কলকাতা: সরকারি চাকরি এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে সংরক্ষণ ব্যক্তির মৌলিক অধিকার নয়। শিক্ষা, বৃত্তি, চাকরি, পদোন্নতির ক্ষেত্রে তফশিলি জাতি ও তফশিলি উপজাতিদের সংরক্ষণের জন্য কোনও রাজ্য সরকারকে আদালত নির্দেশ দিতে পারে না এবং এবিষয়ে রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। গত সপ্তাহে এক ঐতিহাসিক রায়ে এমনটাই জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এনিয়ে ইতিমধ্যেই বিরোধী মনোভাব পোষণ করছে রাজনৈতিক দল থেকে রাজনীতিবিদদের অনেকেই। ভীম আর্মি দলের প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদ এই ইস্যুতে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী বনধ পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন সমাজ সংস্কারক, লেখক দিলীপ গায়েন। দীর্ঘদিন ধরে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত দীলিপ বাবুর দাবি তফসিলি সংরক্ষণ সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে হলে সবার আগে রাজনৈতিক-সংরক্ষণ প্রত্যাহার করা উচিত এমনকি মহিলা সংরক্ষণও। এবিষয়ে সর্বোচ্চ আদালত কি মনোভাব পোষণ করে তা জানার জন্য আবেদন করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
পুরো বিষয়টিতেই হিন্দুদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টিকারী কেন্দ্র ও একাধিক রাজ্যের সরকাগুলির সমালোচনা করে যে অভিযোগগুলি এনেছেন তাহল- (১) সরকারি কর্মক্ষেত্রে চুক্তি ভিত্তিক লোক নিয়োগ করা হচ্ছে যেখানে সংরক্ষণের নিয়ম নেই। কিন্তু প্রথমে তাদের অস্থায়ী বললেও পরে স্থায়ী করা হচ্ছে ও বেতন বাড়ানো হচ্ছে। (২) সরকারি প্রতিষ্ঠান গুলো ক্রমশ প্রাইভেট সেক্টরের হাতে বেচে দেওয়া হচ্ছে যেখানে সংরক্ষণ রাখার প্রশ্নই নেই।
এ প্রসঙ্গে তিনি তাদের কথাও উল্লেখ করেছেন যারা মনে করছে তফসিলি সংরক্ষণ বন্ধ হয়ে গেলে সবাই জেনারেল হিসেবে চাকরি করবে। এক্ষেত্রে দিলীপ বাবুর দাবি-
(১) অনগ্রসর শ্রেনীকে একসময় জেনারেল হিসেবে গণ্য করা হতো। ১৯৯২ সালের পর তাদেরকে ওবিসি ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু তাদের সংরক্ষণ হলেও সরকারি ক্ষেত্রে এসসি এসটিদের সমতুল্য কর্মসংস্থান হয়নি। বরং এই শ্রেণীভুক্তদের বড় বড় আশ্বাস দিয়ে শুধুমাত্র রাজনৈতিক লাভ নিয়েছে সরকার। ২) পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীনে প্রায় ৪০ থেকে ৪২ টি মন্ত্রী পদ আছে। বিধান সভায় সংরক্ষণ থাকলেও মন্ত্রীসভায় সংরক্ষণ নেই। অর্থাৎ মন্ত্রীপদের ক্ষেত্রেও অনগ্রসর শ্রেণীভেদ ব্রাত্য করা হয়েছে। (৩) রাজ্য সভায় সংরক্ষণ না থাকায় ১৬ টি সাংসদ পদে বিগত ৭০ বছরে এক জন তফসিলি জাতিভুক্ত ব্যাক্তিকেও সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত করা হয়নি।
এছাড়াও ডাক্তারি, ডব্লুবিসিএস, আইএএস এর মত উচ্চপদে নিয়োগের ক্ষেত্রেও সংরক্ষণ তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি। দলিত শ্রেণীকে সংরক্ষণের বাইরে রেখে কিভাবে জেনারেল তকমা দেওয়া হবে সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। পাশাপাশি ঐতিহাসিক যুগের বর্ণাশ্রম প্রথার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে দিলীপ গায়েন প্রশ্ন তুলেছেন, তাহলে কি এরপর তফসিলিরা কি জেনারেল হিসেবে পুরোহিতের পদ পাবেন?