + 7 =