নয়াদিল্লি: আবহাওয়ার পরিবর্তন, দূষণের মত কারণে দিন দিন বেড়ে চলেছে রোগব্যাধির প্রকোপ আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিত্যতুন গবেষণায় তৈরি হচ্ছে একের পর এক প্রাণদায়ী ওষুধ৷ যা এখন প্রতিটি মানুষের এমনকি পোষ্যদেরও নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে৷ কিন্তু সমস্যা হল সরষের মধ্যেই যে ভূত৷ অর্থাৎ, আমরা রোগ সারাতে,-বলা ভালো, প্রাণে বাঁচতে যে ওষুধ নামক বস্তুটির ওপর চোখকান বন্ধ করে ভরসা করি, সেই ওষুধগুলোই হয়ে উঠেছে প্রাণঘাতী৷ অর্থাৎ বর্তমান বিশ্বে মানুষের পদে পদে মহা সংকটের তালিকায় এখন সেরা সংকট হল ‘ওষুধের জন্য প্রাণসংকট’৷
সম্প্রতি ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) রীতিমত সতর্কতা জারি করেছে ভারতের নামীদামি কয়েকটি ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার তৈরি ওষুধের গুণমান নিয়ে৷ ওষুধে জীবন্ত পোকামাকড থেকে শুরু করে ওষুধে ব্যবহৃত ব্যাকটেরিয়া সংক্রামিত জল এমনকি ওষুধ তৈরির রেকর্ডে গোপনীয়তার মত কারণগুলিই এরমধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য৷
বিগত একবছরে ভারতের ওষুধের বাজার নিয়ে অভিযোগের তালিকা দীর্ঘতর হয়েছে৷ এবছর ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত এই ১১ মাসে তিনবারে মোট ২৩টি সতর্কতামূলক চিঠি পাঠিয়েছে দ্যা আমেরিকান হেলথকেয়ার রেগুলেটরি৷ মূলত যে সংস্থাগুলিকে বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে সেগুলি হল, লুপিন, গ্লেনমার্ক ফার্মাসিউটিক্যালস, টোরেন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস, অরবিন্দ এবং ক্যাডিলা৷ বিশেষ কিছু ওষুধ যা হার্টের রোগীদের জন্য বিশেষ ভাবে ব্যবহৃত হয়, সেই ওষুধগুলোই এই ভয়ঙ্কর সত্য প্রথমে প্রকাশ্য আনে৷ দুর্ভাগ্যবশত এই ওষুধের বেশিরভাগই ভারত এবং প্রতিবেশী দেশ চীনে তৈরি হয়েছিল৷
এরফলে বিশ্বব্যাপী ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি তাদের গুণমান-নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিগুলি নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ে৷ এরপর একবছর ধরে মার্কিন নিয়ন্ত্রকরা বেশ কয়েকবার য়েই ধরণের সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে লড়াই শুরু করে, যদিও সেখানকার কর্মীরা তাদের বিভ্রান্ত করার জন্য সক্রিয়ভাবে পদক্ষেপ নিয়েছিল৷
বর্তমানে এফডিএ ভারতীয় ওষুধের ক্ষেত্রে সতর্কতা বাড়িয়েছে৷ জেফারিজ ইন্ডিয়া’র সংগৃহীত এবং লাইভমিন্টের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-র অক্টোবর থেকে ২০১৯- এর জুনের মধ্যে এফডিএ যতগুলি বিদেশী ওষুধের বাজার পরিদর্শনের করেছে তার মধ্যে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ ভারতের৷ বলা যায় ভারতীয় ওষুধের বাজার এখন মার্কিন স্ক্যানারের আওতায়৷ এবিষয়ে তদন্তকারী এক সাংবাদিক ক্যাথরিন ইবানের নিজের লেখা বই ‘বটল অফ লাই’-তে ভারতীয় ওষুধ কোম্পানিগুলির বিরুদ্ধে প্রাণদায়ী ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে বড়সড় গাফিলতির অভিযোগ এনেছেন৷
তার মধ্যে যেমন আছে তথ্য গোপন, দূষিত টক্সিকের ব্যবহার, ওষুধ কারখানাগলিতে অগোচরে পাখিদের আনাগোনা৷ এমনকি ওই বইয়ে্ ভারতীয় ওষুধের মান ‘চোরাই বাজারের’ জিনিসপত্রের মানের সঙ্গে তুলনাও করেছেন৷ যদিও সুখের খবর যে এফডিএ এবং সংবাদমাধ্যমের কড়া নজরদারির কোপে কিছুটা হলেও সতর্ক হয়েছে ভারতের ওষুধ কোম্পানিগুলি৷ এরমধ্যেই আমেরিকায় জেনেরিক ওষুধ বিক্রির জন্য সফলভাবে এফডিএ-র একের পর এক ছাড়পত্রও আদায় করে চলেছে৷