নয়াদিল্লি: আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা৷ আজ মধ্যরাতেই ইতিহাসের মুখোমুখি হতে তৈরি চন্দ্রযান-২৷ চাঁদের বুকে দখল নিতে তৈরি ভারত৷ এখনও পর্যন্ত সবকিছুই ঠিকঠাক চলছে বলে জানিয়েছে ইসরো৷ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করবে বিক্রম৷ আজ রাত ১ টা ৪০ থেকে একটা ১টা ৫৫ মিনিটের মধ্যে চাঁদের মাটিতে পা রাখবে ল্যান্ডার বিক্রম৷ সেখান থেকেই বেরিয়ে আসবে রোভার প্রজ্ঞান৷ কিন্তু জানেন কেন চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযান নামানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরো? সেখানে কী কী সম্ভাবনা রয়েছে?
বিশ্বের এই প্রথম কোন দেশ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্র অভিযান করতে চলেছে৷ মূলত এই জায়গাটি বেছে নেয়ার পেছনে বেশ কিছু কৌতুহল কাজ করছে ইসরোর বিজ্ঞানীদের মধ্যে৷ মূলত চাঁদের এই দক্ষিণ মেরুতে সূর্যের আলো ঠিকমতো এসে পৌঁছায় না৷ দক্ষিণ মেরুর এমন কিছু বেশকিছু গহ্বর রয়েছে যেখানে চার হাজার কোটি বছর ধরে সেখানে সূর্যের আলো পৌঁছায়নি৷ ফলে সেখানে খনিজ পদার্থ থেকে শুরু করে জলের বিরাট ভাণ্ডার থাকতে পারে৷ যেহেতু ওই অঞ্চলে সূর্যের আলো পৌঁছয় না, ফলে, চাঁদের জন্মলগ্নে যেমন অবস্থান ছিল, ঠিক তেমনই অবস্থা থাকতে পারে সেখানে৷
ওই অংশের কিছুটা সমতল জমি বেছে নিয়ে লম্বালম্বিভাবে চাঁদের বুকে আজ পা রাখবে ল্যান্ডার বিক্রম৷ সেখান থেকে রোভার প্রজ্ঞান৷ ২৭ কেজির স্বয়ংক্রিয় প্রজ্ঞান গোটা দক্ষিণ মেরু প্রায় ১৪ দিনের কাছাকাছি সময়ে বেশি সময় ধরে প্রদক্ষিণ করবে৷ সেখান থেকে real-time তথ্য ও ছবি ইসরোকে পাঠাবে প্রজ্ঞান৷ কারণ, ওই ১৪ দিন দক্ষিণ মেরুতে সূর্যের আলো থাকবে৷ সূর্যের আলোতে ছ’চাকার ওই স্বয়ংক্রিয় প্রজ্ঞান যান চলাচল করবে৷ তথ্য সংগ্রহ করে ইসরোয় পাঠাবে৷ মূলত ভারতের এই দক্ষিণ মেরু অভিযান ঘিরে তাকিয়ে আছে নাসা৷ ভারতের এই অভিযান সফল হওয়ার পর খুব সম্ভবত নাসাও ২০২৪ এরমধ্যে সেখানেই যন্ত্রপাতি পাঠাতে চলেছে বলে খবর৷ কেননা চাঁদের বুকে এমন কিছু খনিজ পদার্থ আছে যা গোটা পৃথিবীর বিদ্যুৎ শক্তি জুগিয়ে দিতে পারে৷ ফলে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সেই সমস্ত খনিজ পদার্থের অস্তিত্ব থাকার সম্ভবনা থেকছে৷ চতুর্থ দেশ হিসেবে ভারত চাঁদে পা রাখতে চললেও দক্ষিণ মেরুতে বিশ্বে প্রথম ভারত তার অস্তিত্ব জানান দেবে৷
কিন্তু, জানেন এই অভিযান করতে কত টাকা খরচ করেছে ভারত? জানা গিয়েছে, ১৩০ কোটির দেশবাসীর প্রত্যাশা নিয়ে চাঁদের বুকে পা রাখতে চলেছে ভারত৷ এই প্রথম ভারতের তৈরি কোনও যান চাঁদের বুকে পা রাখবে৷ গত ২২ জুলাই দেশবাসীর স্বপ্ন বুকে নিয়ে চন্দ্রযান-২ পাড়ি দিয়েছে চাঁদের উদ্দেশ্যে৷ ভারতের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র শ্রীহরিকোটা থেকে রওনা হয়ে প্রায় ২৩ দিনের মাথায় গত ১৪ আগস্ট পৃথিবীর কক্ষপথ ছেড়ে চাঁদের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ইসরোর তৈরি চন্দ্রযান-২৷ এরপর ধীরে ধীরে প্রবেশ করে চাঁদের কক্ষপথে৷ গত ১০ সেপ্টেম্বর চন্দ্রযান-২ অরবিট থেকে সফলভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ল্যান্ডার বিক্রম৷ ৪ সেপ্টেম্বর চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করে বিক্রম৷ সেখানে চাঁদের কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে আজ রাত ঠিক ১টা ৪০ থেকে ১টা ৫৫ মিনিটের মধ্যে চাঁদের বুকে পা রাখার কথা ল্যান্ডার বিক্রমের৷ সেখান থেকেই বেরিয়ে আসবে রোভার প্রজ্ঞান৷ আর সেখান থেকেই তুলে আনবে চাঁদের অজানা তথ্য, ছবি, আর একরাশ রহস্যের সন্ধান৷ কিন্তু এই প্রক্রিয়া শেষ করতে ভারত সরকারকে কম টাকা খরচ করতে হয়নি৷ জানা গিয়েছে, ৯৭৮ কোটি টাকা খরচ করে এই অভিযান শুরু করেছে ইসরো৷ তবে, ভারতীয় অর্থনীতিতে ৯৭৮ কোটি টাকার বিশাল অংকের মনে হলেও আদতে চন্দ্র অভিযানে অন্যান্য দেশের খরচের তুলনায় প্রায় এক-চতুর্থাংশ কম খরচে চাঁদের বুকে রওনা হয়ে গিয়েছে ভারতের মহাকাশযান৷ আর তা দেখেই এখন স্তম্বিত নাসার গবেষকরা৷
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চতুর্থ দেশ হিসেবে আজ চাঁদের বুকে পা রাখতে চলেছে ভারত৷ ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ আজ ইসরোর দপ্তরে উপস্থিত থাকবেন খোদ প্রধানমন্ত্রী৷ মোদির সঙ্গে ইসরোর ঐতিহাসিক মুহূর্তের মুহূর্তের সাক্ষী থাকবে বাংলার দুই পড়ুয়া সহ-৭৫ পড়ুয়া৷ ইতিহাসের মুখোমুখি হওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী আজ টুইটারে জানিয়েছেন, দেশের ১৩০ কোটি জনতা স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে আজ৷ ভারতের এই চন্দ্র অভিযান ভারতের প্রত্যেকটি নাগরিককে গর্বিত করে তুলবে৷ ভারত যখন চাঁদের বুকে পা রাখার প্রহর গুনছে, ঠিক তখনই চাঁদের বুকে এক অদ্ভুত জাতীয় বস্তু খুঁজে পেয়েছে চিন৷ চীনের পাঠানো চন্দ্রযান চ্যাং ৪-এর পাঠানো তথ্যে চাঁদের বুক থেকে জেলি জাতীয় কিছু বস্তুর সন্ধান পেয়েছে৷ তবে, বিষয়ে এখনও পর্যন্ত বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি চায়নার প্রশাসন৷
অন্যদিকে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে এই প্রথম বিশ্বের কোন দেশ হিসেবে ভারত চাঁদের বুকে পা রাখবে৷ চাঁদের দক্ষিণাংশের সমতল জমি চিহ্নিত করে বিক্রম সেখানে পদার্পণ করবে৷ এই মুহূর্তে চন্দ্রযান ২ ল্যান্ডার চাঁদের মাটি থেকে প্রায় দেড়শ কিলোমিটার উপরে৷ ৫০০-৬০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে ছুটে চলেছে যন্দ্রযান৷ ইসরো সূত্রে খবর, ল্যান্ডারের গতিপথ ধীরে ধীরে কমিয়ে আজ রাতেই চাঁদের বুকে নামানো হবে৷ ফলে কক্ষপথে ঘুরতে থাকা ল্যান্ডারের গতি ধীরে ধীরে কমিয়ে চাঁদের বুকে নামানো এখন সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ৷ অগ্নিপরীক্ষা৷ কারণ, চাঁদের মাটিতে ল্যান্ডার নামানোর সময় যদি কোন ভূল-ত্রূটি ঘটে তাহলে অভিযান ব্যর্থ হতে পারে৷ তবে ল্যান্ডাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নামানোর পছে হাঁটছেন বিজ্ঞানীরা৷ ইতিমধ্যেই ল্যান্ডারকে চাঁদের বুকে নামানোর বিষয়ে প্রোগ্রামিং সেট করে দেওয়া হয়েছে৷ তাতে ল্যান্ডের গতি কমিয়ে ধীরে ধীরে চাঁদের বুকে নামিয়ে আনা এখন প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য৷ চাঁদের বুকে পা রাখার ১৫ মিনিট পর চাঁদের মাটি থেকে ছবি ও তথ্য পাঠাতে শুরু করবে রোভার রোভার প্রজ্ঞান৷ রোভার প্রজ্ঞানের চাকার নীচে থাকবে অশোক স্তম্ভের প্রতীক ও ইসরোর লোগো৷