কলকাতা: ইসরোর প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার দু’দিন পর বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল পশ্চিমবঙ্গ সমগ্র শিক্ষা মিশন৷ দু’দিন পর ইসরোর প্রতিযোগিতার বিজ্ঞপ্তি জারি ঘিরে তৈরি হয়েছিল তুমুল বিতর্ক৷ দেরিতে বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ায় প্রতিযোগিতা সুযোগ হারিয়েছিলেন বাংলার অধিকাংশ পড়ুয়া৷ কিন্তু, এবার সেই বিতর্ককে পিছনে ফেলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পাশে বসে ইসরোর চন্দ্রযান অভিযান দাখার সুযোগ ছিনিয়ে এনে নজরি গড়ল বর্ধমানের নবম শ্রেণির ছাত্রী৷ গোটা দেশজুড়ে ৬০ জন সফল পড়ুয়াকে এই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে বলে ইসরোর তরফে জানানো হয়েছে৷
স্কুলশিক্ষকের মুখ থেকে প্রতিযোগিতার কথা শুনে অনলাইনে পরীক্ষায় বসেছিলেন বর্ধমানের বেলগ্রামের দিল্লি পাবলিক স্কুলের নবম শ্রেণি ছাত্রী ইউসরা আলম৷ পরীক্ষায় সফল হয়ে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পাশে বসে চন্দ্রযান অভিযান ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে চলেছেন বাংলার এই পড়ুয়া৷
ইতিমধ্যেই ইসরোর তরফে ইমেল ও ফোন করে বর্ধমানের ওই ছাত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷ ইসরোর তরফে আগামী ৬ সেপ্টেম্বর অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা ওই পড়ুয়া ও পরিবারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷ উপস্থিত থাকার কথা জানানো হয়েছে৷ যাতায়াত থেকে খাওয়া-দাওয়া, থাকার ব্যবস্থা করেছে ইসরো কর্তৃপক্ষ৷
জানা গিয়েছে, স্কুলশিক্ষকের মুখ থেকে ইসরোর প্রতিযোগিতার কথা শুনে বাড়িতে এসে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন ওই ছাত্রী৷ মাত্র ১০মিনিটের মধ্যে কুড়িটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সাফল্য ছিনিয়ে আনে ওই ছাত্রী৷ মায়ের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে অনলাইনে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ইউসরা আলম৷ পরীক্ষা দেওয়ার দিন কয়েকের মধ্যেই গত মঙ্গলবার ওই ছাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে ইসরো৷ ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে বাংলার এই ছাত্রীর সাফল্যের কথা জানানো হয়৷ একই সঙ্গে তাঁদের উপস্থিত থাকার জন্য পাঠানো হয় আমন্ত্রণপত্র৷
ইসরোর তরফে আমন্ত্রণপত্র পেয়ে উচ্ছ্বসিত গোটা পরিবার৷ গর্বিত স্কুল৷ ইতিমধ্যেই ইসরো যাওয়ার জন্য প্রস্তুতিও শুরু করে ফেলেছেন ইউসরা আলমের পরিবার৷ ইসরোর প্রতিযোগিতায় সফল হওয়ার পর ওই ছাত্রী জানিয়েছেন, আমি ভেবেছিলাম সফল হব না৷ কিন্তু শিক্ষকের মুখ থেকে প্রতিযোগিতার কথা শুনে বাড়িতে এসে মায়ের মোবাইল ফোন থেকে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়৷ এই বিষয়ে কাউকে কিছু বলিনি৷ ভেবেছিলাম হয়তো কিছুই হবে না৷ কিন্তু আচমকা ফোন পেয়ে আমি উচ্চসিত৷ আমার বাবা-মাও গর্ববোধ করছেন৷ ইসরোর এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর চন্দ্রযানের চাঁদের বুকে ঐতিহাসিক অবতরণের মুহূর্ত প্রধানমন্ত্রীর পাশে বসে দেখার সুযোগ পেতে চলেছেন বাংলার এই নবম শ্রেণীর ছাত্রী৷
বাংলার এই ছাত্রীর অসামান্য সাফল্য গোটা রাজ্যকে গর্বিত করলেও প্রতিযোগিতার বিজ্ঞপ্তি গিয়ে আগেই বিতর্ক দানা বাঁধে৷ জানা গিয়েছে, গত ১০ আগস্ট থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত ইসরোর উদ্যোগে একটি কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়৷ সেখানে অষ্টম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির পড়ুয়ারা অংশ নেওয়ার কথা জানানো হয়৷ অনলাইনে এই প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্ত সফল পড়ুয়ারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চন্দ্রযান-২ এর চাঁদের বুকে পা রাখার ঐতিহাসিক মুহূর্তের সরাসরি দেখার সুযোগ পেতেন৷ কিন্তু অভিযোগ উঠছে, সমগ্র শিক্ষা মিশন গত ২৭ আগস্ট চিঠি পাঠিয়েছে প্রতিযোগিতার বিজ্ঞপ্তি জারি করে৷ প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার দু’দিন পর৷ কিন্তু প্রতিযোগিতা শেষ হয়ে যাওয়ার দু’দিন পর কেন বিজ্ঞপ্তি জারি হল? প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষকদের একাংশ৷ গোটা ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক ও পড়ুয়াদের সঙ্গে বঞ্চনার অভিযোগ তোলা হয়েছে৷