বিশ্বকাপ ফাইনাল-সহ একাধিক ম্যাচে রেফারিং নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক! ফিফার রেফারিং নিয়ে ক্ষুব্ধ একাধিক দেশ!

বিশ্বকাপ ফাইনাল-সহ একাধিক ম্যাচে রেফারিং নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক! ফিফার রেফারিং নিয়ে ক্ষুব্ধ একাধিক দেশ!

দোহা: ফুটবলে রেফারি আর ক্রিকেটে আম্পায়ার, বহুবার তাঁরা ‘ভিলেন’ হয়েছেন খেলোয়াড় বা সমর্থকদের কাছে। বহু সময় তাঁদের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি খেলোয়াড় থেকে সমর্থকরা। কাতার বিশ্বকাপের আসরেও বেশ কয়েকটি ম্যাচে রেফারির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ফুটবলার থেকে দেশগুলির সমর্থকরা। অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে আয়োজিত হয়েছে কাতার বিশ্বকাপ। কোথাও সামান্যতম বিশৃঙ্খলা দেখা যায়নি। কিন্তু বেশ কয়েকটি ম্যাচে রেফারিং নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সমালোচকরা। তার মধ্যে রয়েছে হাইভোল্টেজ আর্জেন্টিনা-ফ্রান্সের ফাইনাল ম্যাচও। সেদিন ১২০ মিনিটের টানটান উত্তেজনার পর ৩-৩ ফলাফলে ড্র হয় ম্যাচ। এরপর ম্যাচের নিষ্পত্তি হয় টাইব্রেকারে। কিন্তু সেই ম্যাচে রেফারির কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

ফাইনালে আর্জেন্টিনার ফরওয়ার্ড দি মারিয়াকে বক্সে ট্রিপ করেন ফ্রান্সের দেম্বেলে। তাতে রেফারি সিমান মার্চেনিয়াক  পেনাল্টির নির্দেশ দেন। যদিও ফুটবল বিশেষজ্ঞদের একাংশের ব্যাখ্যা, সেটি ততটা কড়া ট্যাকল ছিল না যাতে পেনাল্টি দিতে হবে। আবার একই ভাবে ফ্রান্সের এমবাপে দ্বিতীয় গোল করার আগে দেখা যায় মেসিকে হাত দিয়ে ধাক্কা মেরে ফ্রান্সের এক খেলোয়াড় বলটি নিয়ে এগিয়ে পাশ করেছিলেন। সেই আক্রমণ থেকেই গোলটি হয়। সেখানে মেসিকে হাত দিয়ে ধাক্কা মারার পর রেফারি যদি ফাউল দিতেন তাহলে ফ্রান্স তাদের দ্বিতীয় গোলটি পায় না। এমনকী আর্জেন্টিনা ৩-২ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর ফ্রান্সের এক ফুটবলারের শট আর্জেন্টিনার মন্টিয়েলের হাতে লাগার পর রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দেন।

ফুটবলের নিয়ম হচ্ছে ইচ্ছাকৃতভাবে বলে হাত না লাগালে পেনাল্টি হয় না। অর্থাৎ নিয়ম অনুযায়ী হাত বলে লাগলে হ্যান্ডবল, সেখানে বল এসে হঠাৎই হাতে লাগলে হ্যান্ডবলের নির্দেশ রেফারি নাও দিতে পারেন পরিস্থিতি বুঝে। তাই রেফারির এই সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া একাধিক ক্ষেত্রে আর্জেন্টিনা এবং ফ্রান্স ফ্রি-কিক পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে রেফারির সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে, এমনটাও মনে করছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞদের একাংশ। এভাবেই লুসেইন স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স ম্যাচে রেফারিংয়ের দায়িত্ব সামলানো পোল্যান্ডের সিমান মার্চেনিয়াকের কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।  

এর আগে কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ড ম্যাচে একটি লাল কার্ড-সহ ১৬ জনকে হলুদ কার্ড দেখিয়েছিলেন রেফারি মাতেউ লাহোজে। নেটপাড়ায় তাঁকে ‘কার্ড বাবা’ বলেও অনেকেই কটাক্ষ করতে শুরু করেছিলেন!  আর্জেন্টিনার আট এবং নেদারল্যান্ডের সাতজনকে হলুদ কার্ড দেখিয়েছিলেন এই ‘কার্ড বাবা’ রেফারি। এছাড়া নেদারল্যান্ডের একজনকে লালকার্ড দেখিয়েছিলেন তিনি। রেফারির সেই সিদ্ধান্তগুলি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

একই ভাবে ফ্রান্স বনাম মরক্কোর সেমিফাইনাল ম্যাচে রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মরক্কোর সমর্থকরা। মরক্কোর অভিযোগ তাদের ন্যায্য পেনাল্টি দেননি রেফারি সিজার রামোস। মরক্কোর সমর্থকদের  অভিযোগ ওই রেফারি ফ্রান্সকে কিছুটা হলেও টেনে খেলিয়েছিলেন। এমনকী জাপান তাদের যে দ্বিতীয় গোলে স্পেনকে হারিয়ে দেয় সেটি নিয়েও বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে। গোলের আগে বলটি গোললাইনের বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিল বলে ফুটবল বিশেষজ্ঞদের দাবি। রেফারিদের এমন বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক দেখা যায় কাতার বিশ্বকাপে।

তবে এর মধ্যেও কাতার বিশ্বকাপে ইতিহাস রচিত হয়েছে  যখন মহিলা রেফারি ম্যাচ পরিচালনা করেছেন। রক্ষণশীল কাতারে বিশ্বকাপের ম্যাচ পরিচালনা করতে দেখা যাবে  মহিলা রেফারিকে, এ খবর পাওয়ার পরই বিশ্বজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছিল। অবশেষ মেক্সিকো বনাম পোল্যান্ড ম্যাচে চতুর্থ রেফারির দায়িত্বে ছিলেন ফ্রান্সের স্টেফানি ফ্লেপপার্ট। এভাবেই কাতারে নতুন ইতিহাস রচিত হয়েছে। এই বিশ্বকাপে ৩৬ জন মূল রেফারি ছিলেন। তাঁদের মধ্যে তিন জন ছিলেন মহিলা রেফারি। তাঁরা হলেন ফ্রান্সের  ফ্লেপপার্ট ও রুয়ান্ডার সালিমা মুকাসাঙ্গা, এবং জাপানের ইয়োসিমা ইয়ামাসিতা। এছাড়া সহকারি হিসেবে আরও তিনজন মহিলা রেফারি ছিলেন। এভাবেই কাতার বিশ্বকাপে নয়া ইতিহাস রচিত হয়েছে।

একদিকে নতুন ইতিহাস রচনা, অন্যদিকে রেফারিং নিয়ে বিতর্ক! সব মিলিয়ে শুরুটা ভালো হলেও শেষের অংশটা খুব একটা চমৎকার ঘটাতে পারলেন না ফিফার রেফাররা৷ আপনার কি মনে হয়, ফাইনাল ম্যাচে কি স্বচ্ছ ছিল ফিফার রেফারিং? কমেন্টে জানাতে পারেন আপনার একান্ত নিজস্ব মতামত!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *