ওয়াশিংটন: মহাকাশের রহস্য ভেদে বহু দশক ধরেই বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত। আর সেই সূত্রে এমন সব তথ্য সামনে আসছে যা সকলের কল্পনার বাইরে। মহাকাশ বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থা নাসা এমন সমস্ত নিত্য নতুন ভাবনা সামনে আনছে গবেষণার মাধ্যমে, যা মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। নাসা জানিয়েছে কাচ বা ধাতু দিয়ে নয়, চাঁদ-মঙ্গলে মানুষের ভবিষ্যতের বাড়ি তৈরি হবে ব্যাঙের ছাতার মতো ছত্রাক দিয়ে। আর সেই বিষয়টি নিয়ে বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
নাসা’র মাইকো আর্কিটেকচার প্রকল্পের প্রধান লিন রথচাইল্ড এ কথা জানিয়েছিলেন কয়েক বছর বছর আগে। তাঁর কথায়, ছত্রাকের গোড়ার অংশ যা মাইসেলিয়া নামে পরিচিত সেটি আগামী দিনে গেমচেঞ্জার রূপে দেখা দিতে পারে। এই মাইসেলিয়া কিন্তু খালি চোখে দেখা যায় না। অথচ মাটির নীচে এর সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে। মাইসেলিয়া দিয়ে তৈরি বাড়িগুলি হবে তিনটি স্তরের গম্বুজের মতো। এ প্রসঙ্গে নাসার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, একেবারে বাইরের স্তরটি তৈরি করা হবে বরফ দিয়ে। তাতে বিকিরণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। মাঝের স্তরটি নির্মিত হবে সায়ানোব্যাকটিরিয়া দিয়ে। সেখান থেকে অক্সিজেন পাওয়া যাবে। তাতে খাদ্য পাবে মাইলসিলিয়া। যা দিয়ে তৈরি হবে একেবারে ভিতরের স্তরটি। এখন প্রশ্ন সায়ানোব্যাকটেরিয়া থেকে কীভাবে অক্সিজেন পাওয়া যাবে? এ ব্যাপারে নাসা জানাচ্ছে ওই ব্যাকটেরিয়া সূর্যালোকের সাহায্যে চাঁদ বা মঙ্গল গ্রহে অনায়াসে সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবে। আর তাতে বাই প্রোডাক্ট হিসেবে তৈরি হবে অক্সিজেন। যা মানুষের বসতি স্থাপনে সাহায্য করবে। কারণ অক্সিজেন ছাড়া প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। আর সেই অক্সিজেন কৃত্রিমভাবে জোগান দেবে ব্যাকটেরিয়া।
সেই লক্ষ্যে গবেষণা অব্যাহত। ইতিমধ্যেই ল্যাবরেটরিতে বিষয়টি নিয়ে কাজ করে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। সেখানে কৃত্রিম উপায়ে অক্সিজেন তৈরির প্রচেষ্টা চলছে। সেই সঙ্গে চলছে ছত্রাক দিয়ে বাড়িঘর বা অন্যান্য জিনিসপত্র তৈরির প্রচেষ্টা। ছত্রাকের বৃদ্ধির হার প্রতি সেকেন্ডের ভিত্তিতে কতটা হচ্ছে সেই সম্পর্কিত পরিসংখ্যান রাখছেন বিজ্ঞানীরা। এভাবে চাঁদ বা মঙ্গল গ্রহে বাড়ি তৈরি করতে গেলে খরচ অপেক্ষাকৃত অনেকটা কম হবে বলে দাবি করছেন নাসার গবেষকরা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে তবে কি মহাকাশে মানুষের বসতি স্থাপনে আর বেশি দেরি নেই? তবে বিজ্ঞানীরা সুনির্দিষ্ট ভাবে কোনও সময় জানাতে না পারলেও তাঁদের আশা আগামী দিনে এই প্রচেষ্টা নতুন ইতিহাস তৈরি করবে। আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে গোটা বিশ্ব।