টানা তিনবার! আইএসএলে ইস্টবেঙ্গলের ব্যর্থতা অব্যাহত! কী কারণে এত খারাপ ফল হচ্ছে লাল-হলুদের?

টানা তিনবার! আইএসএলে ইস্টবেঙ্গলের ব্যর্থতা অব্যাহত! কী কারণে এত খারাপ ফল হচ্ছে লাল-হলুদের?

নিজস্ব প্রতিনিধি: পরপর তিনবার আইএসএল টুর্নামেন্টে ব্যর্থ হল ইস্টবেঙ্গল। গত দু’বার তারা সেমিফাইনালে উঠতে পারেনি। পয়েন্ট তালিকায় শেষের দিকে স্থান হয়েছিল শতাব্দী প্রাচীন এই ক্লাবের। এই বছর নতুন ফরম্যাটে আইএসএল হচ্ছে। সেখানে সুপার সিক্স অর্থাৎ প্রথম ছয়ের মধ্যে যারা থাকবে সেখান থেকেই সেমিফাইনাল ও ফাইনালে উঠবে টিমগুলি। অর্থাৎ সবারই প্রথম লক্ষ্য প্রথম ছটি টিমের মধ্যে জায়গা করে নেওয়া। কিন্তু বুধবার গোয়ার কাছে হারের পর ইস্টবেঙ্গলের সেই সম্ভাবনা কার্যত শেষ হয়ে গেল বলেই মনে করা হচ্ছে। বর্তমানে ১৫টি ম্যাচ খেলে ইস্টবেঙ্গল মাত্র ১২ পয়েন্ট পেয়ে নয় নম্বর স্থানে রয়েছে।  সেখানে লিগ টেবিলের যা অবস্থা তাতে প্রথম ছয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ইস্টবেঙ্গলের নেই বললেই চলে। পরের পাঁচটি ম্যাচ জিতলেও ইস্টবেঙ্গলের ২৭ পয়েন্ট হবে। তাতেও সুপার সিক্সে যাওয়ার আশা তাদের থাকবে না বলাই যায়। কারণ সেক্ষেত্রে অন্য দলগুলির পয়েন্ট ইস্টবেঙ্গলের থেকে বেশি থাকার সম্ভাবনাই বেশি। তাই চলতি আইএসএল টুর্নামেন্ট থেকে ইস্টবেঙ্গল ফের খালি হাতে ফিরছে এটা একপ্রকার ঠিক হয়ে গিয়েছে।

এখন প্রশ্ন এর জন্য দায়ী কে বা কারা? এক কথায় উত্তর হচ্ছে ক্লাব কর্তা, ফুটবলার বা কোচ, কেউই দায় এড়াতে পারেন না। যবে থেকে ইস্টবেঙ্গল আইএসএলে খেলছে তখন থেকেই দেখা যাচ্ছে তাদের স্পনসরার পাওয়া এবং দল গঠন নিয়ে প্রচুর জট জটিলতা দেখা দিচ্ছে। কোয়েসের মতো নামী সংস্থাকেও ইস্টবেঙ্গল ধরে রাখতে পারেনি ক্লাব কর্তাদের সঙ্গে মতান্তরের কারণে। উল্লেখ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপেই ইস্টবেঙ্গল আইএসএল টুর্নামেন্টে খেলতে পারছে এবং দল গঠনের জন্য বিনিয়োগকারী সংস্থা পেয়েছে। কিন্তু ক্লাব কর্তাদের একগুচ্ছ শর্ত বহু সময় মানতে পারেননি বিনিয়োগকারী সংস্থার কর্তারা। তাই চুক্তিপত্রে যখন বিনিয়োগকারী সংস্থা সই করেছে তখন দল গঠনে অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছিল। ততক্ষণে নামী ফুটবলারদের সঙ্গে চুক্তি সেরে নিয়েছে অন্যান্য ক্লাবগুলি। পরপর তিনবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। কিন্তু এরপরেও যদি ইস্টবেঙ্গল জার্সির সম্মানের কথা ভেবে ফুটবলারা নিজেদের উজাড় করে দিতে পারতেন তাহলে সমস্যা মিটে যেত। দেখা যাচ্ছে ইস্টবেঙ্গলের  জার্সি পরে যারা খেলছেন তাঁদের অধিকাংশের সেই যোগ্যতাই নেই শতাব্দীপ্রাচীন দলটির হয়ে খেলার। একইভাবে নিজের দায় এড়াতে পারেন না ইস্টবেঙ্গলের কোচ স্টিভন কনস্ট্যান্টাইন।

একটা সময় তিনি ভারতীয় দলের কোচ ছিলেন। কিন্তু যে দল তিনি হাতে পেয়েছেন তাকে একসূত্রে গাঁথতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। দল গঠনে সামান্যতম মুন্সিয়ানা দেখাতে পারেননি ইস্টবেঙ্গলের কোচ। বদলি খেলোয়াড় নামানোর ক্ষেত্রেও কোনও চমক দেখাতে পারেননি। সদ্য গোয়ার বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গল যখন ৪-২ গোলে পিছিয়ে তখন দেখা যাচ্ছে তিনি ডিফেন্সের খেলোয়াড় বদল করছেন। তবে কি তখন গোল শোধ নয়, যাতে দল আরও গোল না খায় সেই চেষ্টা করতে ব্যস্ত ছিলেন তিনি? ইস্টবেঙ্গলের অতীত রেকর্ড বলছে দল এক বা দু’গোলে পিছিয়ে গেলে সেই ম্যাচে খোঁচা খাওয়া বাঘের মতো হয়ে যেত তারা। দেশীয় বা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে এমন বহু নজির রয়েছে যেখানে ইস্টবেঙ্গল পিছিয়ে পড়েও প্রবল ভাবে ম্যাচে ফিরে এসে জয়লাভ করে মাঠ ছেড়েছে। কিন্তু গত তিনটি আইএসএল টুর্নামেন্টের ফলাফল বলছে ইস্টবেঙ্গল খোঁচা খাওয়া বাঘ নয়, তারা এখন যেন কাগুজে বাঘে পরিণত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত আইএসএল টুর্নামেন্টে এটিকে মোহনবাগানের সঙ্গে যতবার দেখা হয়েছে প্রতিবারই ইস্টবেঙ্গলকে হার স্বীকার করতে হয়েছে। তাতে সমর্থকদের মনের অবস্থা কী জায়গায় রয়েছে তা আর নতুন করে বলে বোঝাবার কিছু নেই। মূলত দল গঠনে ব্যর্থতার জন্যই ইস্টবেঙ্গল বারবার আইএসএলে মুখ থুবড়ে পড়েছে। তাই সভ্য সমর্থকদের প্রশ্ন, প্রতিবার দল গঠন নিয়ে এত টালবাহানা কেন করা হচ্ছে? কেন নিকৃষ্ট মানের বিদেশিদের ইস্টবেঙ্গলে জার্সি পরিয়ে দেওয়া হচ্ছে? কেন টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আরও বেশি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলল না লাল-হলুদ? প্রশ্ন শেষ হওয়ার নয়। কিন্তু তার যথাযথ উত্তর পাবেন না সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে। তাই পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা দেশ বা বিশ্বজুড়ে যে কোটি কোটি ইস্টবেঙ্গল সমর্থক রয়েছেন তাঁদের হৃদয় আজ ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে দলের শোচনীয় পারফরম্যান্সের কারণে। এই ছবিটা কি ভবিষ্যতে বদলাবে, নাকি এমনটাই চলতে থাকবে? আগামী মরশুম শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত এই বিষয়টি নিয়ে চর্চা কিন্তু চলতেই থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *