মঙ্গলের মাটিতে তৈরি হল কৃত্রিম অক্সিজেন, শুরু ‘মানব বসতি’ গড়ার প্রস্তুতি

ওয়াশিংটন: চাঁদের মাটি ছুঁয়ে মহাকাশ গবেষণায় মাইলফলক গড়েছে ভারত। বিজ্ঞানীদের সামনে উঠে এসেছে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর অজানা বহু তথ্য৷ সকলের মনে এখন একটাই প্রশ্ন, আগামী দিনে চাঁদের মাটিতে কি কলোনি গড়বে মানুষ? গোটা বিশ্ব যখন এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে, ঠিক তখন মঙ্গলে ‘মানব বসতি’ গড়ার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। লালগ্রহের রুক্ষ অনুর্বর মাটি, কার্বন ডাই-অক্সাইড যুক্ত বায়ুমণ্ডলে কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন তৈরির পরীক্ষা করে নজির গড়ল তারা। তবে চাঁদের বদলে মঙ্গলই হতে চলেছে বিশ্ববাসীর নেক্সট ডেস্টিনেশন? নাসার নয়া তথ্যে সেই জল্পনা তুঙ্গে৷
লালগ্রহের দেশে মাটি আঁকড়ে পড়ে রয়েছে পারসিভিয়ারেন্স রোভার। তার মধ্যে থাকা ছোট মাইক্রোওয়েভ আকারের যন্ত্রের সাহায্যেই এই অসাধ্য সাধন করে ফেলেছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। তাও এক-আধবার নয়, ১৬ বার অক্সিজেন উৎপন্ন করেছে পারসিভিয়ারেন্স রোভার। সেই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত নাসা৷ টুইট করে নাসার তরফে জানানো হয়েছে যে, ‘মঙ্গলগ্রহে থাকা কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে সফলভাবে অক্সিজেন মৌলকে পৃথক করতে পেরেছে মোক্সি যন্ত্র। যা ভবিষ্যতে মঙ্গলে মানব অভিযান ও বসতি গড়ে তোলার পথ মসৃণ করে তুলবে।’
কিন্তু মোক্সির পুরো নাম কী? এর কাজই বা কী? মোক্সি-র পুরো নাম মার্স অক্সিজেন ইন-সিটু রিসোর্স ইউটিলাইজেশন এক্সপেরিমেন্ট। এর কাজ হল কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন তৈরি করা। ২০২১ সালে মঙ্গলের লাল মাটিতে অবতরণ করে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির তৈরি রোভার পারসিভিয়ারেন্স। এর মধ্যেই রয়েছে মোক্সি নামক এই যন্ত্রটি। নাসার দাবি, লালগ্রহে সেটি এখনও পর্যন্ত মোট ১২২ গ্রাম অক্সিজেন তৈরি করেছে, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দ্বিগুণ। কৃত্রিম পদ্ধতিতে তৈরি এই অক্সিজেন ৯৮ শতাংশ বিশুদ্ধ। এপ্রসঙ্গে নাসার ডেপুটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর পাম মেলরয় একটি বিবৃতিতে বলেন,‘মঙ্গলের আবহাওয়া থেকেই অক্সিজেন উৎপাদন করা সম্ভব। মোক্সির সাফল্যই তার প্রমাণ। রকেটের জ্বালানির পাশাপাশি শ্বাসযোগ্য বাতাসের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠবে এই সম্পদ।’
কোন পদ্ধতিতে অক্সিজেন তৈরি করে নাসার এই যন্ত্র? জানা গিয়েছে, ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল প্রক্রিয়ায়মঙ্গলে থাকা কার্বন ডাই-অক্সাইডের অণু থেকে অক্সিজেন পরমাণুকে বিচ্ছিন্ন করে এই যন্ত্র। তবে এই সাফল্যেই থামতে নারাজ নাসা। তারা চাইছে ভবিষ্যতে এমন কিছু পাঠাতে যার মধ্যে থাকবে মোক্সির মতো আরও অক্সিজেন জেনারেটর। সেই সঙ্গে অক্সিজেনকে তরলীকৃত করে জমিয়ে রাখার উপায় বার করতে চাইছে নাসা।
মোক্সির দায়িত্বে থাকা এমআইটির মাইকেল হেক্ট বলেন, ‘ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে এই ধরনের প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী নাসা।’ এখন শুধুই মানুষের মঙ্গলের মাটি ছোঁয়ার অপেক্ষা৷