Ancient Earth Green Ocean
নয়াদিল্লি: থিবীকে যখন মহাকাশ থেকে দেখা হয়, তখন আমাদের চোখে ধরা দেয় একটি “ফিকে নীল বিন্দু”। এই নীল বিন্দু হল পৃথিবীর বুকে থাকা বিপুল জলরাশি৷ তবে, নতুন গবেষণা জানাচ্ছে, পৃথিবীর সাগর একসময় নীল নয়, বরং ছিল সবুজ। প্রায় ২.৪ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর সাগরের রং ছিল সবুজ৷ এই চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে জাপানের নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা থেকে৷
গবেষক তারো মাতসুও-র নেতৃত্বে করা এই গবেষণা সম্প্রতি Nature Ecology & Evolution জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রাচীন পৃথিবীর সাগরে প্রচুর পরিমাণে লোহা ছিল, যার কারণে সূর্যালোকের তরঙ্গদৈর্ঘ্য পরিবর্তিত হয়ে সবুজ আলো প্রবাহিত হতে শুরু করেছিল। এই সবুজ আলোতেই ছিল সায়ানোব্যাকটেরিয়ার বিকাশ।
সায়ানোব্যাকটেরিয়া ও প্রাচীন সবুজ সাগর Ancient Earth Green Ocean
সায়ানোব্যাকটেরিয়া, যেগুলোকে সাধারণভাবে “নীল-সবুজ শৈবাল” বলা হয়, পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যের শুরুর দিকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অণুজীব। এই ব্যাকটেরিয়াগুলি সূর্যের আলো ব্যবহার করে অক্সিজেন তৈরি করত, এবং সেই অক্সিজেন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবাহিত হয়ে পরবর্তীতে প্রাণীজগতের বিকাশের পথ প্রশস্ত করেছিল।
গবেষণায় উঠে এসেছে, সেই সময়ে পৃথিবীর সাগরে প্রচুর পরিমাণে লোহা উপস্থিত ছিল। এই লোহার কারণে সূর্যালোকের তরঙ্গদৈর্ঘ্য পরিবর্তিত হয়ে সবুজ আলো পরিবাহিত হতে শুরু করেছিল, ফলে সমুদ্রের রং সবুজ হয়ে উঠেছিল।
পৃথিবীর প্রথম অক্সিজেনিক ফটোসিনথেসিসের সূচনা হয় সায়ানোব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে, যা পৃথিবীতে অক্সিজেনের উপস্থিতি বৃদ্ধি করে, পরবর্তীকালে প্রাণীদের জন্য বসবাসযোগ্য পরিবেশ তৈরি করেছিল।
সবুজ সাগরের প্রমাণ মিলেছে সাৎসুনান দ্বীপপুঞ্জে Ancient Earth Green Ocean
২০২৩ সালে জাপানের সাৎসুনান দ্বীপপুঞ্জের ইও দ্বীপে গবেষণা করতে গিয়ে, সাগরের জলে সবুজ ঝিলিক লক্ষ্য করেন গবেষকরা। জলে থাকা লোহা ও তার উপাদান iron hydroxides এই সবুজ ঝিলিক তৈরি করছিল। এই অদ্ভুত দৃশ্যটি তাদের গবেষণার এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে কাজ করেছে।
গবেষক তারো মাতসুও বলেন, “২০২১ সালে যখন আমি প্রথম ধারণা করেছিলাম যে পৃথিবীর প্রাচীন সাগর সবুজ ছিল, তখন আমার মধ্যে সন্দেহ ছিল। কিন্তু গবেষণার ফলাফল এবং তথ্য একত্রিত হওয়ার পর আমার সন্দেহ দূর হয়ে যায় এবং আমি এতে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়েছি।”
কিভাবে টিকে ছিল প্রাচীন জীব? Ancient Earth Green Ocean
এমন সবুজ জলেই সায়ানোব্যাকটেরিয়া তাদের ফটোসিনথেসিস প্রক্রিয়া চালাত। বর্তমানের উদ্ভিদ যেমন সূর্যের আলো থেকে শক্তি পেতে ক্লোরোফিল ব্যবহার করে, তেমন প্রাচীন সায়ানোব্যাকটেরিয়া একটি অতিরিক্ত রঞ্জক পদার্থ ফাইকোবিলিন ব্যবহার করত। বিশেষত, ফাইকোইরিথ্রিন নামে একটি প্রোটিন সবুজ আলো শোষণে বিশেষভাবে কার্যকর ছিল। এই অভিযোজন তাদের টিকে থাকতে সাহায্য করেছিল।
মহাকাশে জীবনের খোঁজে সবুজ সাগর? Ancient Earth Green Ocean
এই গবেষণা শুধু পৃথিবীর অতীত সম্পর্কে নয়, ভবিষ্যতের মহাকাশ অনুসন্ধানেও সাহায্য করতে পারে। যদি কোনও গ্রহে আমরা সবুজ সাগরের চিহ্ন দেখতে পাই, তবে সেটি প্রাচীন বা আদিম জীবনের উপস্থিতি নির্দেশ করতে পারে।
গবেষক মাতসুও জানান, “সবুজ সাগর কেবল অতীতের স্মৃতি নয়, এটি হতে পারে এলিয়েন জীবনের খোঁজে এক নতুন দিশা।”
কী জানালো গবেষণা- Ancient Earth Green Ocean
২.৪ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর সাগর ছিল সবুজ, লোহার কারণে সূর্যালোকের তরঙ্গদৈর্ঘ্য পরিবর্তিত হত।
সায়ানোব্যাকটেরিয়া সবুজ আলো শোষণ করেই প্রাণ রক্ষা করত, অক্সিজেন তৈরি করত।
এই অক্সিজেনই পরে পৃথিবীতে প্রাণীজগতের বিকাশে সহায়ক হয়েছিল।
ভবিষ্যতে মহাকাশ অনুসন্ধানে সবুজ সাগর জীবনের উপস্থিতি নির্দেশ করতে পারে।
Science: New research reveals Earth’s oceans were green 2.4 billion years ago due to iron presence, transforming sunlight. Cyanobacteria thrived, producing oxygen that shaped life. Discover how Japan’s study unveils this ancient phenomenon.