মিলতে পারে ১০ হাজার বছরের বিদ্যুতের জোগান! শক্তির উৎস খুঁজতেই কি চাঁদে যাওয়ার ধুম?

কলকাতা: চাঁদের মাটি ছুঁয়ে মহাকাশ গবেষণার নতুন দিগন্ত খুঁলে দিয়েছে ভারত৷ বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসাবে চন্দ্রবিজয়ই নয়, প্রথম দেশ হিসাবে চাঁদের কুমেরু জয় করেছে আমাদের দেশ৷ তবে শুধু ভারতই নয়, এখন বহু দেশের নজরেই রয়েছে চাঁদের দিকে৷ বহু বছর আগে চাঁদে মানুষ পাঠিয়েছিল আমেরিকা৷ এদিকে, ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদে নভশ্চর পাঠানোর কথা ঘোষণা করেছে বেজিং৷ ফলে নতুন করে কোমর বাঁধছে নাসাও৷ কিন্তু চাঁদমামাকে নিয়ে বিভিন্ন দেশের মধ্যে এত তৎপরতা কীসের এর নেপথ্য কারণ কী?
চাঁদের বুকে রয়েছে এমন এক মৌলের ভাণ্ডার৷ যা পৃথিবীতে বিরল৷ চাঁদে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে হিলিয়াম-৩৷ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এই মৌল? এর বৈশিষ্ট্যই বা কী? হিলিয়াম হল পর্যায় সারণির দ্বিতীয় মৌল৷ যার দু’টি প্রোটন, দু’টি নিউট্রন এবং দু’টি ইলেকট্রন রয়েছে। পারমাণবিক ভর ৪। এই হিলিয়ামেরই আরও একটি রূপ হল হিলিয়াম-৩। বিজ্ঞানীদের অনুমান, হিলিয়াম-৩ এম মধ্যে রয়েছে অফুরান শক্তি৷
হিলিয়ামের হালকা আইসোটোপ হিলিয়াম-৩ এর মধ্যে রয়েছে দু’টি প্রোটন ও একটি নিউট্রন৷ এর পারমাণবিক ভর ৩। ১৯৩৪ সালে হিলিয়াম-৩-এর অস্তিত্বের কথা প্রথম জানান অস্ট্রেলিয়ার পারমাণবিক পদার্থবিদ মার্ক ওলিফ্যান্ট। তবে পৃথিবীতে এর অস্তিত্ব খুবই কম৷ বহু সন্ধানের পর বায়ুমণ্ডল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের কূপ থেকে খুব অল্প পরিমাণে হিলিয়াম-৩-এর খোঁজ মেলে৷ তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, পারমাণবিক ফিউশন গবেষণায় হিলিয়াম-৩ বিপ্লব আনতে পারে৷
একই সঙ্গে বিজ্ঞানীদের অনুমান, পৃথিবীতে এই মৌল বিরল হলেও, পৃথিবীর আত্মজার মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে হিলিয়াম-৩। ডিউটেরিয়ামের সঙ্গে হিলিয়াম-৩ এর প্রয়োগে ফিউশন চুল্লিতে শক্তি উৎপাদন করা যেতে পারে। আপাতত এটি পরীক্ষামূলক স্তরে রয়েছে। তবে বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, চুল্লির কন্টেনমেন্ট চেম্বারে এই জাতীয় শক্তি ধারণ করে রাখা সম্ভব হলে, এটি কার্যকর শক্তির উৎস হয়ে উঠতে পারে। সেই সঙ্গেই মিটবে পৃথিবীর শক্তি উৎপাদনের চিন্তা৷ থাকবে না তেজস্ক্রিয় বিকিরণের ভয়৷
তবে হিলিয়াম-৩ পেতে হলে ভরসা সেই ‘চাঁদমামা’৷ কারণ, চাঁদে প্রচুর পরিমাণে হিলিয়াম-৩ রয়েছে বলেই বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস। কতটা সমৃদ্ধ সেই ভাণ্ডার? বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, চাঁদে কমপক্ষে ১১ লক্ষ মেট্রিক টন হিলিয়াম-৩ রয়েছে৷ যা কিনা, আগামী ১০ হাজার বছর পর্যন্ত মানবজাতির শক্তির চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। শক্তির চাহিদা মিটলে পৃথিবী আরও তরতাজা হয়ে উঠতে পারে বলেও মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। জোর জল্পনা, শক্তির এই অফুরান উৎসকে কুক্ষিগত করতেই চাঁদের বুকে মহাকাশযান পাঠানোর ধুম পড়েছে বিভিন্ন দেশের মধ্যে।