কলকাতা: ইংরাজিতে যাকে বলে “Role Revarsal” বাংলায় বলতে পারেন ভূমিকা বদলl লোকসভা নির্বাচনে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনিl পশ্চিমবঙ্গের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করে ফেলেছিলেন পলিটব্যুরো খেকে হাইকমান্ডের নেতারাl তবে, বাম-কংগ্রেস জনতা তলায় তলায় জোট করে ফেলেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধেl মমতার বিবেচনাহীন রাজনীতি, একটি বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়কে ‘দুধ দেওয়া গরুর’ সঙ্গে তুলনা বা জয় শ্রী রাম ধ্বনী শুনে তেড়ে যাওয়া – সাধারণ বাঙালী ভাল চোষে দেখেনিl ফল হাতেনাতেl
তৃণমূলের থেকে বাঁচতে মানুষ বিকল্প পথের সন্ধান করেছিল। সেই কারণেই বিজেপিকে ভোট দিয়েছিল বাংলার বাম-কংগ্রেস জনতা। এই দুই দলের অনেক নেতাই পরবর্তিকালে তা স্বীকার করেছেনl যে বাম-কংগ্রেস ভোটের হাত ধরে লোকসভায় বাজিমাত করেছিল গেরুয়া শিবির, সেই ভোটই এবার উপনির্বাচনে তৃণমূলের ঘর আলো করেছে – কালিয়াগঞ্জ এবং খড়্গপুর সদর, এই দুটি কেন্দ্রে অন্তত তা উজ্জ্বল ভাবে প্রাসঙ্গিকl
কারণ, অবশ্যই এনআরসি (NRC)l ইংরাজির এই তিনটি বর্ণ সীমান্ত এলাকার মানুষের মনে ত্রাস হয়ে দাঁড়িয়েছেl উপরন্তু উৎসবের মরশুমে এনআরসি আতঙ্ক মানুষকে গ্রাস করেছেl বিজেপি ভেবেছিল এনআরসি-এর কথা বলে ভোটব্যাংকে হিন্দুত্বের থাবা বসাতে পারবেl কিন্তু অসমে ১২ লক্ষ দিন্দুর নাম এনআরসি তালিকায় নেই – এই বিষয়টি বড় হয়ে দাঁড়াল ভোটারদের কাছেl অমিত শাহ কলকাতায় এসে বলেছিলেন আগে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হবে, সেই আইনে হিন্দু শরণরার্থীদের নাগরিক করা হবেl কিন্তু ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজনকে বিশ্বাস করতে পারেনি ভোটাররাl নাগরিকত্ব আইন যদি আজ এক কথা বলে তবে সংশোধনী এনে ভবিষ্যতে তা অন্যকতাো বলতে পারে, সেক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু ভোটাররাও ভেবেছে এনআরসি তাঁদের জন্য ভয়ঙ্কর হতে পারেl
তৃণমূলের হাত থেকে বাঁচতে বাংলার মানুষ লোকসভায় একমাত্র পথ ছিল বিজেপিকেই বেছে নেওয়ার পিছনে পরিষ্কার যুক্তি দিতে পারে ২০১৬ সালের বিধানসবা নির্বাচনl এই নির্বাচনে বামফ্রন্ট-কংগ্রেস আসন সমঝোতা করেছিল। ভোটারদের কাছে বিকল্প রাস্তা তৈরি হয়েছিল। যার ফলে, ভোট কমে গিয়েছিল বিজেপির। কিন্তু , ২০১৯ সালের লোকসভায় সেই ঘটনা ঘটেনি। আসন সমঝোতা যখন যখন হল, অর্থাত, ২০১৯ সালের শেষে এসে উপনির্বাচনে, সাধারণ মানুষ বাম-কংগ্রেস বিকল্প পেয়ে গিয়েছে। ভোট ভাগাভাগি এবং এনআরসি ফ্যাক্টরে লাভ হয়েছে তৃণমূলের
লোকসভায়, সাধারণ মানুষকে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস বিকল্প রাস্তা পায়নি। উপরন্তু, ধর্মীয় মেরুকরণে ভোট ভাগাভাগি হয়ে যায় বিজেপি-তৃণমূলের দিকেই। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে লোকসভায়, বিজেপি-তৃণমূল শতাংশের হারে কাছাকাছি ভোট পেয়েছে। সেক্ষেত্রে আগামী দিনে এই রাজ্যে বিজেপির ভোট কাটাকাটিতে বড় ভূমিকা পালন করবে। অর্থাত, বাংলার গেরুয়া শিবিরকে আরও ভোগাবে বাম-কংগ্রেসই। কারণটা স্পষ্ট, লোকসভায় বিজেপির ভোট বেড়ে হয়েছিল ৪০.৩ শতাংশ। যার অধিকাংশই বাম-কংগ্রেস ভোট।
বিজেপির এই রাজ্যে নিজস্ব কোনও ভোটই ছিল না।
কিন্তু তৃণমূলের আসন কমলেও ভোট বেড়ে বেড়ে ৪৩ শতাংশে গিয়েছিল। বিশ্লেষমে পরিষ্কার, তৃণমূল ভোট ধরে রেখেছিল। পারেনি বাম বাম-কংগ্রেস। দিলীপ ঘোষেরা সেই ভোট পেয়েই উল্লসিত হয়েছিলেন। এবারে বাম-কংগ্রেসের ছিটকে যাওয়া ভোট আবার তাদের ঘরেই ফিরে এসেছে। বিপদ বেড়েছে দিলীপ ঘোষেদের। কারণ তাঁদের নিজেদের বলে কিছুই ছিল না।