ওয়াশিংটন: স্কুলে লম্বা ছুটি মানে লম্বা প্রস্তুতি৷ দিনভর হুল্লোড় আর তার ফাঁকে মামার বাড়ি বা আরও একটু দূরে কোথাও বেড়াতে যাওয়া, অগত্যা ঘরে থাকতে হলে মোবাইল গেম, কম্পিউটার আর টিভির পর্দায় পছন্দের কার্টুন তো আছেই৷ ছুটি শেষ হওয়ার মুখে হঠাৎ মনে পড়ে যায় স্কুলের হোমওয়ার্ক যে বাকি! কিন্তু এই ছুটির হোমওয়ার্ক করতে গিয়েই রীতিমত ইতিহাস গড়ে ফেলল ১২ বছরের চিকা ওফিলি, এবছর গ্রেট ব্রিটেনের ‘ট্রুলিটিল হিরো’৷
ওয়েস্টমিনিস্টার আন্ডার স্কুলের ছাত্র চিকা৷ ছুটিতে ম্যাথ প্র্যাকটিসের জন্য তাকে একটি বই দিয়েছিলেন তার স্কুলের গনিত শিক্ষিকা মেরি এথিলি৷ সেখানে ছিল ভাগ করার সহজ প্রক্রিয়া শেখার মত বেশ কিছু অঙ্ক৷ বিশেষত সেই সংখ্যাগুলি যা ২ থেকে ৯ পর্যন্ত সব সংখ্যা দিয়ে বিভাজ্য৷ সেইসব অঙ্ক ঘেঁটে দেখতে গিয়ে হঠাৎ চিকার মনে হয়, সেখানে ৭ দিয়ে বিভাজ্য সংখ্যা খুব একটা নেই৷ সেই ভাবনা থেকেই শুরু হল চেষ্টা আর তাতেই এর অভাবনীয় সাফল্য৷ ভাবছেন ৭ দিয়ে ভাগ করা যায় এমন সংখ্যা বের করার প্রক্রিয়া নতুন কি?
নতুনত্ব পদ্ধতিতে৷ তার সেই সহজ সরল পদ্ধতিতে শুধু অঙ্ক করেই দেখালো না৷ বীজগণিতের সূত্র দিয়ে প্রমাণ করে দেখালো এই ১২ বছরের পড়ুয়া৷ গণিতে ছোট্ট চিকা’র নতুন উদ্ভাবন পদ্ধতি কি ছিল দেখা যাক৷
যে কোনো সংখ্যার এককের অংকের সাথে ৫ গুন করে বাকি সংখ্যার সাথে যোগ দিতে হবে৷ যোগফল ৭ দ্বারা বিভাজ্য হলেই মূল সংখ্যাটি ৭ দ্বারা বিভাজ্য হবে৷ যদি দেখা যায় সংখ্যাটিকে ওই পদ্ধতি একবার প্রয়োগ করার পর প্রাপ্ত যোগফল বড় সংখ্যা আসে, তাহলে তাকে আবার একই ভাবে ওই প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যেতে হবে৷ যেমন- ১৫৬৭-১৫৬+৭×৫=১৯১ ১৯১-১৯+১×৫=২৪ এই ২৪, ৭ দ্বারা বিভাজ্য নয়৷ সুতরাং ১৫৬৭, ৭ দ্বারা বিভাজ্য নয়৷ তাঁর এই চিন্তা বহু গণিতজ্ঞর মনেই দাগ কেটেছে৷
অনেকেই অবাক হয়েছেন, আবার অনেকেই বাহবা দিয়েছেন৷ গণিত শাস্ত্রে এই মৌলিক অবদানের জন্য ব্রিটেনের অনূর্ধ্ব সতেরোর পড়ুয়াদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিবেচিত হয় চিকা৷ এবছর দেশের ‘ট্রুলিটিল হিরো অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয় তাকে৷ ছোটোদের ছোটো ছোটো চিন্তাভাবনা এত বড় বড় কাজে লাগতে পারে, সেবিষয়টা এখন অনেক ক্ষেত্রেই প্রমাণিত৷ কিন্তু এদেশে স্কুলগুলোতে যোগ্যতা যাচাইয়ের ইঁদুর দৌড়ে দক্ষতার দিকটা ভেবে দেখার সময় পাচ্ছেনা শিক্ষক থেকে অভিভাবক কেউই৷ চিকার সাফল্য যে তাদের চিন্তাভাবনার ধারায় কিছুটা হলেও পরিবর্তন আনবে ভাবাই যায়৷