কলকাতা: মাঝেমধ্যেই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নতুন প্রাণী অবিষ্কারের খবর শোনা যায়। বিভিন্ন দেশের একাধিক বিজ্ঞানী এই অনুসন্ধানের সঙ্গে জড়িত। তেমনই একজন বিজ্ঞানী জুলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার প্রাণীবিদ শান্তনু মিত্র। সম্প্রতি ১৪টি নতুন প্রজাতির প্রাণীর সন্ধান দিয়েছেন তিনি। জু-ব্যাংকের স্বীকৃতিও মিলেছে। নেদারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, ব্রাজিলের বিভিন্ন পত্রিকায় এই আবিষ্কারের কথা ছাপাও হয়েছে।
দীঘার উপকূল থেকে নতুন এক ধরনের কাঁকড়া আবিষ্কার করেছেন শান্তনু মিত্র। এর বিজ্ঞানসম্মত নাম ডটিলা ফেটারনালিস। ল্যাটিন ভাষায় ফেটারনালিসের অর্থ আত্মীয়। এর আগে ১৮৮৮ সালে দীঘার উপকূলেই এক প্রজাতির কাঁকড়া আবিষ্কার করেছিলেন ফরাসি বিজ্ঞানী ডি ম্যান। তার নাম ডটিলা ইন্টারমিডিয়া। সম্প্রতি যে কাঁকড়াটি আবিষ্কার করেছেন শান্তনু মিত্র, সেটি ওই প্রজাতির কাঁকড়ার সঙ্গে মেলে। এই নতুন প্রজাতির কাঁকড়া আবিষ্কার করতে সময় লেগেছে ১৩২ বছর। শান্তনুবাবুর এই আবিষ্কারকে গত ৮ জুলাই স্বীকৃতি দিয়েছে জু ব্যাংক।
১৯৭১ সালে জন্মগ্রহণ করেন শান্তনু মিত্র। তারকেশ্বর পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বিবেকানন্দ পল্লির বাসিন্দা তিনি। পড়াশোনা তারকেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ে। এরপর কানপুর ইউনিভার্সিটি থেকে জুলজি নিয়ে মাস্টার্স করেন। এখন বাড়িতেই ল্যাবরেটরি বানিয়ে গবেষণা চালান তিনি। ইতিমধ্যেই অনেক অজানা প্রাণী আবিষ্কার করেছেন তিনি। ২০১৭ সালে মিজোরামে এক ধরনের কাঁকড়া আবিষ্কার করেন তিনি। নাম টেরেটামন ইন্ডিকম। সেই শুরু। তারপর একের পর এক নতুন প্রজাতির সন্ধানে কাজ চালাচ্ছেন তিনি। গত ৯ সেপ্টেম্বর তিনি হিমালয়ের এক ধরনের কাঁকড়ার গণ ও প্রজাতি আবিষ্কার করেন। বিজ্ঞানসম্মত নাম দেন যথাক্রমে অ্যাবর টেলফুসা ও নামডাফা এনসিস। মণিপুরেও তিনি নতুন প্রজাতির কাঁকড়ার সন্ধান পান। ২৪ আগস্ট তাঁর সেই আবিষ্কারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এর বিজ্ঞানসম্মত নাম তিনি রেখেছেন ব্যাডিস্টেমন ফালভাম। মিজোরামে এক নতুন ক্যাটফিশ মাছেরও সন্ধান পান শান্তনুবাবু। যার বিজ্ঞানসম্মত নাম গ্লিপটোথোরাক্স কৈলাসি। জানুয়ারি মাসে তাঁর এই কাজ স্বীকৃতি পায়।
গত বছর মার্চে তিনি সিঙ্গাপুরের পিটার এন জি’র সঙ্গে মিলিতভাবে বকখালিতে এক নতুন প্রজাতির কাঁকড়া আবিষ্কার করেন। তাঁরা এই কাঁকড়ার বিজ্ঞানসম্মত নাম দেন কার্সিনো প্লাক্স মিস্টিও। শান্তনু মিত্র জানান, যে সব নতুন প্রাণী তাঁরা আবিষ্কার করেছেন, যেগুলোর সঙ্গে সাধারণত চোখের সামনে যেসব প্রাণী দেখা যায় তাদের প্রচুর মিল। কিন্তু প্রজাতি আলাদা। এই বিষয়ে আবিষ্কারের জন্য ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে জানা জরুরি। চাকরি থেকে বাড়ি ফিরে তিনি ল্যাবরেটরিতে কাজ করেন। পৃথিবীর অনেক বিজ্ঞানীর সাহায্য পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁদের মধ্যে অন্যতম সিঙ্গাপুরের প্রাণীবিদ পিটার এন জি।