‘ডার্ট’-এর প্রহারে কুপোকাত দানব গ্রহাণু, পৃথিবীকে বাঁচাতে ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ বানাল নাসা

‘ডার্ট’-এর প্রহারে কুপোকাত দানব গ্রহাণু, পৃথিবীকে বাঁচাতে ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ বানাল নাসা

ae7a3a7ccce2189c042fb2c043d12773

নিউইয়র্ক: মহাকাশে লুকিয়ে মহারহস্য৷ অন্তহীন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে কখন কোথায় কী ঘটে চলেছে, তা ঠাওর করা বড়ই মুশকিল৷ তবে মহাকাশবিজ্ঞানীরাও ক্রমাগত নজর রেখে চলেছে গ্রহ-নক্ষত্রের গতি প্রকৃতির উপরে৷ এরই মাঝে সুবিশাল চেহারা নিয়ে হামেশাই পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে গ্রহাণুরা৷ কখনও আবার ধেয়ে আসে আগুনে ধূমকেতু। তবে তাঁদের নিয়ে চিন্তা নেই৷ কারণ, মহাজাগতিক এইসব বস্তুদের ‘আক্রমণ’ থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ বানিয়ে ফেলেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা৷ এক অস্ত্রের আঘাতেই ঘায়েল হবে ঘাতক সব গ্রহাণু। পৃথিবীর দিকে তেড়ে আসা যে কোনও মহাজাগতিক বস্তুকে মহাকাশেই বিনাশ করবে নাসার তৈরি অস্ত্র  ‘ডাবল অ্যাস্টারয়েড রিডাইরেকশান টেস্ট’ বা ‘ডার্ট’।

আরও পড়ুন- আরও কাছে! ৫৯ বছরে প্রথম, খালি চোখেই বেশ কিছু দিন ধরা দেবে বৃহস্পতি

আনেক সময় দেখা যায়, মহাশূণ্যের বিশাল কোনও গ্রহাণু থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসা আগুনের গোলা টুক করে ঢুকে পড়ে পৃথিবী ও চাঁদের কক্ষপথে। তার পর সেই গ্রহাণুর টুকরো উল্কাবৃষ্টির আকারে ঝরে পড়ে পৃথিবী আর চাঁদের বুকে। চাঁদ ও পৃথিবী পৃষ্ঠে আছড়ে পড়ার আগে তাদের সঙ্গে ঘাতপ্রতিঘাতও হয়। সাম্প্রতিক এক গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, ডাইনোসরদের ধ্বংসের জন্য যে গ্রহাণু দায়ী ছিল, তার চেয়েও বিশাল ও ভয়ঙ্কর এক গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষ হয়েছিল৷ তা প্রায় ৮০ কোটি বছর আগের ঘটনা। ওই গ্রহাণুর ধাক্কায় মারাত্মক ক্ষতি হয়েছিল পৃথিবীর। ভয়ঙ্কর উল্কাপাতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল এক তৃতীয়াংশের বেশি প্রাণ৷ পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল বেশ কিছু প্রজাতির প্রাণী। নন-অ্যাভিয়ান অর্থাৎ যারা উড়তে পারে না এমন প্রজাতির ডাইনোসরদেরও বিলুপ্তির জন্যেও দায়ী ছিস সেই উল্কাপাতে৷ 

প্রাগৈতিহাসিক সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতেই এই ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ বানিয়েছে নাসা৷ আপাতত এটি পরীক্ষামূলক স্তরে রয়েছে। ‘ডার্ট’ কত দ্রুত দানব গ্রহাণুকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে, চলছে সেই পরীক্ষানিরীক্ষা৷  নাসার তরফে জানানো হয়েছিল, ডার্টের পরীক্ষার লক্ষ্য বস্তু ছিল ডাইমরফোস গ্রহাণু৷ ৫৩০ ফুট চওড়া ডাইমরফোসের উপরে আছড়ে পড়ে ডার্ট। কক্ষপথ থেকে তাকে সামান্য সরিয়েও দেয়। এই ডাইমরফোস আবার ঘুরে চলেছে তার চেয়ে বহু বড় গ্রহাণু ডিডাইমস-এর চারপাশে৷ যার ব্যাস ২৫০০ ফুট৷ দু’টি গ্রহাণু একত্রে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে।  

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছে, এই দুই গ্রহাণু অবশ্য পৃথিবীর জন্য ক্ষতিকর নয়। তবে তাদের বেছে নেওয়া হয়েছে পরীক্ষার জন্য৷ এরা ‘নিয়ার আর্থ অবজেক্টস’ গোষ্ঠীর মধ্যে সামিল। নাসা জানিয়েছে, ডার্ট-এর সাহায্যে ডাইমরফোসকে অন্য কক্ষপথে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। মহাকাশবিজ্ঞানের ইতিহাসে যা যুগান্তকারী সাফল্য।

বলা হচ্ছে, ভবিষ্যতে কোনও গ্রহাণু বা মহাজাগতিক বস্তু পৃথিবীর জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠলে এই প্রযুক্তির সাহায্যে তাকে সফল ভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে৷ আপাতত সেই পরীক্ষাই চলছে৷