নিউইয়র্ক: মহাকাশজুড়ে নক্ষত্রের সমাহার৷ এক ঝলকে যেন চোখ ধাঁধিয়ে যায়৷ একটু ধাতস্থ হয়ে স্থির নজরে দেখলে বোঝা যায়, এগুলি আকারে কোনওটা লম্বাটে, কোনওটা গোল, কোনওটা আবার চ্যাপ্টা৷ যা থেকে ঠিকরে বেরচ্ছে আলো৷ না, এটা সাধারণ কোনও ক্যামেরার লেন্স ধরা পড়া দৃশ্য নয়৷ না কোনও শিল্পীর হাতের ছোঁয়ায় গড়ে ওঠা কাল্পনিক চিত্র৷ এ ছবি তোলা হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং বৃহত্তম দূরবীক্ষণ যন্ত্র ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে৷ পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের এক ফালি আকাশের ছবি পাঠিয়েছে সে। তার দৃষ্টিতেই ধরা পড়েছে নির্মীয়মাণ নক্ষত্রপুঞ্জের (গ্যালাক্সি) এই উজ্জ্বল সমাহার৷ ১৩৭০ কোটি বছর আগে বিগ ব্যাং-এ ব্রহ্মাণ্ডের এই সৃষ্টি ৷ তার মাত্র ৬০ কোটি বছর পরের ছবি এটি। এর আগে কোনও মানমন্দির এত যুগ আগের ছবি তুলতে পারেনি।
আরও পড়ুন- গ্রহাণুর বুকে লুকিয়ে রয়েছে প্রাণের উপাদান অ্যামাইনো অ্যাসিড, দাবি জাপানি বিজ্ঞানীদের
ছবিটি প্রকাশ করে নাসা জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত মহাকাশের যত ছবি তোলা হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে ধারালো এবং গভীরতম ইনফ্রারেড ছবি এটি। ব্রহ্মাণ্ডের নিখুঁত বিশদের শেষ কথা লুকিয়ে রয়েছে এই ছবিতে। ১১ জুলাই আমেরিকান সময়ে সোমবার সন্ধ্যায় (ভারতীয় সময় মঙ্গলবার ভোর) ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে সঙ্গে নিয়ে হোটাইট হাউজে সাংবাদিক বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন৷ সংবাদমাধ্যমের সামনে মহাকাশের অতীতের এই সাক্ষ্য তুলে ধরেন তিনি। উপস্থিত ছিলেন মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-র অ্যাডমিনিস্ট্রেটর বিল নেলসন। বাইডেন বলেন, “এটাই বিশ্বের প্রাচীনতম ছবি, যা এসেছে ১৩০০ কোটি বছর আগে থেকে।” নাসার তরফে জানানো হয়, ছবিটি জেমস ওয়েব টেলিস্কোপে তোলা ‘গ্যালাক্সি ক্লাস্টার ০৭২৩’-র ছবি।
গত বছর বড়দিনের সকালে মহাকাশের উদ্দেশে পাড়ি দেয় জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। পৃথিবী থেকে তার বর্তমান অবস্থান ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে। এটা এতটাই দূরে রয়েছে যে, মহাকাশে এর কোনও যন্ত্রাংশ খারাপ হলে, তা আর মেরামত সম্ভব নয়। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপটি রয়েছে দ্বিতীয় ল্যাগরাঞ্চ পয়েন্ট-এ৷ যেখানে পৃথিবী এবং সূর্যের মহাকর্ষ বল সমান।
নাসার বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ওয়েব টেলিস্কোপে যে অংশের ছবি ধরা পড়েছে সেটি মহাকাশের ক্ষুদ্রতম অংশ মাত্র। বলা যেতে পারে হাতের তালুতে ধরা একটা ছোট্ট বালিকণার সমান৷ তবে ওয়েবের সাহায্যে আগামী দিনে ব্রহ্মাণ্ডের আরও জটিল রহস্য ভেদ করা সম্ভব হবে বলেই আশাবাদী নাসার বিজ্ঞানীরা।
আজ থেকে দুই দশক আগে ১৯৯০ সালে প্রথম মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার কথা ছিল ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের। সেই সময় এর জন্য খরচ ধরা হয়েছিল আনুমানিক ১০০ কোটি ডলার। ২০২১ সালের ২৫ ডিসেম্বর যখন এই টেলিস্কোপ মহাকাশে পাড়ি দিল, তখন খরচ দাঁড়ায় ১০০০ কোটি ডলার। যদিও এই মিশনের জন্য নাসার দিকে আর্থিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইএসএ) এবং কানাডার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (সিএসএ)৷ তা না হলে এই টেলিস্কোপকে মহাকাশে পাঠানো সম্ভব হত না৷ অবস্থা এমন হয়েছিল যে, বিজ্ঞান পত্রিকা ‘নেচার’ জেমস টেলিস্কোপকে ‘দ্য টেলিস্কোপ দ্যাট এট অ্যাস্ট্রোনমি’ বসে তকমা দিয়ে দেয়৷ এর খরচের বহর সামলাতে গিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানের আর কোনও প্রকল্পে হাত দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। অবশেষে মহাকাশে পাড়ি দেয় জেমস৷ এই টেলিস্কোপে ইনফ্রারেড রশ্মি দিয়ে তোলা হয় এই বিস্ময়কর ছবি৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>