কলকাতা: ক্রমশ বেড়ে চলেছে পৃথিবীর উত্তাপ৷ এই উষ্ণায়ন একটু একটু করে কুরে খাচ্ছে নীল গ্রহে৷ পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি ক্ষতি করছে মাতৃগর্ভে থাকা ভ্রূণের৷ যার ফলশ্রুতি একেবারেই মধুর নয়৷ বিপজ্জনকভাবে বেড়ে চলেছে অপরিণত সদ্যোজাতের সংখ্যা৷
আরও পড়ুন- ফের সৌরঝড়ের অশনিসঙ্কেত ? কী বলছে নাসা
শুধু তাই নয়, জন্মের পর উষ্ণায়নের প্রভাব পড়ছে শিশুদের শরীরে৷ বাড়ছে অবাঞ্ছিত ওজন৷ শৈশব শুরুর প্রথম লগ্নেই অনাকাঙ্খিত স্থূলত্বের শিকার হতে হচ্ছে শিশুদের৷ তাদের মধ্যে বাসা বাঁধছে জটিল রোগ৷ বাড়ছে হাসপাতালে শিশু ভর্তির ঘটনা৷ উষ্ণায়নের জেরে দ্রুত গতিতে বদলে যাওয়া জলবায়ু বিপজ্জনক করে তুলেছে মাতৃগর্ভে থাকা ভ্রূণ, সদ্যোজাত শিশু ও শিশুর শৈশবকে৷ সাম্প্রতিক ছ’টি গবেষণায় উঠে এল এমনই এক ভয়াবহ ছবি৷ এই গবেষণাপত্রগুলি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘জার্নাল পিডিয়াট্রিক অ্যান্ড পেরিন্যাটাল এপিডিমিয়োলজি’-র বিশেষ সংখ্যায়।
উষ্ণায়নের জেরে কী কী ক্ষতি হচ্ছে? গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, উষ্ণায়ন ও খুব দ্রুত গতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে বিশ্বজুড়ে দাবানলের ঘটনা বাড়ছে৷ বাড়ছে দাবানলের তীব্রতা৷ আর দাবানল থেকে সৃষ্ট ধোঁয়া ক্ষতি করছে সদ্যোজাত সন্তানের৷ নানা ধরনের শারীরিক জটিলতায় ভুগতে হচ্ছে তাদের৷ আর জন্মলগ্ন থেকে এই ক্ষতির বোঝা তাদের বয়ে বেড়াতে হচ্ছে অনেক বেশি বয়স পর্যন্ত৷
পাশাপাশি গবেষকরা এও জানিয়েছেন যে, জীবাশ্ম-জ্বালানির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের ফলে মাত্রাধিক বায়ুদূষণ হচ্ছে৷ যা আশঙ্কাজনকভাবে কমিয়ে দিচ্ছে মহিলাদের প্রজনন ক্ষমতা৷ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক, ইজরায়েল, -সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গবেষণা চালিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই গবেষণাপত্রগুলি। বিষয়টিকে সকলের নজরে আনতে সেগুলি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকার বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকাশক৷
বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, উষ্ণায়নের জেরে বিপজ্জনক হারে বাড়ছে সদ্যোজাতের ওজন৷ ইজরায়েলে প্রায় ২ লক্ষ শিশুর উপর পরীক্ষা চালানোর পর গবেষকরা বলছেন, উষ্ণায়নের বিষে জন্মের এক বছরের মধ্যেই অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পয়েছে শিশুর ওজন৷ যা পরবর্তীকালে অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে উঠছে৷ অন্তত পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ শিশুর ক্ষেত্রে এটা দেখা গিয়েছে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের অস্বাভাবিক স্থূলত্ব মহামারির আকার নিয়েছে বলেও বেশ কয়েকটি গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। গবেষণা অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বে অন্তত ১৮ শতাংশ শিশু অস্বাভাবিক ওজন বা স্থূলত্বের শিকার।
অন্যদিকে, দাবানলের ধোঁয়া মারাত্মক প্রভাব ফেলছে অন্তঃসত্ত্বা ও সদ্যোজাতের শরীরে৷ গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দাবানলের ধোঁয়া সন্তান ধারণের কিছু সময় আগে মহিলাদের নানা ধরনের শারীরিক জটিলতার আশঙ্কা দ্বিগুণ বাড়িয়ে তুলেছে৷ এর প্রভাব থাকছে সন্তান জন্মের পরও৷ প্রসবের পর মায়েরা শুধু দীর্ঘমেয়াদি নানা রোগের শিকারই হচ্ছেন না, জন্মের পর থেকে সদ্যোজাতরাও নানা ধরনের শারীরিক জটিলতার শিকার হচ্ছে৷ তামাম বিশ্বের উদ্বেগ বাড়িয়ে জন্ম হচ্ছে অপরিণত শিশুর৷ সদ্যোজাতরা আক্রান্ত হচ্ছে ‘গ্যাস্ট্রোস্কাইসিস’ নামে একটি জটিল রোগে৷ এই রোগে আক্রান্ত সদ্যোজাতের অন্ত্র বা অন্য অঙ্গগুলি প্রসারিত হয়ে ত্বক ভেদ করে শরীরের বাইরে বেরিয়ে আসে। দাবানলের ধোঁয়া মার্তৃগর্ভে থাকা সন্তানের এই ভয়ঙ্কর রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ২৮ শতাংশ বাড়িয়ে তুলেছে৷
২০০৫ সাল থেকে ২০১৫, টানা ১০ বছর ধরে চালানো কয়েকটি গবেষণা বলছে, পৃথিবীর উষ্ণতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধির জেরে অপরিণত শিশুর (গর্ভবতী হওয়ার ৩৭ সপ্তাহের মধ্যেই প্রসব) জন্ম-হার পাঁচ থেকে সাত শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। যে সকল জায়গায় উষ্ণায়নের হার অধিক, সেখানে অপরিণত শিশুর জন্মের হারও বেশি৷