পৃথিবীর জীবমণ্ডলে প্রাণীবৈচিত্র্য অন্তহীন। কিন্তু জীববিজ্ঞানীরে যুগ যুগ ধরে তাদের পর্ববিভাজন ও তালিকা নির্মাণ করে এই বৈচিত্র্যকে বোঝার চেষ্টা করে আসছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও বহু কিছুই যে তাঁদের অগোচরে থেকে গিয়েছে, তা বিজ্ঞানীরা নিজেরাই স্বীকার করেন।
বিজ্ঞান বিষয়ক গণমাধ্যম ‘লাইভসায়েন্স’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, গত দশ বছর ধরে ‘ডিপ কার্বন অবজারভেটরি’ নামের এক গবেষণা প্রকল্প ‘সাবটেরেনিয়েন বায়োস্ফিয়ার’ বা ভূগর্ভস্থ জীবমণ্ডল সম্পর্কে তত্ত্ব-তালাশ করে আসছে। ৫২টি দেশ থেকে ১০০০-এরও বেশি বিজ্ঞানী এই প্রকল্পে নিযুক্ত রয়েছেন।
সম্প্রতি এই প্রকল্পের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ভূগর্ভে রয়েছে আর এক জীবমণ্ডল, যা তাঁদের মতে ‘ডিপ বায়োস্ফিয়ার’। অন্ধকারময় সেই জগতে বিরাজ করছে এমন এক প্রাণীজগৎ, যার সম্পর্কে তেমন কোনও ধারণাই পৃথিবীর মানুষের নেই। ‘ডিপ কার্বন অবজারভেটরি’-র বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই অজানা জগৎটি পৃথিবীতে প্রাণের উন্মেষের কাল থেকেই সক্রিয়। তাঁরা এই জগৎটিকে বলছেন ‘সাবটেরেনিয়ান গ্যালাপাগোস’। প্রশান্ত মহাসাগরে বিষুবরেখা বরাবর অবস্থিত প্রাণীবৈচিত্র্যে ভরপুর গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গেই তুলনা করেছেন তাঁরা এই প্রাণীমণ্ডলের। প্রসঙ্গত, এই দ্বীপপুঞ্জেই প্রাণীজগতের বিবর্তন লক্ষ করেছিলেন চার্লস ডারউইন। সেই দ্বীপপুঞ্জের মতোই এই ভূস্তরে বাস করে অগণিত অজানা প্রাণী।
বিজ্ঞানীদের মতে, ভূগর্ভস্থ বাস্তুতন্ত্র চরিত্রগত ভাবে আমাদের চেনা ইকোসিস্টেমের থেকে আলাদা। এই ইকোসিস্টেমের সম্পর্কে তথ্য আহরণ আমাদের আরও বেশি সমৃদ্ধ করবে। এই সূত্র থেকেই জানা যেতে পারে, পৃথিবীতে প্রাণের আবির্ভাবের রহস্য। তবে এই প্রাণীজগৎ একান্ত ভাবেই আণুবীক্ষণিক। খালি চোখে এই জগৎকে দেখা যাবে না। এখনও পর্যন্ত আহরিত তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, এই প্রাণীমণ্ডল প্রায় ৫০০ মিলিয়ন কিউবিক মাইল জুড়ে রয়েছে, যা পৃথিবীর মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রায় দ্বিগুণ। গবেষকরা জানাচ্ছেন, আমাদের পায়ের নীচে মাত্র তিন মাইল গভীর থেকেই শুরু হয়েছে এই জগৎ। ‘ডিপ কার্বন অবজারভেটরি’ জানাচ্ছে, এই জগতের রহস্যের কাছে পৃথিবীর উপরিতলের প্রাণীজগৎ কিছুই নয়।