আলোর গতিতে ছুটবে মহাকাশযান, পৌঁছে যাবে আশপাশের নক্ষত্রমণ্ডলে

আলোর গতিতে ছুটবে মহাকাশযান, পৌঁছে যাবে আশপাশের নক্ষত্রমণ্ডলে

কলকাতা: যা এতদিন ছিল কল্পনার অতীত, তাই এবার আসবে কাছে৷ আলোর পালে ভর করে ছোটা যাবে মহাকাশে! কল্পনার বাইরে থাকা দূরত্বকে হয়তো কাছে এনে দেবে আলো। মানুষের আয়ুষ্কালে যে দূরত্বে পৌঁছনে একেবারেই অসম্ভব ছিল, তাকেই হয়তো সম্ভব করে তুলবে আলো। 

আরও পড়ুন- উষ্ণায়নের বিষে জন্মাচ্ছে অপরিণত শিশু, বাড়ছে জটিল রোগ, কমছে প্রজনন ক্ষমতা: রিপোর্ট

বিজ্ঞানীরা বলছেন, অদূর ভবিষ্যতেই হয়তো প্রায় আলোর গতিতে ছোটা যাবে মহাকাশে। আলোর থেকে পাওয়া শক্তিতে ভর করেই হয়তো দুই-এক দশকের মধ্যে ছোঁয়া যাবে চার আলোকবর্ষ দূরে থাকা প্রতিবেশী নক্ষত্রমণ্ডল প্রক্সিমা সেনটাওরিকে। যেখানে পৌঁছতে এখনকার মহাকাশযানগুলির কম করে সময় লাগত ৪০ হাজার বছর। 

বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের বিস্তার আজও এক রহস্য৷ যেখানে পৌঁছতে ৪০ হাজার বছর সময় লাগত, সেই দূরত্ব যাতে মানুষ আয়ুষ্কালের মধ্যেই পাড় করতে পারে, সেই চেষ্টাই চালাচ্ছিলেন মহাকাশবিজ্ঞানী ও মহাকাশ প্রষুক্তিবিদরা। গত কয়েক শতাব্দী ধরে চলছিল নিরন্তর গবেষণা৷ তবে তাঁদের নিরলস সাধনা ফলপ্রসূ হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আলো৷ আলোর ধর্ম। আলোর কণার প্রায় ভরশূন্যতা। আলোর গতিতে ছুটতে পারলে এক রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা হত৷ পৌঁছে যাওয়া যেত ভাবনারও বাইরে থাকা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অজানা, অচেনা জগতে।

বর্তমানে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের হাতে যে সকল মহাকাশ যান রয়েছে, তা দিয়ে কল্পনাতীত দূরত্বে পৌঁছনো এক কথায় অসম্ভব৷  কারণ এই সকল মহাকাশযানগুলি ছুটি চলে সৌরশক্তির ভরসায়৷ এছাড়াও যে সব জ্বালানি ব্যবহার করা হয়, তা দিয়ে মানুষের আয়ুষ্কালে সর্বাধুনিক মহাকাশযানের পক্ষেও আমাদের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্রমণ্ডলকে ছোঁয়া কোনও ভাবেই সম্ভব নয়৷ 

কিন্তু যদি সেই মহাকাশযানগুলি আলোর ঠেলায় ছুটতে পারে, এবং সেগুলির গতি যদি লোর গতিবেগের (সেকেন্ডে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল) মাত্র ২০ শতাংশেও পৌঁছতে পারে, তা হলেও  ব্রহ্মাণ্ডে আমাদের কাছেপিঠের বহু অজানা রহস্য উন্মোচিত হবে৷ কিন্তু সমস্যা হল, আলোর কণা ফোটন প্রায় ভরশূন্য৷ ফলে তার ঠেলার জোরও খুব কম। সেই জোর প্রয়োজনীয় মাত্রায় নিয়ে যেতে গেলে আলোর কণার ঝাপটায় মহাকাশযানের আবরণটাই হয়তো ঝলসে যাবে।  

এই সকল সমস্যার সমাধান সূত্র খুঁজে বার করল দুটি গবেষণা৷ একটি গবেষণা হয়েছে আমেরিকার পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। অন্যটি, লস অ্যাঞ্জেলসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই দু’টি গবেষণাপত্র একসঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে মহাকাশ প্রযুক্তি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক গবেষণা পত্রিকা ‘ন্যানো লেটার্স’-এ। 

সমস্যা সমাধানে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তিবিদরা এমন দু’টি পদার্থের স্তর দিয়ে মহাকাশযানের আবরণ বানানোর পথ দেখিয়েছেন যে সেই আবরণে প্রচণ্ড জোরাল লেসার রশ্মি এসে পড়লেও তা ঝলসে উঠবে না। সেই দু’টি যৌগ হল মলিবডেনাম ডাইসালফাইড ও সিলিকন নাইট্রাইড।

অন্যদিকে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তিবিদরা মহাকাশযানের এমন আকার ও আকৃতির তৈরি করতে পেরেছেন যাতে খুব সহজেই লেসার রশ্মির ঠেলার জোরও বাড়ানো সম্ভব হবে৷ আকারে খুব ছোট বা ওজনে খুব হালকা হওয়ায় মহাকাশে পাড়ি দিয়ে বিপদে পড়বে না মহাকাশযানগুলি।